Kolkata Traffic Police

বেশি গতিতে গাড়ি? নিয়ম ভাঙলে এ বার ছ’মাসের জেল

ছুটির দিনে বা ফাঁকা রাস্তায় অতিরিক্ত গতি এবং বেপরোয়া চালকরাই এখন মাথাব্যাথার কারণ কলকাতা পুলিশের। সেই বেপরোয়া চালকদের বাগে আনতে এবার গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ১৭:৩৫
Share:

মেয়ো রোড ও ডাফরিন রোডের সংযোগস্থলে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র

বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় মারুতি ভ্যান এবং বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারালেন একজন। জখম হলেন চার ছাত্রী। রবিবার দুপুরে মেয়ো রোড-ডাফরিন রোড সংযোগস্থলে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

Advertisement

প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্রী ছিলেন দক্ষিণমুখী ওই মারুতি ভ্যানে। উল্টোদিক থেকে আসছিল ১২ বি রুটের ধর্মতলামুখী একটি বেসরকারি বাস।

প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বাস এবং ভ্যান দুটি গাড়িই যথেষ্ট গতিতে ছিল। মুখোমুখি দুটি গাড়ি চলে আসার পর কোনও চালকই নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করতে পারেননি। মুখোমুখি সংঘর্ষে ভ্যানের চালক ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। ওই গাড়ির ছাত্রীদের এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের আঘাত গুরুতর নয় বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

বেপরোয়া গতির জেরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাস। —নিজস্ব চিত্র

ছুটির দিনে বা ফাঁকা রাস্তায় অতিরিক্ত গতি এবং বেপরোয়া চালকরাই এখন মাথাব্যাথার কারণ কলকাতা পুলিশের। সেই বেপরোয়া চালকদের বাগে আনতে এবার গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুলিশ।

আরও পড়ুন: সাইকেলে চেপে টহলও দেবে সিভিক পুলিশ

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেভ লাইফ সেফ ড্রাইভ’ ক্যাম্পেনের অংশ হিসেবে শহরে বেপরোয়া গাড়ি রুখতে একাধিক ব্যাবস্থা নিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

তারই অঙ্গ হিসাবে, মা ফ্লাইওভার, রেড রোড থেকে শুরু করে কলকাতার একাধিক রাস্তায় ৪০ টির বেশি স্বয়ংক্রিয় গতি মাপার যন্ত্র লাগানো হয়েছে। এই সব রাস্তায় চালকদের বেপরোয়া গাড়ি বা মোটর বাইক চালানোর প্রবণতা দেখা যায়।

শহর কলকাতায় বেপরোয়া গতির বলি। মেয়ো রোডে দুর্ঘটনার পরে পড়ে রয়েছে রক্ত। —নিজস্ব চিত্র

কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “কিন্তু তার পরও গত এক বছরে সেই প্রবণতায় রাশ টানা সম্ভব হয়নি। উল্টে অনেক রাস্তায় সেই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা বেড়েছে।

এক পুলিশ কর্তা বলেন, “সাধারণ ভাবে নির্দিষ্ট গতির বেশি গতিতে যান চালানোর সময় স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরায় ধরা পড়লে মোটর ভেহিকল আইনের ১৮৪ ধারায় মামলা করা হয়।”

আরও পড়ুন: দগ্ধ শিশুর মৃত্যু, দেহ নিয়ে বিক্ষোভ

বর্তমান আইন অনুযায়ী, প্রথমবার এই আইন ভাঙলে ১ হাজার টাকা জরিমানা। দ্বিতীয়বার বা তার বেশিবার সেই একই চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে ধরা পড়লে জরিমানার পরিমান দ্বিগুণ অর্থাৎ ২০০০ হাজার টাকা।

কিন্তু তাতেও রাশ টানা যায়নি এই বেপরোয়া চালকদের। ২০১২ সালে বেপরোয়া ভাবে যান চালানোর জন্য ৬৭৭৪১ জনকে জরিমানা করা হয়েছিল। সেই সংখ্যা ২০১৬ সালে প্রায় দ্বিগুণ—১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৮। পরের দু’বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ সালেও সেই প্রবণতার গ্রাফ রয়েছে ওপরের দিকেই।

কলকাতা পুলিশের এক সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বেপরোয়া চালকদের তালিকায় শীর্ষে মোটর সাইকেল চালকরা। ২০১৬ সালে তাঁদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন ভাঙার ৩১ হাজার ৪০০ টি মামলা হয়েছিল। এঁদের পরেই রয়েছে ব্যক্তিগত মালিকানার চার চাকার গাড়ি। আইন ভাঙায় এর পরেই ট্যাক্সি এবং বেসরকারি বাস চালকরা।

কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, এবার থেকে পুলিশ যাঁদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর মামলা হচ্ছে তাঁদের তালিকা বানাচ্ছে।

সেই তালিকা অনুসারে যদি কোনও চালকের বিরুদ্ধে ছ’মাসের মধ্যে পাঁচটি বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে মোটর ভেহিকলস আইনের ১৮৪ ধারায় সেই ব্যাক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হবে। সেই সঙ্গে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭৯ ধারায় এফআইআর করা হবে। তার পর তাঁদের সংশ্লিষ্ট থানায় ডেকে পাঠিয়ে গ্রেফতার করা হবে। এখন পর্যন্ত ৪৬ জন এরকম চালককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এঁরা প্রত্যেকেই পাঁচ বারেরও বেশি বার বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে ধরা পড়েছেন। এঁদের কেউ কেউ এই অপরাধ ১২ বার বা তারও বেশি করেছেন।

এক পুলিশ কর্তা বলেন, এই আইন জামিনযোগ্য, কিন্তু দোষী স্যবস্ত হলে ছ’মাস পর্যন্ত জেল এবং জরিমানা হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন