বিদ্যাসাগর সেতুর নীচে ড্রামের মধ্যে মিলল এক যুবকের গলা কাটা দেহ। ঘটনাস্থলের প্রাথমিক তদন্তের শেষে পুলিশ কাঠের তক্তা করে ওই খোলা আকাশের নীচ দিয়েই দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে যায়।
তিলজলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছিলেন আর এক যুবক। প্লাস্টিকে মুড়ে ওই দেহটি নিয়ে যাওয়া হয় অনেকটা দূরে থাকা মৃতদেহ বহনকারী গাড়িতে।
পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতায় কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে দেহ তোলার জন্য এখনও চিরাচরিত চাদর ব্যবহার করে পুলিশ। চাদর দিয়ে মুড়ে দেহটি নিয়ে যাওয়া হয় মৃতদেহ বহনকারী গাড়িতে। সেখানে একটি লোহার ট্রের উপরে রাখা হয় উদ্ধার হওয়া দেহ। মর্গে পৌঁছনোর পরে দেহটি ট্রে থেকে নামিয়ে মেঝেতে রাখা হয়।
লালবাজার জানিয়েছে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় দেহ উদ্ধারের পরে এ বার ওই পদ্ধতিতে বদল আনতে চলেছে কলকাতা পুলিশ। এখন থেকে কোনও দেহ উদ্ধারের পরে সম্ভব হলে সেটি প্লাস্টিকে মুড়ে, কাঠের বাক্সে ভরে তা বহন করা হবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন থানায় ওই কাঠের বাক্স দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলে লালবাজের খবর। এতে যেমন দৃশ্য দুষণ কমবে, তেমনই মৃত্যুর পরে গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে দেহে কোন ধরনের আঘাত লাগার আশঙ্কাও কম থামবে বলে পুলিশের কর্তাদের দাবি।
দিল্লি, মুম্বই থেকে শুরু করে দেশের সব বড়বড় শহরে মৃতদেহ উদ্ধারের পর কাঠের বাক্স বা বিশেষ ব্যাগে করে দেহ সরানো হয়। কিন্তু কলকাতায় এত দিন প্রাচীন পদ্ধতিতেই কাজ চলছিল। ফলে প্রমাণ নষ্টের আশঙ্কার পাশাপাশি দৃশ্য দূষণেরও অভিযোগ উঠছিল বারবার। লালবাজারের একাংশের দাবি, দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নিয়ে কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার নির্দেশ দেন কোনও কোনও ঘটনার তদন্তে যেন তথ্য প্রমাণ নষ্ট না হয়। সেই কথার প্রেক্ষিতেই ওই কাঠের বাক্স-সহ বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
তদন্তকারীরা জানান, মৃত্যুর ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ অত্যন্ত জরুরি। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, কাঠের বাক্সে দেহটি থাকলে ঘটনাস্থল থেকে মর্গের যাওয়ার পথে তাতে কোনও রকম আঘাত লাগার আশঙ্কা কমবে। দেহে যে আঘাতের চিহ্ন আগে থেকে রয়েছে, তাতেও আর নতুন করে ধাক্কাধাক্কি লাগার আশঙ্কা কমবে। যার ফলে ময়না-তদন্তে মৃত্যুর কারণ জানতে বা দেহে আঘাতের চিহ্ন শনাক্ত করতে চিকিৎসকদের সুবিধে হবে। অজ্ঞাতপরিচয় কারও দেহ উদ্ধারের পরে তা বাক্সে রাখার ফলে
সংরক্ষণ করতে সুবিধে হবে বলেও অনুমান পুলিশের।
পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের জন্য প্রতিটি থানায় একটি করে ‘কিট বক্স’ রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাতে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য সার্জিক্যাল গ্লাভস, গজ, ব্লটিং পেপার, আতস কাচ-সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস ওই বাক্সে থাকে। এ ছাড়াও প্রতিটি থানার ওসি এবং অতিরিক্ত ওসি-দের নিজেদের গাড়িতে ‘কর্ডনিং টেপ’ রাখতে বলেছেন তিনি। যাতে ঘটনাস্থলের পৌঁছনোর পরেই পুলিশকর্মীরা তথ্য প্রমাণ ঠিক রাখতে এলাকাটি ঘিরে দিতে পারে।