‘স্বপ্নটা যেন মাটির কাছাকাছি থাকে’

ধরাবাঁধা ছকে পড়াশোনা পছন্দ নয় মাধ্যমিকে দশম হওয়া কলকাতার টাকি হাউজ গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজের পড়ুয়া পবিত্র সেনাপতিরও।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ ও নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০২:৩১
Share:

সাফল্য: মাধ্যমিকের ফল জানার পরে মায়ের সঙ্গে সার্থক ও পবিত্র। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

ছোট থেকেই সিকিমের পাহাড় তাকে হাতছানি দেয়। ভাল লাগে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা পড়তে। তাই একটি অন্তত গল্পের বই থাকেই দৈনন্দিন রুটিনে। মাধ্যমিকের প্রস্তুতির জন্য ধরাবাঁধা কোনও সময়ও ছিল না সার্থক তালুকদারের। এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় সপ্তম হয়েছে বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই পড়ুয়াই।

Advertisement

ধরাবাঁধা ছকে পড়াশোনা পছন্দ নয় মাধ্যমিকে দশম হওয়া কলকাতার টাকি হাউজ গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজের পড়ুয়া পবিত্র সেনাপতিরও। সকালের বদলে রাতে পড়াশোনা করতেই বেশি ভাল লাগে তার। আর অবসর কাটাতে ভরসা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এ দিন রেজাল্ট শুনে ছলছল চোখে তার মা রমলাদেবী বলেন, ‘‘ছেলে ভাল করবে জানতাম। তবে এতটা ভাবিনি।’’ ছেলে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘‘ব্যাট কিনে দেবে বলেছিলে, মনে আছে তো!’’

এক দিকে বরাহনগর অন্য দিকে বাগমারি, শহরের এই দুই কিশোরের সাফল্যেই এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে মুখ রক্ষা হয়েছে কলকাতার। যদিও সার্থক ও পবিত্র দু’জনেরই বক্তব্য, খুব ভাল হবে জানলেও, এতটা ভাল আশা করেনি।

Advertisement

ডানলপ নর্দার্ন পার্কের বাসিন্দা পেশায় হোমিওপ্যাথি ওষুধের ব্যবসায়ী সুব্রত তালুকদার ও ডালিয়াদেবীর একমাত্র ছেলে সার্থক। এ দিন সকালে টিভিতে ছেলের সপ্তম হওয়ার খবর শুনে প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না ডালিয়াদেবীর। পরে বলেন, ‘‘প্রথম শ্রেণি থেকেই বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়ছে। প্রতি শ্রেণিতেই প্রথম বা দ্বিতীয় হত। কিন্তু রাজ্য স্তরে স্থান পাবে, ভাবিনি।’’ শুধু পড়াশোনা নয়, ছবি আঁকাতেও পারদর্শী বরাহনগরের এই কিশোর।

বেসরকারি সংস্থার কর্মী দুলাল সেনাপতি ও রমলাদেবীর ছেলে পবিত্র ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে দিঘা স্কুলে। বাবার কাজের সূত্রেই পূর্ব মেদিনীপুর ছেড়ে বাগমারিতে এসে সে ভর্তি হয়েছিল টাকি বয়েজে। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক থাকলেও আর্থিক কারণে প্রথাগত প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়ে ওঠেনি পবিত্রের। তবে সময় পেলেই সে পাড়ার মাঠে ছক্কা হাঁকাতে হাজির হয়। পরীক্ষার শেষে তাই বিরাট কোহালির ভক্ত ওই কিশোর চুটিয়ে দেখেছে কেকেআর এবং আরসিবি-র খেলা। ছোট থেকে ক্রিকেট খেলত সার্থকও। কিন্তু দশ বছর বয়সে পায়ের পাতায় সমস্যা হওয়ায় এখন সে মজেছে ফুটবলে।

ভবিষ্যৎ নিয়েও ওদের পছন্দ আলাদা। পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করে কিছু আবিষ্কারের স্বপ্ন দেখে বরাহনগরের সার্থক। আর ৬৮০ নম্বর পাওয়া বাগমারির পবিত্র চায় সফটওয়্যার ই়ঞ্জিনিয়ার হতে। মাধ্যমিকের প্রস্তুতির জন্য দু’জনেরই সব বিষয়ের গৃহশিক্ষক ছিলেন। তবে সাফল্যের পিছনে স্কুলের শিক্ষকদের অবদানের কথাও দুই ছাত্রের মুখে। বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বামী ধর্মপ্রিয়ানন্দ ও সহপ্রধান শিক্ষক স্বামী শশীশেখরানন্দ দু’জনেই জানান, স্কুলের ভাল রেজাল্ট হবে এটা আশা ছিল। বাড়তি পাওনা ৬৮৩ নম্বর পেয়ে সার্থকের সপ্তম হওয়া। টাকি হাউজ গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপার্পাস স্কুল ফর বয়েজের প্রধান শিক্ষক পরেশকুমার নন্দ বলেন, ‘‘পবিত্র খুব ভাল ছাত্র। ওর ফলে খুবই খুশি। তবে বাকি ছাত্রেরাও ভাল করেছে।’’

ছেলেদের সফল্যে গর্বিত বাবা-মায়েরা অবশ্য চান একটু অন্য কিছু। যেমন ডালিয়াদেবী বলেন, ‘‘ছেলে নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকলেই হল।’’ আর পবিত্রের বাবা দুলালবাবুর কথায়, ‘‘মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের। ওর স্বপ্নটা যেন মাটির কাছাকাছি থাকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন