কোনও দৈত্য যেন লন্ডভন্ড করে দিল শহরটাকে

মেট্রো স্টেশনেও তখন থিকথিকে ভিড়। তার মধ্যেই যাঁরা দমদমমুখী ট্রেনে উঠে পড়তে পেরেছিলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন, নিরাপদেই বাড়ি পৌঁছে যাবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪৪
Share:

ওয়েলিংটনে অটোর উপর ভেঙে পড়েছে গাছ। মৃত চালক ও এক যাত্রী

রাস্তায় তখন কাতারে কাতারে মানুষ! কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন, কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। বাস নেই। এক-একটি বাস দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছেন অনেকে মিলে। বাদুড়ঝোলা হয়ে যাঁদের বাসে জায়গা হল, তাঁদের ভাগ্যও অবশ্য বেশি ক্ষণ প্রসন্ন হল না। গাছ পড়ে বন্ধ রাস্তা। অফিস থেকে টালিগঞ্জের বাড়িতে ফিরেছেন এক ভদ্রলোক। তিনি বলেন, ‘‘প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের মোড় থেকে পুরো রাস্তাই প্রায় হেঁটে ফিরলাম। ফেরার সময়ে ঝড়ের যা দাপট দেখলাম, তাতে মনে হল, কোনও দৈত্য যেন শহরটাকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। শুনলাম, কলকাতা ও হাওড়া মিলিয়ে ১১ জন মারা গিয়েছেন।’’

Advertisement

মেট্রো স্টেশনেও তখন থিকথিকে ভিড়। তার মধ্যেই যাঁরা দমদমমুখী ট্রেনে উঠে পড়তে পেরেছিলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন, নিরাপদেই বাড়ি পৌঁছে যাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদেরও মেট্রোয় প্রায় দু’ঘণ্টা বন্দি হয়ে থাকতে হল। রেললাইনে গাছ পড়ে যাওয়ায় দমদম স্টেশনে ঢোকার আগে থমকে যায় মেট্রোর এসি রেক। মাঝেমধ্যেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল ভিতরের এসি। বন্ধ করা হচ্ছিল আলোও। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পরে যাত্রীদের তখন হাঁসফাঁস অবস্থা। অনেকে বাড়িতে ফোন করে দুরবস্থার কথা জানাচ্ছেন। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন

বেশ কয়েক জন বয়স্ক যাত্রী। শেষমেশ ওই ট্রেনটি অবশ্য দমদমে না গিয়ে চলে যায় বেলগাছিয়ায়। শুভাশিস দাশগুপ্ত নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘বেলগাছিয়ায় নেমে যেন ধড়ে প্রাণ ফিরে পেলাম। দু’ঘণ্টা কামরায় আটকে থেকে মনে হচ্ছিল, আদৌ বা়ড়ি ফিরতে পারব তো?’’

Advertisement

রবীন্দ্র সদনে বাসযাত্রীদের ভিড়।

কালবৈশাখীর দাপটে হ্যাঙ্গারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আস্ত একটি বিমান যে হঠাৎ গড়াতে শুরু করবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি কলকাতা বিমানবন্দরে এয়ার ইন্ডিয়া-র হ্যাঙ্গারে কর্মরত আধিকারিকেরা। তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘প্রবল ঝড় চলছে, সঙ্গে বৃষ্টি। তার মধ্যেই দেখলাম, অনেক দিন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ফাঁকা বিমান চলতে শুরু করল। কিছু বোঝার আগেই ধাক্কা মারল হ্যাঙ্গারের একটি বাতিস্তম্ভে। জীবনে অনেক ঝ়়ড় দেখেছি। কিন্তু ঝড়ের দাপটে বিমান গড়িয়ে যেতে দেখিনি।’’

হাওড়া স্টেশনের ১৯ নম্বর প্ল্যাটফর্মে় ভেঙে পড়েছে বঙ্কিম সেতুর রেলিং।

মাথায় গাছ পড়ে শহর ও শহরতলি জুড়ে ১১ জনের মৃত্যু হলেও অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন সল্টলেকের দুই মহিলা। তাঁরা একটি রিকশা করে সল্টলেকের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময়ে পুরনো একটি কৃষ্ণচূড়া, যারগোড়া বেদিতে বাঁধানো ছিল, সেটি উপড়ে পড়ে রাস্তায়। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে রিকশাযাত্রী দুই মহিলা গাছে চাপা পড়ার হাত থেকে বেঁচে যান। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘আমরা তো ভেবেছিলাম, গাছটা রিকশার উপরেই পড়ছে। কিন্তু রাখে হরি, মারে কে?’’

ছবি: সুমন বল্লভ, দীপঙ্কর মজুমদার, দেশকল্যাণ চৌধুরী, নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন