গণপিটুনির খবর কেন সময়ে পায়নি থানা, ক্ষুব্ধ কর্তারা

কেন পুলিশ তড়িঘড়ি এই গণপিটুনির কথা জানতে পারল না, তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পদস্থ কর্তারা। মঙ্গলবার মুরারিপুকুরের হরিশ নিয়োগী রোডের ওই ঘটনায় এক অভিযুক্ত এখনও ফেরার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০৩:৫২
Share:

রতন কর্মকার

দিনের আলোয় এক জনকে পিটিয়ে খুন করা হল। অথচ, ঘটনার কথা জানতেই পারল না স্থানীয় থানা! পুলিশ সূত্রের খবর, মুরারিপুকুরে রতন কর্মকার নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারার খবর ঠিক সময়ে জানতে পারেনি মানিকতলা থানা। ওই ব্যক্তিকে স্থানীয় এক চিকিৎসক ডেথ সার্টিফিকেট দিতে অস্বীকার করার পরে বিষয়টি পুলিশের কানে পৌঁছয়। লালবাজারের খবর, মানিকতলা থানার এই ‘গাফিলতি’তে ক্ষুব্ধ কলকাতা পুলিশের শীর্ষ মহল। কলকাতা পুলিশ এলাকায় ওসি বা অন্য আধিকারিকদের মধ্যে এর

Advertisement

পরেও এমন ‘দায়সারা’ মনোভাব দেখা গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের তরফে। একই সঙ্গে লালবাজার থেকে বলা হয়েছে, এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এবং ডেপুটি কমিশনারদের প্রতিটি ঘটনা নজরে রাখতে হবে।

লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের মতে, পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা সব থানাকে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে বলেছিলেন। কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছিলেন, যোগাযোগ বাড়লে এলাকার ছোটখাটো খবরও পুলিশের কানে পৌঁছবে। স্বভাবতই মুরারিপুকুরের ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে, কমিশনারের সেই নির্দেশ কি থানা পালন করেনি? লালবাজারের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, ‘‘মানিকতলা থানার সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের যে নিবিড় যোগাযোগ নেই, এই ঘটনায় সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে বলে আমরা মনে করছি।’’

Advertisement

কেন পুলিশ তড়িঘড়ি এই গণপিটুনির কথা জানতে পারল না, তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পদস্থ কর্তারা। মঙ্গলবার মুরারিপুকুরের হরিশ নিয়োগী রোডের ওই ঘটনায় এক অভিযুক্ত এখনও ফেরার।

প্রসঙ্গত, মাস দু’য়েক আগে শিশুচোর সন্দেহে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছিল। সে সময়ে ফুলবাগানের একটি ঘটনায় পুলিশকেও পিটিয়েছিল অভিযুক্তেরা। লালবাজারের খবর, সেই ঘটনা চাউর হতেই ফুলবাগান থানার ওসি-কে জবাবদিহি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পরেও একদফা সতর্ক করা হয়েছিল বিভিন্ন থানার ওসিদের। কিন্তু সেই নির্দেশ কতটা পালন করা হচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পুলিশবাহিনীর অন্দরেই। যদিও লালবাজারের কর্তাদের দাবি, একটি থানার

উদাহরণ দেখিয়ে সকলকে বিচার করা উচিত নয়।

তবে পুলিশের অন্য একটি সূত্রের পাল্টা দাবি, এ ক্ষেত্রে মানিকতলা থানাকে পুরোপুরি কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত হবে না। ইদের দিন বিভিন্ন এলাকায় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। মুরারিপুকুরের যে পাড়ায় গণপিটুনির ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি উৎসবের নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। উৎসবের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে অন্য এলাকায় বেশি নজর দিতে হয়েছিল। তার ফাঁকেই এই ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তবে এই ঘটনা সম্পর্কে মানিকতলা থানার কোনও কর্তা মন্তব্য করতে চাননি।

যদিও লালবাজারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই ঘটনাকে ‘শিক্ষা’ হিসেবেই ধরছেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। তাই এলাকায় নিবিড় জনসংযোগ তৈরি করতে ওসিদের ফের সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। পুলিশ কমিশনারের পরবর্তী মাসিক অপরাধ দমন বৈঠকেও এ নিয়ে কথা হতে পারে বলে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন