(বাঁ দিকে) কলকাতার বিভিন্ন পুজো কমিটির প্রতিনিধি। শহরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা (ডান দিকে)। ছবি: ফেসবুক।
দুর্গোৎসব নিয়ে কলকাতার পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক করল পুলিশ। সূত্রের খবর, সাইবার প্রতারণা থেকে শুরু করে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য, একাধিক বিষয় নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ‘চেনা’ দুষ্কৃতীদের আগে থেকে চিহ্নিত করে পদক্ষেপ করা হবে। সে ক্ষেত্রে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যাবে। কমিটির স্বেচ্ছাসেবক এবং সদস্যদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বুধবার কলকাতার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে বৈঠকের আয়োজন করেছিল কলকাতা পুলিশ। পুজো কমিটির সদস্যেরা ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন দমকল, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি, কলকাতা পুরসভা এবং পূর্ত দফতরের প্রতিনিধি। কলকাতা পুলিশ সমাজমাধ্যমে বৈঠকের কিছু ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে, ‘‘এ বছরের দুর্গাপুজোকে আরও মসৃণ, নিরাপদ এবং প্রাণবন্ত করে তোলার উদ্দেশ্যে এই বৈঠকে সূক্ষ্ম ভাবে পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে।’’
গত বছর মোট ২,৯৩৬টি পুজোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সূত্রের খবর, এ বছর এখনও পর্যন্ত ২,৬৫২টি পুজো কমিটি তাদের নাম নথিভুক্ত করেছে। তার মধ্যে ১,৪২৮টি কমিটিকে পুজোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শহরের পুলিশ কমিশনার (সিপি) মনোজ বর্মা বৈঠকে জানান, পুজো নিয়ে বিশেষ একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। আর কিছু দিনের মধ্যেই যা প্রকাশ্যে আসবে। জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সবরকম চেষ্টা চালাবে পুলিশ।
পুজোর ছুটিতে অনেকেই কলকাতায় থাকেন না। বাইরে ঘুরতে যান। এই সময় অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের ফাঁকা বাড়ির সুযোগ নেয় দুষ্কৃতীরা। তা নিয়ে পুলিশ বিশেষ ভাবে সতর্ক। সূত্রের খবর, এলাকাভিত্তিক নজরদারি চালানোর কথা বলেছেন সিপি। যে সমস্ত দুষ্কৃতীরা পুলিশের খাতায় ‘দাগি’, যাঁদের অপরাধের ইতিহাস রয়েছে, তাদের উপর বিশেষ ভাবে নজর রাখা হবে। আগে থেকে তাদের চিহ্নিত করে পদক্ষেপ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে থানায় থানায়।
সাইবার অপরাধ নিয়ে পুজোয় আলাদা করে প্রচার চালানোর ভাবনা রয়েছে কলকাতা পুলিশের। পুজোর সময় এবং তার আগে-পরে অনেকে অনলাইনে কেনাকাটা করেন। সেখানে ফাঁদ পেতে রাখে সাইবার অপরাধীরা। এ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। তার জন্য আলাদা কিয়স্ক খোলা হবে। এ ছাড়া, আগুন থেকে বা বিদ্যুতের তার থেকে যাতে কোনও দুর্ঘটনা না-ঘটে, সে দিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে পুজো কমিটির সদস্যদের।
বুধবারের বৈঠকে সিপি বলেছেন, ‘‘এত বড় পুজো এই প্রথম পুলিশ সামলাচ্ছে, তেমনটা নয়। সকলে মিলে কাজ করব। সাফল্য আসবে। প্রতি বছরই পুজোর নিরাপত্তায় সকলের অবদান থাকে।’’ সমাজমাধ্যমে প্রচারিত ভুয়ো খবরে কান না-দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পুলিশের গাই়ডলাইন সর্বত্র মেনে চলতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, দশমীর বিসর্জন যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা যায়, তা নিয়েও পুজো কমিটিগুলিকে কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সহ-সভাপতি তথা হাতিবাগান সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির কর্তা শাশ্বত বসু বলেন, ‘‘পুলিশ স্থানীয় ভাবে এবং ডিভিশন গত ভাবে আগেই আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল। তার পরেও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু নির্দেশ দিতে চেয়েছিল পুলিশের শীর্ষ মহল। বুধবার তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পুজো কমিটিগুলিও নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়েছে। সবমিলিয়ে এই বৈঠকে আমরা খুশি। আশা করি, প্রশাসনের সঙ্গে মিলে আমরা ভাল ভাবে শারদোৎসবের আয়োজন করতে পারব।’’