উচ্ছ্বাস: মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার পরে। বুধবার, দমদম আনন্দ আশ্রম সারদা বিদ্যাপীঠে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
সেরা দশে ৫৬ জনের নাম। তার মধ্যে মাত্র দু’জন কলকাতার!
২০১৮ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বুধবার প্রকাশ হতেই সেরার তালিকায় কলকাতার পড়ুয়াদের উপস্থিতি এত কম দেখে শিক্ষামহলে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। খামতি কোথায়? এ বার তাই খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি।
শিক্ষকদের একাংশের ব্যাখ্যায়, মাধ্যমিক বোর্ডের ইংরেজি মাধ্যম, সিবিএসই এবং আইসিএসই স্কুলগুলোর উপরে নির্ভরতার ধাক্কা লেগেছে বাংলা মাধ্যম স্কুলে। এই ফলাফলের কারণও সেটাই, মনে করছেন তাঁরা। পাশাপাশি পঞ্চম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তির পদ্ধতির বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন অনেকে।
গত বছরের মাধ্যমিকে সেরা দশের পঞ্চম, ষষ্ঠ এবং নবমে ছিল যাদবপুর বিদ্যাপীঠের পড়ুয়ারা। এ বারের তালিকায় নেই সেই স্কুল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্যের যুক্তি, ‘‘ভর্তির জন্য লটারি পদ্ধতি শুরু যে বছর, সেই পড়ুয়ারাই এ বারে মাধ্যমিক দিল। সে সময়ে অনেকেই পছন্দের স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। তখন অনেক অভিভাবকই সন্তানদের বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। প্রথম সারির স্কুলগুলোও পছন্দের পড়ুয়াদের পায়নি।’’
বেথুন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারীর দাবি, ‘‘মূলত বেসরকারি স্কুলে ভর্তির পরে বাকি পড়ুয়াদের নিয়েই লটারি পদ্ধতি হয়। তাদেরকেই আমরা গড়ে তুলতে চেষ্টা করি।’’ শাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সিংহ মহাপাত্র বলেন, ‘‘অভিভাবকেরা বাংলা মাধ্যমে পড়াতে না চাওয়ায় সব মেধা চলে যাচ্ছে বেসরকারি স্কুলে। সেরার তালিকায় থাকতে গেলে সব বিষয়ে ভাল নম্বর
পেতে হবে। শহরের পড়ুয়াদের অধিকাংশের বাংলা ও ইতিহাসে ঝোঁক কম। ফলে ওই দুই বিষয়ে কম নম্বরের জন্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে অনেকে।’’
কলকাতার পড়ুয়াদের অতিরিক্ত গৃহশিক্ষক রাখার প্রবণতাও এই অবস্থার কারণ বলে মনে করছেন হিন্দু স্কুলের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্ত। তিনি জানান, মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়ার মতো বিভ্রান্তিকর জিনিসে ব্যস্ত থাকাও পিছিয়ে পড়ার অন্য কারণ।
পড়ুয়ার অভাবে সম্প্রতি কলকাতায় বেশ কয়েকটি বাংলা মাধ্যম স্কুল বন্ধ হয়েছে। বাংলা মাধ্যম থেকে মুখ ঘোরানোর এটি একটি প্রমাণ বলা যায়। সম্প্রতি রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্টে প্রকাশ, শহরতলি এবং গ্রামাঞ্চলেও বাড়ছে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারা স্বীকার করেছেন, পড়ুয়া সংখ্যার নিরিখে এই মুহূর্তে জেলার বেশ কয়েকটি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার মতো অবস্থায়। কলকাতার পড়ুয়াদের পিছিয়ে পড়ার প্রবণতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা শিক্ষামহলের।
পাশের হারে তৃতীয় স্থানে থাকলেও সেরার তালিকায় পিছিয়ে পড়া কলকাতার পড়ুয়াদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় স্কুলশিক্ষা দফতর। এক কর্তা বলেন, ‘‘বেসরকারি স্কুলের বিষয়টি এ ক্ষেত্রে কাজ করেনি বলে মনে করছি। বিশেষজ্ঞ কমিটি এই খামতির কারণ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করবে। পড়ুয়া যেমন মেধারই হোক, তাদের মূল স্রোতে নিয়ে আসাটা শিক্ষকদের কাছে চ্যালেঞ্জ।’’