নীলরতনে ‘ঘাড়ধাক্কা’ মুমূর্ষু রোগীকে

বছর চল্লিশের বিপ্লব বিশ্বাস শুক্রবার বিকেলে শিয়ালদহ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ওঠার সিঁড়িতে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিলেন। পাশে ছিল কয়েক দিস্তা কাগজ আর খুচরো পয়সা।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫৮
Share:

অসহায়: হাসপাতালের শয্যায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত বিপ্লব বিশ্বাস। শনিবার, এনআরএস-এ। —নিজস্ব চিত্র

সংজ্ঞাহীন যে রোগীকে শুক্রবার সন্ধ্যায় জরুরি বিভাগের শয্যায় ভর্তি করানো হয়েছিল, শনিবার সকালে তাঁরই দেখা মিলল ওয়ার্ডের বাইরে। ভিজে কাপড় জড়িয়ে এক কোণে পড়ে কাতরাচ্ছেন তিনি। অভিযোগ, যক্ষ্মা আক্রান্ত ওই ব্যক্তি রাতে শয্যাতেই মলমূত্র ত্যাগ করে ফেলায় হাসপাতালের কর্মীরা তাঁকে বিভাগের বাইরে ফেলে দিয়ে গিয়েছেন।

Advertisement

এই অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শহরের অন্যতম প্রধান একটি সরকারি হাসপাতালে এক জন মুমূর্ষু রোগীর সঙ্গে এই আচরণ কী ভাবে হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ।

বছর চল্লিশের বিপ্লব বিশ্বাস শুক্রবার বিকেলে শিয়ালদহ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ওঠার সিঁড়িতে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিলেন। পাশে ছিল কয়েক দিস্তা কাগজ আর খুচরো পয়সা। পথচারীরা দেখে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ রেলকর্মীদের সাহায্যে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এনআরএস-এ। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, রোগী যক্ষ্মায় আক্রান্ত। পাশে পড়ে থাকা কাগজ থেকে বেরোয় তাঁর যক্ষ্মার রিপোর্ট। জানা যায়, নিমতার ওই বাসিন্দা দীর্ঘ দিন যক্ষ্মায় আক্রান্ত। অবস্থা সঙ্কটজনক। তাই অক্সিজেন এবং স্যালাইন দেওয়া শুরু হয়। কিছু পরে তাঁর জ্ঞান ফেরে। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন, রাতে জরুরি বিভাগে থাকলেও পরের দিন বক্ষ বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

Advertisement

বিপ্লববাবুকে যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন, তাদের তরফে মুকুলিকা চট্টোপাধ্যায় এ দিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, বিপ্লববাবু শয্যায় নেই। অভিযোগ, কর্তব্যরত নার্স এবং কর্মীরা জানান, রোগী কোথায়, তাঁরা জানেন না। জরুরি বিভাগের রক্ষীরা জানান, রোগী পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মুমূর্ষু রোগী কী ভাবে সবার অজান্তে চলে গেলেন, সে প্রশ্ন তোলেন ওই সংস্থার সদস্যেরা। এর পরে তাঁরা নিজেরাই বিপ্লববাবুকে খুঁজতে শুরু করেন। দেখা যায়, জরুরি বিভাগের প্রধান ফটকের পাশে শুয়ে ধুঁকছেন তিনি। মল-মূত্র লেগে থাকা ভিজে কাপড়েই পড়ে রয়েছেন তিনি। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের তিনি জানান, রাতে একা শৌচাগারে যেতে পারেননি। তাই শয্যাতেই মল-মূত্র ত্যাগ করে ফেলেন। এর পরেই রক্ষীরা তাঁকে ওয়ার্ডের বাইরে বার করে দেন।

ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের অভিযোগ, এ দিন বিপ্লববাবুকে বক্ষ বিভাগের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া নিয়েও হাসপাতালের কর্মীরা অসহযোগিতা করেন। কখনও বহির্বিভাগ, কখনও জরুরি বিভাগ, কখনও আবার বক্ষ বিভাগে ট্রলির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় তাঁদের। হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরে বিপ্লববাবুকে বক্ষ বিভাগে ভর্তি করা হয়। আপাতত চিকিৎসক সুমন্ত ঝা-র তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিমতায় তাঁর বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে।

দুপুরেই ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে হাসপাতালে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। যদিও হাসপাতালের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বিকেলে বলেন, ‘‘আমার হাতে অভিযোগের চিঠি পৌঁছয়নি। এলে পদক্ষেপ করব।’’

যেখানে বারবার স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ‘মানবিক’ করায় জোর দিচ্ছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানে এ দিন এই ঘটনা কি গোটা বিষয়টিকে এক ধাক্কায় অনেকটাই পিছিয়ে দিল না? স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের আশ্বাস, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই সব দিক খতিয়ে দেখবেন। যদি কেউ এমন আচরণ করেন, তা হলে কঠোর শাস্তি হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন