ঝঞ্ঝায় তছনছ পাখিদের সংসার

পরিবেশকর্মীদের অনেকেই এর পিছনে দায়ী করছেন গাছের দুর্বল গোড়াকে। তাঁরা বলছেন, যে ভাবে শহরের বড় বড় গাছের গোড়ার মাটি আলগা হয়েছে এবং কোনওমতে কংক্রিটের ঠেকা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে, তাতেই ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়েছে।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:০৫
Share:

ঘরছাড়া: গাছে বসে নিরাশ্রয় পাখি। শহর জুড়ে গাছ ভেঙে পড়ায় এ ভাবেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে বহু পাখির বাসা। ধর্মতলায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

কেলেও ঠোঁটে করে মুখে খাবার তুলে দিয়েছিল ছানাদের। তার পরেই কী যে হল! চারদিক লন্ডভন্ড করে দৈত্যের মতো হাওয়া তেড়ে এল। বাসা তো ভেঙে চুরমার হলই, ছানাদের আর খোঁজই মিলছে না।

Advertisement

মঙ্গলবারের বৈশাখী ঝড়ে এ ভাবেই উজা়ড় হয়ে গিয়েছে শহরের বহু পাখির সংসার। ডাল ভেঙে, গাছ উপ়়ড়ে প়়ড়ে মানুষের মৃত্যু তো হয়েইছে, প্রাণ হারিয়েছে বহু পাখিও। এমনিতেই শহুরে পাখিদের সংখ্যা কমছে। তার উপরে যদি এ ভাবে গাছ ভেঙে পাখির বাসা নষ্ট হতে থাকে এবং ছানাদের মৃত্যু হতে থাকে, তা হলে পরিবেশের ক্ষেত্রেও বড় ক্ষতি হবে।

পরিবেশকর্মীদের অনেকেই এর পিছনে দায়ী করছেন গাছের দুর্বল গোড়াকে। তাঁরা বলছেন, যে ভাবে শহরের বড় বড় গাছের গোড়ার মাটি আলগা হয়েছে এবং কোনওমতে কংক্রিটের ঠেকা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে, তাতেই ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়েছে। তার জেরেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাখিদের বসতি।

Advertisement

বন দফতরের একাংশ বলছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে কী ধরনের গাছ লাগানো হবে, তার যথাযথ পরিকল্পনা বা বড় মাপের গাছগুলিকে নিয়মিত ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা করা হয় না। তার ফলেই আরও বেশি করে গাছের ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতির সঙ্গে জুড়ে থাকে পাখিরাও। ভারতীয় প্রাণী সর্বেক্ষণের প্রাক্তন যুগ্ম অধিকর্তা সুজিত চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শহরে কৃষ্ণচূড়ার মতো গাছ লাগানো হয়। কিন্তু সামান্য ঝড়বৃষ্টিতে তা ভেঙে পড়ে। এর ফলে পাখিদের ক্ষতি হয়।’’ পরিবেশবিদদের অনেকেই বলছেন, মঙ্গলবার রাতে বহু গাছের ডালপালা ভেঙে পড়েছে। সেই ডালে থাকা পাখিদের বাসাও ভেঙে প়ড়েছে। আগে থেকে গাছ ছাঁটাই করলে সেগুলি ভাঙত না। সল্টলেকনিবাসী এই পক্ষীবিশারদও এ দিন সকালে বেরিয়ে দেখেছেন, বহু পাখির বাসা ঝড়ে ভেঙে রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে।

প্রবীণ বিজ্ঞানী এবং পক্ষীবিশারদ সুজিতবাবু মনে করেন, মঙ্গলবার রাতের ঝ়ড়ে পাখিদের বেশ ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই ক্ষতি পাখিরা নিজেদের মতো করেই সারিয়ে তুলতে পারবে বলেও জানাচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যেক প্রাণীই নিজের মতো করে প্রকৃতির সঙ্গে যুঝতে পারে। সেই মতোই ওরা নিজেদের জীবনচক্র তৈরি করে। এ সময়ে বহু পাখিই প্রজনন বন্ধ রাখে।’’ পক্ষীবিশারদেরা বলছেন, মঙ্গলবার রাতে বহু পাখির বাসা এবং ডিম নষ্ট হয়েছে। ‘‘কিন্তু ফের পাখিরা প্রজনন ঘটিয়ে ডিম পাড়তে পারবে। অনেকে ফের কাঠকুটো কু়ড়িয়ে বাসা বাধার তোড়জো়ড়ও শুরু করেছে,’’ বলছেন এক পক্ষীবিজ্ঞানী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন