মুসলিম লিগের ডাকা প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসে (১৬ অগস্ট ১৯৪৬) কলকাতায় যে ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয়েছিল, তার রেশ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। দাঙ্গা নিবারণে গাঁধীজি দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে নোয়াখালিতে পৌঁছেছিলেন ওই বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। শুধু তা-ই নয়, টানা চার মাস সেখানে ঘাঁটি গেড়ে গ্রামের পর গ্রাম হেঁটে ঘুরেছিলেন শান্তির বাণী নিয়ে। ১৯৪৭ সালে তিনি চলে আসেন কলকাতায়, অগস্টের গোড়ায়। সোদপুর আশ্রমে কয়েক দিন থেকে ১৩ অগস্ট বেলেঘাটার হায়দরি মঞ্জিলে ওঠেন। ১ সেপ্টেম্বর অনশন শুরু করেন, অনশন ভঙ্গ করেন ৪ তারিখ। ৭ সেপ্টেম্বর তিনি দিল্লি ফিরে যান। এই তাঁর শেষ কলকাতা সফর।
১৯০০ সালের গোড়ায় ঢাকার নবাব আবদুল গনি বেলেঘাটা অঞ্চলে এই বাগানবাড়িটি কিনেছিলেন। ১৪ কাঠা জমির ৮ কাঠার উপর চার হাজার বর্গফুট জুড়ে বড় ছোট ৭টি ঘর নিয়েই এই ভবন। ১৯৮৪ সালে রাজ্য সরকার হেরিটেজ তালিকাভুক্ত করে অধিগ্রহণের পর বাড়িটির আমূল সংস্কার করা হয়। ১৯৮৫ সালে রাজ্যপাল উমাশঙ্কর দীক্ষিত ও পূর্তমন্ত্রী যতীন চক্রবর্তী বাড়িটির নতুন নামকরণ করেন— ‘গান্ধী ভবন’। সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই একটি হলঘর, তার দেওয়ালে আঁকা আছে গাঁধীজিকে নিয়ে ফ্রেস্কো। এর ঠিক পিছনে আরও একটি হলঘর, দেওয়ালে অনশনরত গাঁধীজির বিশাল ফ্রেমবন্দি ছবি। ডান দিকের কোণের শেষ ঘরটিতেই ‘বাপু’ অনশনে রত ছিলেন। বর্তমানে সম্পূর্ণ কাচ দিয়ে ঢাকা ওই স্থানটিতে তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র রক্ষিত আছে। ২০০৭-এ এই বাড়িতেই একটি সংগ্রহালয়ও তৈরি হয়েছে। হয়েছে রাস্তার ওপর একটি স্থায়ী তোরণ। ২ অক্টোবর গাঁধীজির ১৫০তম জন্মদিনে তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে সার্ধশতবর্ষ উৎসবের সূচনা করবেন। ছবি: শুভেন্দু দাস
সার্ধশতবর্ষে
রবীন্দ্রনাথ লিখিত ‘গান্ধী মহারাজ’ কবিতার ইংরেজি পাণ্ডুলিপি আর ‘হরিজন’ পত্রিকার ১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা-র প্রতিলিপি দিয়ে শুরু হয়েছে কোরক সাহিত্য পত্রিকা-র (সম্পা: তাপস ভৌমিক) শারদীয় সংখ্যাটি। বিষয়: ‘সার্ধশতবর্ষে মহাত্মা গান্ধী’। গাঁধীজিকে নিয়ে প্রায় এক সামগ্রিক পাঠের প্রয়াস পত্রিকাটির, বিবিধ বিষয় বিস্তৃত পরিসরে। নেহরু, নেতাজি, জিন্না, অম্বেডকর, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখ ব্যক্তিত্ব, সশস্ত্র আন্দোলন ও বিপ্লবী, কমিউনিস্ট, স্ত্রী কস্তুরবা... এঁদের সঙ্গে গাঁধীজির সম্পর্ক, তাঁর অহিংস রাজনৈতিক দর্শন, পরিবেশ-সঙ্গীত-সৌন্দর্য ভাবনা— এমন অনেক কিছু। আছে গাঁধী-বিষয়ক বাংলা গ্রন্থের তালিকাও। পরাধীন ভারতের রাজনীতির পুরোধাপুরুষ গাঁধীজি কী ভাবে স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্র পরিচালনা ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক কর্তৃত্ব থেকে ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকলেন, সেই পরিক্রমারও একটি হদিস মিলবে এতে। ‘‘আমরা যতটা সম্ভব নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি ও বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণে মহাত্মা গান্ধীর বর্ণময় জীবন ও কর্মপদ্ধতির মূল্যায়ন করতে চেয়েছি।’’ জানানো হয়েছে সম্পাদকের নিবেদন-এ।
প্রয়াণের পর
দেশ স্বাধীন হয়েছে কয়েক মাস, হুগলি জেলার ইতিহাস লিখছেন সুধীরকুমার মিত্র (১৯০৯-৯৩)। ছাপা হচ্ছে উত্তর কলকাতার শিশির পাবলিশিং হাউসে, প্রতি দিন সেখানে যেতে হয় তাঁকে। উল্টো দিকের প্রকাশনা শ্রীগুরু লাইব্রেরি থেকে কর্ণধার ভুবনমোহন মজুমদার মাঝেমধ্যেই আসেন আড্ডা দিতে। এক দিন শুধোলেন, ‘‘আচ্ছা সুধীরবাবু, যাঁরা দেশ স্বাধীন করলেন, সেই বিপ্লবীদের ইতিহাস লেখার কথা ভাবেননি কখনও?’’ কথায়-কথায় ঠিক হল, বাঘা যতীন, কানাইলাল দত্ত, প্রফুল্ল চাকী, রাসবিহারী, নেতাজি— এই পাঁচ বিপ্লবীর জীবনী লিখবেন সুধীরবাবু। এর মধ্যে হঠাৎই নিহত হলেন গাঁধীজি, ১৯৪৮-এর ৩০ জানুয়ারি। তৎক্ষণাৎ তাঁর জীবনী লেখার প্রস্তাব আনলেন ভুবনবাবু, জানালেন: ১৫ দিনের মধ্যে ছেপে বেরোবে বইটি, অতএব লিখে ফেলতে হবে এখুনি। লেখা তো হলই, ১৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীগুরু লাইব্রেরি থেকে প্রকাশ পেল আমাদের বাপুজী। প্রয়াণের পর বাংলায় প্রথম জীবনী। ভিতরে গাঁধীজির নানাবিধ ছবি, ভূমিকায় হেমেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত লিখলেন: লেখক মহাত্মাজির কর্মবহুল জীবন এবং ‘‘অস্পৃশ্যতা বর্জ্জন ও হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যঘটিত বিষয় দুইটি খুব প্রাঞ্জল ভাবে বিবৃত করিয়াছেন।’’ ৭০ বছর পর বইটির নতুন সংস্করণ প্রকাশ করল পারুল প্রকাশনী।
আত্মকথা
উনিশটি মামলার আসামি লক্ষ্মণ তুকারাম গোলে নাশিক সেন্ট্রাল জেলে বিচারাধীন বন্দি থাকাকালীন তাঁর হাতে এসে পড়ে গাঁধীজির আত্মকথা। সাগ্রহে পুরো বইটা পড়ে উপলব্ধি করেন তিনি: সত্যই ঈশ্বর। সমস্ত অপরাধ কবুল করে চিঠি পাঠালেন বিচারককে, স্বেচ্ছায় সত্যের মুখোমুখি হওয়ার জন্যে কারাবাসের মেয়াদ কমল তাঁর। কারামুক্তির পর মহারাষ্ট্রের কারাগারে-কারাগারে গিয়ে আত্মকথা-সহ গাঁধীজির অন্য সাহিত্য পড়াচ্ছেন লক্ষ্মণ। আত্মকথা পাঠের পর এমন পরিবর্তিত মানুষের উদাহরণ সারা পৃথিবীতে ছড়ানো। ১৯২৫-এ গুজরাতি ভাষায় ‘নবজীবন’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হতে থাকে আত্মকথা ধারাবাহিক ভাবে, পাশাপাশি মহাদেব দেশাই-কৃত ইংরেজি অনুবাদ ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ সাপ্তাহিকে। দু’টিই গ্রন্থিত হয় ১৯২৭-এর মধ্যে। বাংলায় গুজরাতি থেকে সরাসরি অনুবাদ করেন সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত। পরে বিভিন্ন সময়ে আরও অনুবাদ প্রকাশিত হয়। এ বছর দে’জ পাবলিশিং থেকে দ্বিতীয় সংস্করণ বেরিয়েছে আত্মকথা অথবা সত্যের সন্ধানে-র, দশ বছর আগে প্রথম প্রকাশের পর, অনুবাদ শান্তিনিকেতনের ক্ষিতীশ রায়ের— পড়তে পড়তে মনে হয় যেন গাঁধীজি স্বয়ং বাংলায় নিজের কথা লিখেছেন। বইটির দীর্ঘ ও জরুরি উপক্রমণিকায় শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এটি সর্বোৎকৃষ্ট বঙ্গানুবাদ।
গাঁধীজির দর্শন
‘‘মহাত্মা গাঁধীর দর্শন বুঝতে হলে মানুষটিকে আগে বোঝা জরুরি। তাঁর দর্শন তাঁরই সৃষ্টি, আবার তিনি নিজে সেই দর্শনেরই সৃজন। এই দুটিকে পৃথক করা সম্ভব নয়, এই দুইয়ে মিলেই এক সামগ্রিক সত্তা।’’ বলেছিলেন স্বামী লোকেশ্বরানন্দ, ‘দ্য ফিলজ়ফি অব মহাত্মা গাঁধী’ শিরোনামে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিনাশ চন্দ্র স্মারক বক্তৃতায় (১৯৮৫)। অত্যন্ত সহজ ভাবে গাঁধীজির সমগ্র জীবনের নানা ঘটনা তুলে ধরে তাঁর দর্শন ব্যাখ্যা করেছিলেন, বুঝিয়েছিলেন তার প্রাসঙ্গিকতা। এত দিন রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের বুলেটিনে আবদ্ধ ইংরেজি বক্তৃতাটি এ বার সূত্রধরের উদ্যোগে গ্রন্থরূপ পেল একই নামে। রাধারমণ চক্রবর্তীর প্রয়োজনীয় প্রবেশক-সহ বইটি প্রকাশিত হচ্ছে আজ, গাঁধীজয়ন্তীর প্রাক্কালে।
শিল্পীর হাতে
১৯৩১ সাল। দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিতে লন্ডনে এসেছেন গাঁধীজি। মার্কিন ভাস্কর জো ডেভিডসন সময় চেয়ে নিলেন, গাঁধীর আবক্ষ মূর্তি তৈরি করবেন। পোজ় দেওয়া গাঁধীর না-পসন্দ, শিল্পীও তা চান না। গল্প করতে করতেই কাজ চলছে। গাঁধী বললেন, আরে আপনি তো কাদামাটি থেকে হিরো বানিয়ে ফেলেন। শিল্পীর উত্তর, তা বটে, তবে কোনও কোনও সময় উল্টোটাও হয়। দেশবিদেশে এমন বহু শিল্পীকে সময় দিয়েছেন গাঁধীজি। বেলেঘাটার হায়দরি মঞ্জিলে থাকার সময় ২৫ অগস্ট শিল্পী নিতাইচরণ পাল এসেছিলেন গাঁধীজির আবক্ষ মূর্তিতে চূড়ান্ত রূপদানের জন্য (সঙ্গের ছবি, অভীককুমার দে-র সৌজন্যে), ‘সাতচল্লিশের ডায়েরি’তে লিখেছেন নির্মলকুমার বসু। ১৯৬০-এ প্রয়াত নিতাইচরণের ৪৮৮ রবীন্দ্র সরণির স্টুডিয়ো পরে কিনে নেন বাদল পাল। তবে এই মূর্তিটির সন্ধান তাঁরও জানা নেই। বিখ্যাত ভাস্কর গোপেশ্বর পালের স্টুডিয়ো ‘জি পাল অ্যান্ড সন্স’-এ দেখা গেল সাতটি গাঁধীজির মূর্তি। সব থেকে পুরনোটি মাটির তৈরি, গোপেশ্বরের ভাইপো মণি পালের করা, প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের। আছে ছেলে সিদ্ধেশ্বর পালেরও, বলছিলেন সিদ্ধেশ্বরের শ্যালক ব্যোমকেশ পাল। তবে গাঁধীমূর্তির চাহিদা এখনও যথেষ্ট, জানা গেল শিল্পী বাদল পাল (৮৪) ও সুনীল পালের (৭৬) কাছে।
দময়ন্তী স্মরণ
‘‘প্রথমেই লিখি যে রাত্রে যত দেরিতেই ঘুম হোক কিছুতেই, কোনোমতেই কোনো ঘুমের ওষুধ খাবি না।… ঘুমের ওষুধকে আমার বড্ড, বড্ড ভয় করে, রুমি’’— বিদেশে পড়তে যাওয়া কনিষ্ঠা কন্যাকে সাবধান করে দিয়েছিলেন উদ্বিগ্ন পিতা বুদ্ধদেব বসু। তিনিই কন্যার নাম রেখেছিলেন ‘দময়ন্তী’, রবীন্দ্রনাথের দেওয়া ‘কাকলি’ নামটা পছন্দ ছিল না বলে। নরেশ গুহর ‘রুমির ইচ্ছা’ কবিতাতেও আছে রুমির বালিকাবেলার ছবি: ‘‘ঘড়িতে দুপুর বাজে, বাবা ডুবে যান কাজে,/তবু আর ফুরোয় না আমার সকাল।’’ বিদেশ থেকে ফিরে দময়ন্তী কানপুর ও উত্তরবঙ্গে অধ্যাপনা করলেও তাঁর উদ্যোগে বিকল্প প্রকাশনী এবং বিকল্প আর্ট শপ গত দুই দশকে সাহিত্য ও শিল্পচর্চায় স্বতন্ত্র ঘরানার জন্ম দিয়েছে। বু.ব-র নব্বইতম জন্মবর্ষে প্রদর্শনী, সিনেমা, নাটক, সেমিনারের আয়োজন, বিকল্প থেকে নানা গ্রন্থপ্রকাশ তাঁর স্মরণীয় কাজ। বাবা এবং মায়ের শতবর্ষ উদ্যাপনে তিনিই ছিলেন কান্ডারি। ১৯৪০-এর ৯ জানুয়ারি জন্ম, গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হলেন। তাঁকে নিয়ে ৭ অক্টোবর সন্ধে ৬টায় উত্তরপাড়ায় স্মরণ সভার আয়োজন করেছে জীবনস্মৃতি ও অহর্নিশ। স্মৃতিচারণে সোমনাথ মেহতা ও সুচরিতা গুহ।
মহিষাসুরমর্দিনী
মহালয়ার সকালে রেডিয়োয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শোনা বাঙালির সংস্কৃতিমজ্জায়। ১৯৩১-এ প্রথম সম্প্রচারিত আকাশবাণী কলকাতার এই বেতার-অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির গল্পই উঠে এসেছে ‘মহিষাসুরমর্দিনী: আ প্যাসেজ থ্রু টাইম’ (পরি: রাজীব গুপ্ত, ২০১১) তথ্যচিত্রে। ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি-র সদস্যরা ১৯৬৬-তে বানিয়েছিলেন আর একটি তথ্যচিত্র ‘দুর্গাপূজা ইন ক্যালকাটা’, উপদেষ্টা ছিলেন সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন। ফিল্মস ডিভিশন ও বিড়লা অ্যাকাডেমির আয়োজনে এই দু’টি ছবি দেখার সুযোগ ৫ অক্টোবর সন্ধে ছ’টায়, বিড়লা অ্যাকাডেমিতে। অন্য দিকে ৬ অক্টোবর সন্ধেয় অবন মহলে সৃজন চট্টোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’রই পুনর্নির্মাণ তরুণ শিল্পীদের কণ্ঠে। প্রথমার্ধে সৃজন গাইবেন দুর্গাবন্দনা, আগমনি গান ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, রবীন্দ্রসঙ্গীতে জয়তী চক্রবর্তী।
কবিতাবাড়ি
এই ধ্বংস প্রহরে স্বপ্ন দেখার স্পর্ধা করে কবিতাবাড়ি... নতুন আবৃত্তিদল ‘কবিতাবাড়ি’। নবীনরা এখানে শুধু আবৃত্তি শিখছেই না, নতুন আঙ্গিকের খোঁজ করছে। আবৃত্তিকে আধার করে পথনাটক, নাচ, গান, মাইম ইত্যাদি নানান শিল্পের ছায়া জুড়ে-জুড়ে যাচ্ছে তাতে, পরিবেশনে মিশে যাচ্ছে আলো আর শব্দের বিন্যাস। ‘‘অন্তর্বস্তুতে থাকছে সমসময়, তার দাবিতে মঞ্চে যেমন, তেমন রাস্তায় নেমেও পারফর্ম করবে কবিতাবাড়ি।’’ মনে করেন পল্লব কীর্ত্তনীয়া, তাঁর তত্ত্বাবধানেই ওদের প্রথম নিরীক্ষামূলক নিবেদন শিশির মঞ্চে ৫ অক্টোবর সন্ধে সাড়ে ৫টায়। গায়ক-চলচ্চিত্রকার পল্লবের আবৃত্তিচর্চা প্রয়াত আবৃত্তিকার অমিতাভ বাগচীর ছাত্র হিসাবে।
উৎসর্গ
সালটা ১৯৫৮। কলকাতায় মহাত্মা গাঁধীর প্রথম পূর্ণাবয়ব মূর্তি বসবে। বছর দেড়েক আগেই ভাস্কর দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী কাজ শুরু করেছিলেন, মূর্তি শেষও হয়েছে। চৌরঙ্গি ও পার্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে জেমস উটরামের অশ্বারূঢ় ব্রোঞ্জ মূর্তিটি, গাঁধীমূর্তির স্থান হবে সেখানেই। মূর্তি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হতে না হতে একের পর এক সমস্যা। কিছু দিন আগেই দাবি উঠেছিল, ওখানে বসাতে হবে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের মূর্তি। বিধানচন্দ্র রায়ের মন্ত্রিসভা সে-দাবি না-মানায় ক্ষোভ ছিলই। এ বার হল মূর্তির উপর রড-গাঁইতি নিয়ে আক্রমণ। শিল্পী আর তাঁর সহকর্মীরা বাধা দেওয়ায় বিশেষ ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এর থেকেও বড় সমস্যা, বসাতে গিয়ে মূর্তির ডান পা ক্ষতিগ্রস্ত, না-সারালে বসানোই যাবে না। এ দিকে জওহরলাল উদ্বোধন করবেন, দিন স্থির হয়ে গিয়েছে, বিধান রায়ও চাপ দিচ্ছেন। অথচ কলকাতায় তখন ব্রোঞ্জ অমিল। শেষ পর্যন্ত দেবীপ্রসাদ যা করলেন, শিল্প-ইতিহাসবিদ কমল সরকারের ভাষায় ‘‘যার নজির শিল্পকলার ইতিহাসে আর নেই’’ (কলকাতার স্ট্যাচু)। প্রয়াত পিতার মুখচ্ছবি ধরে রাখতে একটি আবক্ষ ব্রোঞ্জমূর্তি গড়েছিলেন দেবীপ্রসাদ, প্রতিশ্রুতি রাখতে সেই ‘মাই ফাদার’ মূর্তিটি গলিয়ে ঢেলে দিলেন জাতির জনকের পায়ে। ৩০ নভেম্বর ১৯৫৮ পাঁচ লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু মূর্তিটির আবরণ উন্মোচন করেন। তবে মাত্র বিশ বছরের মধ্যে মেট্রো রেলের কাজের জন্য মূর্তিটি সরানো হয় মেয়ো রোড ও ডাফরিন রোডের সংযোগস্থলের কাছে, আজও তা আছে সেখানেই।