কাউন্সিলর মনীশ মুখোপাধ্যায়।
মন ‘সতর্কবার্তা’ আগে বড় একটা দেখেনি বাংলা!
তিনি যে তোলাবাজিতে নেই, ফেসবুকে এ কথা ঘোষণা করলেন বিধাননগর পুরনিগমের দু’নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তথা ন’নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মনীশ মুখোপাধ্যায়। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, তাঁর নাম ব্যবহার করে যদি কেউ টাকা তোলে, তা হলে তা অনৈতিক। এ ধরনের কাজ তিনি সমর্থন করেন না।
সম্প্রতি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অন্যতম অস্ত্র তোলাবাজি। বিরোধীদের অভিযোগ, পাড়ায়-পাড়ায় তৃণমূলের ছোট-মেজো-বড় নেতাদের ‘আবদার’ মেটাতে নাভিশ্বাস উঠছে প্রোমোটার, ব্যবসায়ীদের। বিরোধীদের দাবি, আমন্ত্রণপত্রে শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের নাম থাকায় টাকা আদায়েও সুবিধা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তোলাবাজি বন্ধে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরকে বার্তা দিতে হয়েছে। কিন্তু তাতে কাজ কতখানি হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
এই বিবৃতিটিই ফেসবুকে পোস্ট করেছেন কাউন্সিলর মনীশ মুখোপাধ্যায়।
অনেকেই বলছেন, পালা বদলের পরে রাজ্যের বিভিন্ন ওয়ার্ডে খেলা, মেলা-সহ প্রতি মাসে প্রায় কোনও না কোনও অনুষ্ঠান লেগেই রয়েছে। সে সব অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র, ফ্লেক্স, ব্যানার, হোর্ডিংয়ে এলাকার কাউন্সিলর কোথাও প্রধান উপদেষ্টা তো কোথাও সভাপতি। অভিযোগ সত্যি-মিথ্যা যাই হোক, নামমাহাত্ম্যে রাস্তাঘাটে এমন প্রচার খুঁজে পেতে আমজনতার অসুবিধা হয় না। ঘটনাচক্রে, দক্ষিণ দমদমে এক প্রভাবশালী কাউন্সিলর প্রায় ৭০টি ক্লাবের হয় সভাপতি, নয় প্রধান উপদেষ্টা। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘এখন তো শীতলা পুজোর ফ্লেক্সেও নাম থাকে।’’
এই প্রেক্ষিতেই বিধাননগর পুরনিগমের সিলমোহর থাকা কাগজে বরো চেয়ারম্যানের বিবৃতি ঘিরে জল্পনা তৈরি হয়েছে। মনীশবাবু লিখেছেন, ‘আপনাদের অবগত করছি, ন’নম্বর ওয়ার্ডের কোনও ক্লাব বা সংগঠনের পদে আমি নেই। কিছু জায়গায় অতিথি হিসেবে আমার নাম থাকতে পারে। যদি কেউ বা কারা (রাজনৈতিক পার্টি বা ক্লাব, অথবা কোনও সমাজসেবক বা কোনও সংস্থা/পূজা কমিটি) আমার নাম ব্যবহার করে টাকা আদায় করেন, তা অনৈতিক কর্মকাণ্ড। আমি কোনও ভাবেই সমর্থন করি না’। টাকা দেওয়ার জন্য কেউ চাপ দিলে তাঁকে তৎক্ষণাৎ জানানোর কথা বলেছেন মনীশবাবু। প্রয়োজনে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও পরামর্শ দিয়েছেন।
এই সেই ফেসবুক পোস্ট।
দীর্ঘ এই ফেসবুক বিবৃতির প্রেক্ষিতে বিরোধীদের বক্তব্য, কী এমন ঘটল যে বরো চেয়ারম্যানকে এ ধরনের বিবৃতি দিতে হল! তোলাবাজি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখেই কি এই পোস্ট তৃণমূল কাউন্সিলরের? মনীশের দাবি, এখনও ঘটেনি। তবে ঘটতে পারে সেই আশঙ্কা তিনি করছেন! মনীশবাবুর কথায়, ‘‘এখনও শুনিনি কোথাও আমার নামে টাকা তোলা হচ্ছে। কেউ তো সরাসরি কিঝছু বলছেন না। তবে আশঙ্কা, এমন হতে পারে! আমি জানি না। অথচ কোথাও আমাকে প্রধান উপদেষ্টা, সভাপতি করে দেওয়া হচ্ছে। আমি তো কাউকে নাম দিতে বলিনি!’’ আশঙ্কা থেকে এলাকার সকল ব্যবসায়ী, দোকানদার, প্রোমোটার এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ফেসবুকের বিবৃতি হাতে হাতে বিলি করবেন বলে জানিয়েছেন মনীশবাবু।
তবে বিরোধীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে মনীশবাবু বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক দলের নাম তো করিনি। রাজনৈতিক দল, ক্লাব, পুজো কমিটি— সকলের কথা বলেছি।’’