অভিনয় জীবনের ষাটে পা
আর ক’দিনই-বা বাকি! অভিনয় জীবনের ষাট বছরে পা দেবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ১৯৫৮-র ৯ অগস্ট, ‘অপুর সংসার’-এর শ্যুটিংয়ে সে দিনই প্রথম শট নেওয়া হয়েছিল তাঁর, বেলেঘাটায় ছোট্ট একটা কারখানায়। অবশ্য ‘অপরাজিত’ তৈরির সময় থেকেই সত্যজিতের সঙ্গে সম্পর্কের শুরু, সেই মানুষটাকে প্রতিনিয়ত মনে পড়ে তাঁর। আরেক জনের অভাবও নিশ্চয়ই টের পান, উত্তমকুমার। সত্তর দশকের শেষাশেষি এক দিন মনখারাপ উত্তমের, বললেন ‘দূর আর ভাল লাগছে না’, এত কষ্ট হল এটা শুনে যে সৌমিত্র তাঁকে ঠাট্টা করে বললেন ‘বুড়োর রোলগুলো করতে হবে না? কোত্থেকে হবে, এখন থেকেই ভাল না লাগলে? আপনি আর আমি বুড়ো না হলে ইন্ডাস্ট্রিতে ভাল বুড়ো পাওয়া যাবে না!’ শুনে হাসতে লাগলেন উত্তম। আজ উত্তমের মৃত্যুদিনে যেমন নন্দনে সাদাকালো ছবির উৎসব শুরু করছে শিল্পী সংসদ, তেমনই হয়তো স্মৃতিভারাতুর হয়ে আছেন সৌমিত্র। তবে কাজের চাপে কতটুকুই-বা অবকাশ পান, এই মুহূর্তে টালিগঞ্জে সৌমিত্রবাবুর ব্যস্ততা বোধকরি সবচেয়ে বেশি। ফরাসি সম্মান লিজিয়ঁ দ্য নর প্রাপ্তির পর সৌমিত্রর ব্যস্ততা যেন বেড়েই চলেছে। শ্যুটিং চলাকালীনও তাঁকে প্রায়ই সংবর্ধনা জানানো হচ্ছে। সে দিন যেমন টালিগঞ্জে ‘শেষ চিঠি’ ছবিটির কাজ চলছিল, সেখানেই ফ্লোরে এই বর্ষীয়ান অভিনেতাকে সম্মান জানানো হল। আবার মেয়েদের ওপর নানাবিধ পুরুষতান্ত্রিক অত্যাচার, তাদের স্বাভাবিক বাঁচার অধিকার নিয়ে তরুণ পরিচালক রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করছেন ‘মেয়ে/মানুষ’ নামে একটি ছবি, লিলি চক্রবর্তীর সঙ্গে সেই ছবিতেও শেকড়ের বন্ধন তৈরি করছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে তারই ছবি। বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ এখন সৌমিত্রময়।
প্রয়াণদিবস
মহাশ্বেতা দেবী বলতেন, ‘আঙুল লেখে না, লেখে আমার মন।’ বাবা মণীশ ঘটক আর কাকা ছিলেন ঋত্বিক ঘটক। বালিকাবেলায় শান্তিনিকেতন আশ্রমে দেখা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে। তখনকার আশ্রম-জীবন তাঁকে দিয়েছিল অদম্য মুক্তির আনন্দ, পর-কে আপন করার নিঃস্বার্থ টান! গত বছর শ্রাবণে জীবনের এই ‘অমৃতসঞ্চয়’ রেখে চলে গিয়েছেন মহাশ্বেতা দেবী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন সভাকক্ষে ২৮ জুলাই সন্ধে ৬টায়, তাঁর প্রথম প্রয়াণদিবস-এর শ্রাবণসন্ধ্যায় তাঁরই স্মরণে ‘রবি ভৈরবী’র নিবেদন: রবীন্দ্র অনুষঙ্গে মহাশ্বেতা। তাঁর প্রিয় শ্রাবণের গান নিয়ে মনীষা বসুর রবীন্দ্রগানের একক: ‘আমার নিশীথরাতের বাদলধারা’। থাকবে মীনাক্ষী সিংহের একক নাট্যাভিনয় ‘হাজার চুরাশির মা’। প্রাক্কথনে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়।
শতবর্ষে
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় তাঁকে লিখেছিলেন, ‘বয়সে তরুণ হলেও তুমি দেখছি ইতিমধ্যেই দেশ সম্বন্ধে অনেক ভাবতে শিখেছ।’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মূল্যায়ন ছিল, ‘তুমি খুব ইনটেলিজেন্ট। তোমার সত্যনিষ্ঠা দেখে বড় খুশী হয়েছি।’ আর তাঁর লেখা গান শুনে কাজী নজরুল বলেছিলেন, ‘তুমি আমার ভাত মারবে দেখতে পাচ্ছি।’ তিনি রণজিৎকুমার সেন (১৯১৭-২০০৬)। রবীন্দ্র-স্নেহধন্য এই লেখকের পঞ্চাশ-অধিক গ্রন্থের মধ্যে আছে কবিতা, গান, ছোটগল্প, উপন্যাস, কিশোর সাহিত্য, নাটক এবং প্রবন্ধ। ‘কৃষক’, ‘নবযুগ’-এর মতো পত্রিকার সহ-সম্পাদক ছিলেন, মাসিক ‘রূপ ও রীতি’র জন্য তাঁকে ডেকে নিয়েছিলেন প্রমথ চৌধুরী, পরে ‘বঙ্গশ্রী’ পত্রিকা তাঁর হাতে হয়ে ওঠে স্বর্ণপ্রসূ। রণজিৎকুমার প্রথম চারণকবি মুকুন্দদাসকে নিয়ে গ্রন্থরচনা করেন, আবার গৌতম বুদ্ধের আড়াই হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁর রচিত ‘বুদ্ধঘোষ’ নাট্যবিচিত্রাটি আকাশবাণীর চোদ্দোটি বেতারকেন্দ্র থেকে চোদ্দোটি ভাষায় একই দিনে একই সময়ে পরিবেশিত হয়। সব্যসাচী এই সাহিত্যিকের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ‘গানের ভুবন’-এর উদ্যোগে ২৬ জুলাই জীবনানন্দ সভাঘরে সাড়ে পাঁচটায় একটি অনুষ্ঠানে বলবেন সুমিতা চক্রবর্তী, কিন্নর রায়, প্রচেত গুপ্ত প্রমুখ।
খুবই আশ্চর্য
ধারাবাহিক সুনন্দর জার্নাল লেখাটিতে সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভিন্ন ধরনের এক মনন ধরা পড়েছে, বলছিলেন আবদুল কাফি। তিনি এই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেন যে বর্তমান সময়ে এই ধরনের রসবোধ সম্পৃক্ত লেখা আমরা ক্রমশ হারিয়ে ফেলছি! সম্প্রতি সাহিত্য অকাদেমিতে আয়োজিত হয়েছিল নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দু’দিনের আলোচনাসভা। উদ্বোধনে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সূচনা বক্তব্য পিনাকেশ সরকার, ছিলেন রামকুমার মুখোপাধ্যায় এবং রুশতী সেন। উপন্যাস, গদ্যসাহিত্য, ছোটগল্প এবং সামগ্রিক সৃষ্টির জগৎ নিয়ে আলোচনা হল। আলোচনায় উঠে এল, তিনি ছিলেন ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলনের সহযোগী। ‘নারায়ণবাবু অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছিলেন, আক্ষেপ করে বলছিলেন অলোক রায়, ‘কিন্তু সেগুলি আজও সংকলিত হল না, এটা খুবই আশ্চর্যের।’ আরও আশ্চর্য, ওঁর নাটক নিয়ে এখানে কোনও আলোচনাই হল না!
স্মৃতির উদ্দেশে
তাঁর উদাত্ত ও বলিষ্ঠ কণ্ঠের টান বহু বছর ধরে আকর্ষণ করে আসছে অগণিত শ্রোতাকে। তাঁর কণ্ঠে ভাটিয়ালির সুর এখনও শ্রোতাদের কানে বাজে। ২৭ জুলাই সেই নির্মলেন্দু চৌধুরীর ৯৫তম জন্মদিনে, তাঁর স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদিত হবে তাঁরই গাওয়া একগুচ্ছ গান। প্রচলিত ও অপ্রচলিত সেই সব গান গাইবেন অভিজিৎ আচার্য, যিনি নির্মলেন্দুর সেই ধারা অক্ষুণ্ণ রেখে লোকসংগীত নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। ‘থিয়েলাইট’-এর উদ্যোগে ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে সন্ধ্যা ৬টার ওই অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত হবেন নির্মলেন্দুর আত্মীয়া গীতা চৌধুরী। অনুষ্ঠানটির কথনে সুকৃতি লহরী।
কিউবার ছবি
জুলাইয়ের সঙ্গে রীতিমতো যোগ কিউবার বিপ্লবের, ১৯৫৩-র ২৬ জুলাই কর্তৃত্ববাদী বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয় ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে, পাঁচ বছর পাঁচ মাস ছ’দিন লেগেছিল সে শাসন থেকে মুক্ত হতে— ১৯৫৯-এর ১ জানুয়ারি। ৬৪ বছর পূর্তিতে বিপ্লবের সে স্মৃতি উসকে দিতেই এ দেশের ‘ফ্রেন্ডস অব লাতিন আমেরিকা’র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কিউবা চলচ্চিত্রোৎসবের আয়োজন করেছে আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাব। ২১ জুলাই উদ্বোধনের পর ২৪-২৭ জুলাই গোর্কি সদনে প্রতিদিন সন্ধে সাড়ে ৬টায়। থাকছে উমবের্তো সোলাসসহ বিশিষ্ট পরিচালকদের ছবি, ‘দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইং’-খ্যাত মিখাইল কালাতোজোভ-এর ‘আই অ্যাম কিউবা’ ছবিটি এই প্রথম দেখানো হচ্ছে কলকাতায়, জানালেন গৌতম ঘোষ, উদ্যোক্তাদের পক্ষে। অন্য দিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ফিল্মোৎসবও সদ্য শেষ হল এসআরএফটিআই-তে।
মূল নাটক
গত শতকে ষাটের দশকে কলকাতায় ঝড় তুলেছিল ‘জনৈকের মৃত্যু’, আমেরিকার কিংবদন্তি নাট্যকার আর্থার মিলারের ‘ডেথ অব আ সেলস্ম্যান’ অবলম্বনে। ছ’দশক পরে সদ্য মূল ইংরেজি নাটকটিই জ্ঞানমঞ্চে মঞ্চস্থ করল নবীনদের নাট্যগোষ্ঠী ‘দ্য নৌটঙ্কি কোম্পানি’। অভিনয়ে, মঞ্চসজ্জায়, আলো আর ধ্বনির প্রক্ষেপণে যাঁরা ছিলেন, প্রত্যেকেরই বয়স কুড়ি থেকে একুশের মধ্যে। আমেরিকার তিরিশের দশকের অর্থনৈতিক মন্দাকে প্রেক্ষিতে রেখে তাঁরা মঞ্চে তুলে আনলেন এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘোর আর্থিক সংকট। মূল চরিত্র উইলি লোমান-এর ভূমিকায় অভিনয়ে তো বটেই, সর্বোপরি নির্দেশনায় ছিলেন সুরম্যপূষণ দাশগুপ্ত। এর পর দিল্লিতে নাটকটি মঞ্চস্থ করবেন এই নবীনেরা।
শৈলজারঞ্জন স্মরণ
‘বাঁশি, তোমায় দিয়ে যাব কাহার হাতে’, নিজের গান নিয়ে শেষ জীবনে উদ্বিগ্ন কবি শৈলজারঞ্জনকেই তাঁর সাধের সংগীত ভবনের অধ্যক্ষ করে দিয়ে গেলেন। কালক্রমে এই অধ্যক্ষই হয়ে উঠলেন শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের গুরু, রবীন্দ্রগানের সুর সংরক্ষণের আপসহীন প্রহরী। শৈলজারঞ্জনের ১১৭তম জন্মবর্ষ পালন করছে— কথা ও সুর রবীন্দ্রসংগীত অনুশীলন/ অনুসন্ধান সংস্থা। দু-দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন, গিরিশ মঞ্চে ২০ জুলাই হল বেহাগ রাগে সমবেত এস্রাজ ও রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান নিয়ে আলেখ্যগীতি: ‘এসেছিলে তবু আস নাই’। আজ দ্বিতীয় দিন ২৪ জুলাই সন্ধে ৬টা ১৫-য় একক রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করবেন সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায়। অন্য দিকে শৈলজারঞ্জনের ১১৭তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে সুনন্দন-এর ২৫তম বর্ষপূর্তির সমাপ্তি অনুষ্ঠানে আয়োজিত হয়েছে আলোচনা: ‘রবীন্দ্রনাথের গান পড়া, গাওয়া ও শোনা’। আলোচনা করবেন সংস্থার সভাপতি দেবেশ রায়। পরিচালনায় সংস্থার কর্ণধার এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়। ২৬ জুলাই রোটারি সদনে সন্ধে সাড়ে ৬টায়।
চপলরানি
তিনিই একমাত্র জীবিত এবং শেষ পুরুষ নারী চরিত্রাভিনেতা। প্রভা দেবী ও তারাকুমার ভাদুড়ীর কনিষ্ঠ সন্তান চপল ভাদুড়ীর জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৯ জুলাই, কলকাতায়। তাঁর জ্যাঠামশাই নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ী ও দিদি অভিনেত্রী কেতকী দত্ত। অভিনেত্রী মায়ের হাত ধরেই মঞ্চে প্রবেশ। তিনি নট্ট কোম্পানি, নবরঞ্জন অপেরা, সত্যম্বর অপেরা— এমন নানা যাত্রাদলে অভিনয় করেছেন রাজা দেবীদাস, চাঁদবিবি, সুলতানা রিজিয়া, মহীয়সী কৈকেয়ী ইত্যাদি পালায়। নদিয়া নাগর পালায় তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে পুরীর শঙ্করাচার্য নিজের উত্তরীয় পরিয়ে দেন চপলের গলায়। নবীন কিশোর তাঁকে নিয়ে তৈরি করেছিলেন চমৎকার তথ্যচিত্র ‘পারফর্মিং দ্য গডেস’। আগামী ২৯ জুলাই চপল ভাদুড়ীর ৭৮ বছর পূর্ণ হচ্ছে।
আগুন-তুলি
বয়স ও প্রজন্ম নির্বিশেষে সকলেরই সর্বজনীন ‘দেবুদা’ ছিলেন তিনি। শিল্পী দেবব্রত মুখোপাধ্যায় (১৯১৮-১৯৯১)। যিনি শিল্পীর নিজস্বতাকে কখনও শিল্পীর বিচ্ছিন্নতায় পর্যবসিত হতে দেননি। নান্দনিকতা তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরায়নি, বরং আরও কাছেই টেনেছিল। অগ্নিআখরে নিজের নাম খোদাই করে গিয়েছেন তিনি মানুষের চৈতন্যে। দেখতে দেখতে তাঁরও জন্মশতবর্ষ এগিয়ে এল। তাঁর প্রাক্-জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের আয়োজন করেছে বই-চিত্র, সি গুহ মেমোরিয়াল গ্যালারি। ২৭ জুলাই বিকেল পাঁচটায় কলেজ স্ট্রিটে বই-চিত্র সভাঘরে শিল্পসমালোচক মৃণাল ঘোষের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হবে তাঁর জীবন, শিল্পসাধনা ও সাহিত্যকৃতির আখ্যান আগুন-তুলি। লেখক নবীন গবেষক ও শিল্পী কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত। সে দিনই শিল্পী শমিত দাস স্লাইড প্রদর্শনীর মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চিন, জাপান ও ভারতে সাদাকালো ছবির আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও নান্দনিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করবেন। শমিত জাপানের ফুকুওকা এশিয়ান আর্ট মিউজিয়ামের গবেষক ও সহায়ক।
হাতে রইল ইতিহাস
অনুষ্টুপ পত্রিকার এ-বারের প্রাক্-শারদীয় সংখ্যার বিষয়: তিন দশকের গণআন্দোলন। পঞ্চাশ পেরিয়ে একান্ন চলছে অনুষ্টুপের। অর্ধ শতাব্দী আগে সমাজ ও রাজনীতির যে মন্থনকালে এই পত্রিকার জন্ম, আজ তা অতীত, ইতিহাসচর্চার বিষয়। সম্পাদকীয় প্রবন্ধে অতএব অমোঘ প্রশ্ন: ‘... গণ আন্দোলন-এর অভাবজনিত এই একবিংশ শতকে আমাদের ভাবনার সময় এসেছে, এমনটাই বা হলো কেন?’ এ-প্রশ্নের উত্তর এই সংখ্যায় নেই, থাকার কথাও নয়। এখানে আছে পশ্চিমবঙ্গের গণআন্দোলন নিয়ে অনেকগুলি প্রবন্ধ, একটি সাক্ষাৎকার, কিছু বই নিয়ে আলোচনা, কিছু স্মৃতি, দুটি গল্প, একটি কবিতা— এবং সম্পাদকীয়ের শেষে উদ্ধৃত জয়দেব বসুর কিছু উজ্জ্বল সৃষ্টি। নতুন লেখা আর পুনর্মুদ্রণ মিলিয়ে মূল্যবান দলিল।
অন্য সুরে
ছেলেবেলা থেকেই তিনি সংগীতের আখড়ায় বেড়ে উঠেছেন। বাবা গীতিকার-সুরকার সুধীন দাশগুপ্ত চাইতেন ছেলে গানবাজনার জগতে না এসে পড়াশোনাটা ঠিকঠাক করুক। যখন তিনি দেখলেন ছেলে পড়াশোনাটা চালিয়েও পিয়ানোতে বেশ সুর তুলতে পারছে, তখন আর ছেলের গিটার শেখার শখকে ধামাচাপা দিতে পারেননি। ‘একটু বড় বয়সেই অর্থাৎ ক্লাস টেন থেকে শুরু করেছিলাম গিটার শেখা। প্রথম কয়েক বছর শিখি কাকু পরিমল দাশগুপ্তর কাছে, তার পর কার্লটন কিটোর কাছে তালিম নিই।’ বলছিলেন বছর পঞ্চান্নর সুরকার-গিটারিস্ট সৌম্য দাশগুপ্ত। ক্লাস টুয়েলভে পড়াকালীনই তিনি বাবার সঙ্গে রেকর্ডিংয়ে বাজাতে শুরু করেন। কাজ করেছেন মান্না দে, আরতি মুখোপাধ্যায়, বনশ্রী সেনগুপ্ত, অমিতকুমার ও অন্য বিশিষ্টদের সঙ্গে। ১৯৭৯ সালে তৈরি করে ফেলেন ফোক-রক ব্যান্ড ‘ফারদার অ্যাওয়ে’। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে আর্কিটেক্ট-এর কাজ নিয়ে ওমানে চলে যান ১৯৯০-এ। ১৯৯১ সালে ওমানে ‘ফিডব্যাক’ নামক গানের ব্যান্ডে যোগ দেন। এর সঙ্গে একের পর এক চলতে থাকে মালয়ালি, তামিল, হিন্দি ও বাংলা গানের শো। ২০১৩ সালে বন্ধু তবলাশিল্পী সুব্রত ভট্টাচার্য-র ফিউশন ব্যান্ডের সঙ্গে ‘রিপলস’ নামক একটি অ্যালবামও তৈরি করেন। সম্প্রতি তাঁর সুর করা ও রাজীব চক্রবর্তীর লিরিকসে রাঘব চট্টোপাধ্যায়, নির্মাল্য রায়, স্বাগত দে-র গাওয়া আটটি গানসমৃদ্ধ অ্যালবাম ‘খুশি নই অল্পে’ (ইউ ডি) প্রকাশিত হল।