কলকাতার কড়চা

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা মৌলিক নাটক ‘সওদাগরের নৌকা’ ১৯৭৬-এ প্রথম মঞ্চস্থ হওয়ার চল্লিশ বছর পর আবার ফিরে এল সংসৃতি-র প্রযোজনায়। নিভা আর্টস-এর সহযোগিতায়। নান্দীকার প্রযোজিত সেই নাটকটির নির্দেশক ছিলেন রাধারমণ তপাদার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

নবনির্মাণে শিকড়-সন্ধান

Advertisement

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা মৌলিক নাটক ‘সওদাগরের নৌকা’ ১৯৭৬-এ প্রথম মঞ্চস্থ হওয়ার চল্লিশ বছর পর আবার ফিরে এল সংসৃতি-র প্রযোজনায়। নিভা আর্টস-এর সহযোগিতায়। নান্দীকার প্রযোজিত সেই নাটকটির নির্দেশক ছিলেন রাধারমণ তপাদার। দেবেশ চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত এই নবনাট্য নির্মাণে সেই প্রযোজনার এক জন রণজিৎ চক্রবর্তী— যাত্রাদলের মেয়ে-সাজা অভিনেতা হরিসাধনের চরিত্রে। এক জন যাত্রাশিল্পীর কারুবাসনা, তাঁর সংসারের টানাপড়েন আর মোমবাতির মতো পুড়ে গিয়েও আলো দিয়ে যাওয়া শিল্পীসত্তা কী ভাবে জনপ্রিয়তার বিপ্রতীপে নৌকা ভাসায়— এই নিয়েই নাটক। মূল চরিত্র প্রসন্ন-র ভূমিকায় দেবশঙ্কর হালদার। এ যেন অভিনেতার শিকড় ছুঁয়ে দেখা, যাঁর পিতা ছিলেন বিখ্যাত যাত্রা-অভিনেতা অভয় হালদার। স্ত্রীর ভূমিকায় সুদীপ্তা চক্রবর্তী, ছেলের চরিত্রে সুজন মুখোপাধ্যায়, আর তার প্রেমিকা নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়। উইঙ্কল টুইঙ্কল, ইয়ে, নিঃসঙ্গ সম্রাট, আলতাফ গোমস-এর পর আবারও দেবেশ-দেবশঙ্কর একসঙ্গে।

তপন থিয়েটারের ভোল পুরো বদলে দিয়েছেন সঞ্চয়ন ঘোষ। শুধু নাটক নয়, স্পেসকে সাজিয়েছেন তিনি। সংগীতে দেবজ্যোতি মিশ্র। গানে, আবহ প্রয়োগে ভি বালসারা-র সেই সুরের জাদু যেন আবার ফিরিয়ে আনলেন তিনি। নাটক শুরুর আগে তপন থিয়েটারের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অভিনীত হচ্ছে ‘লেটো’ পালা। তার মূল গায়েন বীরভূমের কিংবদন্তি শিল্পী হরকুমার গুপ্ত। নাটকে যখন এক জন যাত্রাশিল্পী তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে লড়ছেন, তখন তার পূর্বরঙ্গ হিসেবে প্রায় লুপ্ত লেটো-র গান গাইছেন হরবাবু। এ ভাবেই যেন ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। গত কাল প্রথম অভিনয়ের পরে একমাত্র তপন থিয়েটারের ঘূর্ণায়মান মঞ্চেই এ-নাটকের লাগাতার অভিনয়। আগামী দু’টি অভিনয় ৩০ নভেম্বর ও ৭ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায়। বাঁ দিকে প্রণব বসুর তোলা নাটকের দৃশ্য, ডান দিকে লেটো শিল্পী হরকুমার গুপ্ত।

Advertisement

পুনর্মিলন

উনিশ শতকের ভারতের দুই বিশিষ্ট চিন্তক ও কর্মব্রতীর দেখা হয়েছিল বিশ শতক শুরুর কলকাতায়। গোপালকৃষ্ণ গোখলে ও সরলা রায়ের বন্ধুতা বাংলা তথা ভারতের শিক্ষা, বিশেষ করে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে যুগান্তর আনে। ১৯১৫-তে গোপালকৃষ্ণের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিরক্ষায় সরলা রায়ের তহবিল তৈরি, সেই সূত্রেই ১৯২০-র ২০ এপ্রিল কলকাতায় শুরু হয় গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল।

শুরুর লগ্ন থেকেই সিলেবাস থেকে শিক্ষাপদ্ধতি, সব কিছুতেই স্বতন্ত্র ছিল এই স্কুল, স্বাধীনতার পর পাঠ্যসূচিতে ঢোকে ভারতের সংবিধান, স্বাস্থ্যসচেতনতার পাঠও। শতবর্ষের প্রাক্কালে স্কুলের প্রাক্তনীরা তৈরি করেছেন ‘গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন’। প্রতি বছর ২৬ নভেম্বর, সরলা রায়ের জন্মদিন তাঁরা পালন করেন ‘ফাউন্ডার্স ডে’, এ বছরও ওই দিনই পুনর্মিলনের আয়োজন, আছে বিবিধ অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি।

জ্যোতিরিন্দ্র স্মরণ

‘নবজীবনের গান’-এ তিনি ভারতীয় মার্গসংগীতের সঙ্গে পাশ্চাত্য সংগীতের সমন্বয় ঘটান। এতে বিভিন্ন ভাবে লোকসংগীতকেও ব্যবহার করেছেন। আজীবন কমিউনিস্ট ভাবধারায় জড়িত জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র-র (১৯১১-১৯৭৭) জন্মমাস নভেম্বরে বিগত চার বছর যাবৎ অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতা। এ বার ‘জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এর উদ্যোগে ত্রিগুণা সেন সভাগৃহে ২৭ নভেম্বর সন্ধে ৬টায় বক্তা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপচারিতায় থাকবেন পবিত্র সরকার।

সঙ্গে প্রদর্শিত হবে তাঁর গান, কবিতা ও চিঠির অংশ নিয়ে দেবাশিস রায়চৌধুরীর পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ভিডিয়ো মন্তাজ ‘নবজীবনের ভাষা’ যা মূলত জ্যোতিরিন্দ্রের সৃষ্টিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াস। এতে আছেন কবীর সুমন, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত আচার্য, বাদশা মৈত্র, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, সাহেব চট্টোপাধ্যায় এবং দৌহিত্রী রোহিণী রায়চৌধুরী প্রমুখ। পরে এটি ইউটিউবেও দেখা যাবে।

উৎস মানুষ

‘রামানন্দবাবু (চট্টোপাধ্যায়) কোহিনূর বেচতেন আবার সঙ্গে সঙ্গে মুড়িও বেচতেন। কিন্তু কখনও ভেজাল বেচেননি’। সেই ১৯৮০ থেকে ‘উৎস মানুষ’ পত্রিকার টিকে থাকার পিছনে মুজতবা আলি সাহেবের কথাটা বড়ই প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়। আর যাঁর সম্পাদকীয় দক্ষতা সম্বল করে শৈশবেই ‘উৎস মানুষ’ আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল, তিনি প্রয়াত অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়। পত্রিকা সম্পাদনার কাজটা তাঁর কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, নিজের লেখালিখিকে একেবারেই পাত্তা দেননি। নতুন ভাবনা কী ভাবে প্রয়োগ করা যায়, তাতে তাঁর জুড়ি ছিল না। এ রাজ্যে গণবিজ্ঞান আন্দোলনের পুরোভাগে তাঁর নামটা সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। সাপে কাটা মানুষের চিকিৎসায় ওঝা না ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নিয়ে যে সচেতনতা, কিংবা ওঝাদের সুশিক্ষিত করে, তাঁদেরই হাতে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন তুলে দেওয়ার ভাবনাটা অশোকের মাথায় এসেছিল। পুরনো ‘উৎস মানুষ’ ঘাঁটলে সে সব পাওয়া যাবে। ‘উৎস মানুষ’ আজও বেরোয়। অশোকের ঘনিষ্ঠ কিছু সহযাত্রী আজও তা ধরে রেখেছেন। পত্রিকাগোষ্ঠী প্রতি বছর অশোকের প্রয়াণমাসে স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে। ২৬ নভেম্বর বিকেল ৫ টায় বাংলা আকাদেমির জীবনানন্দ সভাঘরে এ বারের অনুষ্ঠানে ‘উবুন্‌তু— আমরা আছি, তাই আমি আছি’ বিষয়ে বলবেন পরিবেশবিজ্ঞানী ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ।

রাধারমণ

তিনি দেহতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, অনুরাগ, প্রেম, ভজন, ধামাইল-সহ নানা ধরনের সহস্রাধিক গান রচনা করেছেন। বিশেষ করে তাঁর রচিত ধামাইল গান শ্রীহট্ট সহ সমগ্র বাংলাদেশ, এমনকী ভারতের বাঙালিদের কাছেও জনপ্রিয়। প্রসিদ্ধ কবি রাধামাধব দত্তের পুত্র রাধারমণ দত্তের জন্ম ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে। প্রয়াণ ১৯১৫-য়। এ বার এই লোককবির ১০১তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে শিশির মঞ্চে ২২ নভেম্বর সন্ধে ৬টায় ‘এক সন্ধ্যায় শুধুই রাধারমণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। সংগীত পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের সংগীতশিল্পী বিশ্বজিৎ রায়, লোকসংগীত শিল্পী তপন রায়, মেয়েদের লোকগানের দল ‘মাদল’ ও মহাজনী লোকগানের দল ‘বাহিরানা’। রাধারমণের জীবন ও তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে বলবেন বরুণকুমার চক্রবর্তী। আয়োজনে বাহিরানা।

কবিতাস্কোপ

কবিতা শ্রাব্য না পাঠ্য? এ প্রশ্ন বহু দিনের। অমীমাংসিতও বটে! সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘প্রকৃত রস-উপলব্ধি হয় কোনটিতে, এ বিষয়ে আমার কোনও স্থির বিশ্বাস নেই! তবে কিছু কিছু কবিতা অন্য কণ্ঠে শুনেও উপভোগ করা যায়। আবার কিছু কিছু কবিতা নির্জনে জানলার ধারে বসে পড়াই ঠিক।’ কিন্তু কবিতার দৃশ্যায়ন বা নৃত্য নিয়ে এখনও বিশেষ প্রশ্ন ওঠেনি। আর ওঠেনি বলেই আবার কবিতার দৃশ্যায়ন ও নৃত্য দেখা যাবে আবৃত্তিকার হিসেবে সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘বলতে বলতে ২৫ সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়/কবিতাস্কোপ ৬’ শীর্ষক এক অভিনব অনুষ্ঠানে। ২৪ নভেম্বর, সন্ধে ৭টায়, রবীন্দ্রসদনে। দেখা যাবে, কিছু কবিতা পাঠের সঙ্গে বায়োস্কোপ অর্থাৎ কবিতার মর্ম বা ভাব জায়ান্ট স্ক্রিনে। আর কিছু কবিতা পাঠের সঙ্গে নাচ। বিশেষ ভূমিকায় শ্রীজাত ও দেবলীনা দত্ত মুখোপাধ্যায়। আবহসংগীতে প্রত্যূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, নৃত্য পরিচালনায় অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উপস্থাপনায় বিপ্লব দাশগুপ্ত। সমগ্র পরিকল্পনায় সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়।

একক ৭৫

সম্পাদক শুদ্ধসত্ত্ব বসুর হাত ধরে ১৯৪১-এ পথচলা শুরু করে কবিতা ত্রৈমাসিক ‘একক পত্রিকা’। ২০০০ সালে তাঁর প্রয়াণের পরও কন্যা লপিতা সরকার নিয়মিত সেটি প্রকাশ করে চলেছেন। পত্রিকার পঁচাত্তর বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৪ নভেম্বর বিকেল ৫টায় বাংলা আকাদেমি সভাগৃহে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। উদ্বোধন করবেন নবনীতা দেব সেন। কবিতা বিষয়ক আলোচনা ছাড়াও প্রকাশিত হবে শুদ্ধসত্ত্ব বসুর আত্মজীবনীগ্রন্থ স্মৃতি একাকিনী এবং জীবনানন্দ দাশ, প্রেমেন্দ্র মিত্র, শিবরাম চক্রবর্তী, শঙ্খ ঘোষ, শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ পঁচাত্তর জনের কবিতার সংকলন একক ৭৫। ‘কবিতার বিবর্তন’ প্রসঙ্গে বলবেন সপ্তাশ্ব ভৌমিক।

ঐতিহ্য

এই শহর থেকেই তিনি ভারতে নতুন দিন আনার অগ্রদূত। কিন্তু রামমোহন রায়ের পা দুটি থিতু ছিল ঐতিহ্যেই। মৃত্যুর পরেও তাঁর গলায় তাই পৈতে। তাঁর রাজা উপাধি লাভে বড়লাট অসন্তুষ্ট। কিন্তু রামমোহন রায়ের যুক্তি পরিষ্কার, মুঘল বাদশাহ ও কোম্পানির মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী বাদশাহের এই উপাধি দানের অধিকার আছে। ঐতিহ্যে স্থিত, কিন্তু আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে সন্ধি শব্দটা তখনও ব্যবহার করেননি। উল্টে চিঠিতে লিখছেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সব রাষ্ট্রেরই সমান অধিকার। মুঘল বাদশাহও তাই প্রাপ্য সম্মানের অধিকারী। দিল্লির জাতীয় লেখ্যাগারে রাখা রামমোহনের চিঠিপত্র এ ভাবেই গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারে তাঁর সাম্প্রতিক বক্তৃতায় তুলে ধরলেন ইতিহাসবিদ সব্যসাচী ভট্টাচার্য। লন্ডননিবাসী অশীতিপর চিকিৎসক দীপঙ্কর দত্তের উদ্যোগে তৈরি ‘ন্যাশনাল ট্রাস্ট অব বেঙ্গল’-এর বক্তৃতামালা শুরুই হল এই বক্তৃতা দিয়ে। দ্বিতীয় বক্তৃতাটি আগামী ১৪ ডিসেম্বর ‘সংবাদমাধ্যম ও মূল্যবোধ’ নিয়ে। রোটারি সদনে সে দিন বলবেন জহর সরকার। সব্যসাচীবাবু তার আগে এই শহরকে জানিয়ে গেলেন, ঐতিহ্য আসলে এটাই। বৈষ্ণব বাড়ির রামমোহনের সঙ্গে মুসলমান বাদশাহের হার্দিক আদানপ্রদান। হাল আমলের উন্মার্গগামিতা নয়।

কাশ্মীর-চিত্র

পঁচিশ বছর ধরে ছবি তুলছেন অমিত মেহরা। বিশেষ করে ‘ডকুমেন্টারি’ আলোকচিত্রেই তাঁর ঝোঁক, কিন্তু নানা ধরনের ছবিতে দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। দেশবিদেশে এর আগে তাঁর ২৩টি একক প্রদর্শনী হয়েছে, ২৪তম প্রদর্শনী এ বার কলকাতায়। আলিপুর পার্ক রোডের গ্যালারি সংস্কৃতিতে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখা যাবে কাশ্মীর নিয়ে তাঁর তোলা ছবি (সঙ্গে তারই একটি)। পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত তাঁর কাশ্মীর বইটিতে অভিজ্ঞতার সঙ্গে সমন্বয় ঘটেছে গভীর অনুভূতির।

হায়দরাবাদে ‘ইন্ডিয়ান ফোটো ফেস্টিভ্যাল ’১৬’ তাঁরই পরিকল্পনায় অনুষ্ঠিত হল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপর একটি ছবির বই সদ্য-প্রকাশিত, কাজ করছেন সুফিদের নিয়ে পরবর্তী বইয়ের। পুরনো দিল্লির গল্পগাছা নিয়ে ‘টোয়াইলাইট অব মাই সিটি’ নামে একটি তথ্যচিত্রের কাজও চলছে।

নামভূমিকায়

ছেলেবেলা থেকেই তিনি নাচেগানে তুখোড়। বাড়িতে অভিনয়ের একটা আবহ ছিল। দাদু শৈলেন্দ্রপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ছিল নাটক-যাত্রার গ্রুপ। মামা বিশিষ্ট অভিনেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়। মূলত এঁদের প্রেরণাই তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল অভিনয়ে আসার। অমৃতা চট্টোপাধ্যায় অজয় চক্রবর্তীর ‘শ্রুতিনন্দন’-এ চার বছর ক্লাসিকাল সংগীত ও থাঙ্কমণি কুট্টির ‘কলামণ্ডলম’-এ ন’বছর ভরতনাট্যম শিখেছেন। করেছেন সোহাগ সেন-এর ওয়ার্কশপও। বছর তিনেক আগে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘আনোয়ার কা আজব কিসসা’য় নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির সঙ্গে অমৃতা প্রথম বড় পর্দায়। এর পর অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের ‘জানলা দিয়ে বউ পালালো’, অদিতি রায়ের ‘অন্য বসন্ত’, ও কৃশানু গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ভেংচি’তে প্রধান ভূমিকায় তাঁকে দেখা যায়।

সম্প্রতি, গোবিন্দ নিহালনির সহকারী পরিচালক সঞ্জীব দে-র মাল্টিলিঙ্গুয়াল ছবি ‘থ্রি স্মোকিং ব্যারেলস’-এ সুব্রত দত্ত-র বিপরীতে গুয়াহাটিতে শুটিং সেরে এলেন। পাঠভবন স্কুলের কৃতী ছাত্রী অমৃতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে সোসিওলজিতে অনার্স করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রযোজনায় ‘কনকাঞ্জলি’ ধারাবাহিকে তাঁর প্রথম অভিনয়ে হাতেখড়ি। তার পর থেকে বড় পর্দাতেই মন। তাঁর অভিনীত ‘মেহের আলি’, ‘তুষাগ্নি’ মুক্তির অপেক্ষায়। মহুয়া চক্রবর্তীর সাতানব্বই মিনিটের বাংলা ছবি ‘তানজিল’-এ তিনি নামভূমিকায়। এটি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে মেয়েদের পরিচালিত ছবির আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ঠাঁই পাওয়া একমাত্র ভারতীয় ছবি।

শতবর্ষে

পেশায় চিকিৎসক হলেও, তিনি নেশায় ছিলেন অভিনেতা! কলকাতার বিভিন্ন মঞ্চে বহু নাটকে তিনি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। দেবেন্দ্রকুমার খাসনবিশ ও বিরাজিনীদেবীর চতুর্থ সন্তান পরিমল খাসনবিশের (১৯১৬-১৯৯২) জন্ম পূর্ব বাংলার ফরিদপুরের গয়ঘর গ্রামে। কালিয়াগঞ্জ স্কুল থেকে ১৯৩২ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতায় এসে বঙ্গবাসী কলেজে আই এসসি পাশ করে, কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজে (বর্তমানে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে) ভর্তি হন। এই সময়েই তিনি বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং শিক্ষক বিধানচন্দ্র রায়ের সংস্পর্শে আসেন। লন্ডন থেকে ‘ডি এল ও’ ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৪৯ সালে দেশে ফেরেন। তিনি দীর্ঘদিন চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি বিভাগে চিকিৎসক ও শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

এখান থেকেই অবসর নেন। দুঃস্থ রোগীদের বিনা পারিশ্রমিকে চিকিৎসা করতেন। নানা ধরনের সামাজিক কর্মের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। হরিশ মুখার্জি রোডে অবস্থিত ২৩ পল্লি দুর্গামন্দিরের আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর চব্বিশ বছর পরও সাধারণ মানুষের স্মৃতিতে তিনি সুচিকিৎসক, সংস্কৃতিমনস্ক, বন্ধুবৎসল হিসেবেই উজ্জ্বল। তাঁর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ২৭ নভেম্বর সকাল ১০টায় আই সি সি আর-এর সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করবেন বারীন রায়চৌধুরী, তরুণ পালিত, তরুণ মজুমদার প্রমুখ। থাকবে শ্রুতিনাটক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন