কলকাতার কড়চা: পাগলামির কারুশিল্প

আজ যখন ধ্রুপদী গণ্ডির বাঁধাধরা গৎ ভেঙে শিল্পসাহিত্যের সৃষ্টিচিন্তাকে মুক্ত পরীক্ষানিরীক্ষায় জারিত করার চেষ্টা চলছে, তখন অসম্ভব প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন অবনীন্দ্রনাথ, কেউ-কেউ তো তাঁকে উত্তর-আধুনিকও বলছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:১৯
Share:

জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে তখন নবজাগরণের বিবিধ ভাবনা, দেশি-বিদেশি দুই ধারার ধ্রুপদী মননের প্রবল ঢেউ, তবু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিল্পরীতিতে ধ্রুপদীকে আশ্রয় করতে চাইলেন না। বেরিয়ে আসতে চাইলেন ধ্রুপদীর ঘেরাটোপ থেকে, যাত্রাপালার আঙ্গিক তাঁর লেখনীতে ছায়া বিস্তার করল। ব্রতকথার বয়ান, পালা-পার্বণের বিবিধ আচার, পাঁচালি পড়ার ঢং, কথ্য ভাষা, লোকজ গান, ফেরিওয়ালার ডাক ইত্যাদি সব মিলিয়ে ভিন্ন এক শিল্পভাষার ছন্দ পালা বা নাটিকাগুলিতে। আজ যখন ধ্রুপদী গণ্ডির বাঁধাধরা গৎ ভেঙে শিল্পসাহিত্যের সৃষ্টিচিন্তাকে মুক্ত পরীক্ষানিরীক্ষায় জারিত করার চেষ্টা চলছে, তখন অসম্ভব প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন অবনীন্দ্রনাথ, কেউ-কেউ তো তাঁকে উত্তর-আধুনিকও বলছেন। দেবদত্ত গুপ্তের ভূমিকা-সংবলিত তাঁর ছয়টি নাটকের সংকলন ফিরে-পড়ার আয়োজন করেছে প্রতিক্ষণ, সে প্রকাশন থেকেই আবার বেরোচ্ছে দেবদত্ত গুপ্তের লেখা খুদ্দুর যাত্রা/ অবন ঠাকুরের ছবি কাটাকুটির নতুন দুনিয়া। ১৯৩৪-৩৫ সালে রামায়ণ মহাকাব্যটি যাত্রার ঢঙে লিখেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ, নাম দিয়েছিলেন ‘খুদ্দুর যাত্রা বা খুদি রামলীলা’ (সঙ্গে তারই একটি পৃষ্ঠা), সেটির পাণ্ডুলিপি সংস্করণ প্রতিক্ষণ-ই প্রকাশ করেছিল আট বছর আগে। খবরের কাগজ থেকে, পঞ্জিকা থেকে, বিজ্ঞাপন বা বিভিন্ন বই থেকে ছবি কেটে কেটে লেখার সঙ্গে সেগুলি সেঁটে সেঁটে ‘কোলাজ’ করেছিলেন অবন ঠাকুর, এত শিল্পিত ও তাৎপর্যময় ছবির সেই ব্যবহার যে বিহ্বল হতে হয়। বিরাশি বছর আগে তাঁর এই ‘পাগলামির কারুশিল্প’ কতখানি আধুনিক ছিল, তারই নানা দিক উন্মোচন করেছেন দেবদত্ত, গত পাঁচ বছর ধরে এ-নিয়েই তাঁর গবেষণা, কোন সূত্রগুলি থেকে নিয়েছেন অবন ঠাকুর ‘খুদ্দুর যাত্রা’র ছবি, সে-সবেরও হদিশ দিয়েছেন তিনি। বাংলার শিল্প চর্চার উল্লেখযোগ্য দলিল বইটি।

Advertisement

জন্মদিনে গৌরী

Advertisement

বেঁচে থাকলে বয়স হত পঞ্চান্ন। তার চার মাস আগেই তিনটে বুলেট শেষ করে দিয়েছে জীবনযাত্রা। তা বলে চুপ করে যাননি গৌরী লঙ্কেশ। কথা বলে চলেছেন তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে। গৌরীর সাংবাদিক জীবনে নানা সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন, নিজের পত্রিকায় সম্পাদকীয়, তাঁর সাক্ষাৎকার, এমন নানা লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে দ্য ওয়ে আই সি ইট: আ গৌরী লঙ্কেশ রিডার (নবায়ন)। কলকাতায় বইটির উদ্বোধন হবে আজ বিকেল পাঁচটায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচ এল রায় প্রেক্ষাগৃহে। বাক্‌স্বাধীনতার সামনে লড়াইটা কেমন, সে আলোচনায় থাকবেন সাহিত্যিক অনিতা অগ্নিহোত্রী, সাংবাদিক পামেলা ফিলিপোজ, এবং বইটির সংকলক-অনুবাদক চন্দন গৌড়া। সঞ্চালনায় শিখা মুখোপাধ্যায়। থাকবে সাংবাদিকদের উপর সাম্প্রতিক আক্রমণের একটি সংক্ষিপ্ত দৃশ্য-প্রতিবেদন। আয়োজক যাদবপুরের স্কুল অব মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড কালচার, এবং সাউথ এশিয়ান উইমেন ইন মিডিয়া।

আনন্দের সন্ধানে

‘নদীকে দর্শন করার মধ্যে শুধু যে মানুষ পুণ্য অর্জন করে তাই নয়, সে পায় পরম এক আনন্দ। এই আনন্দের সন্ধানেই শুরু হয়েছিল আমার গঙ্গা পরিক্রমা।’ লিখেছেন চঞ্চলকুমার ঘোষ, তাঁর গঙ্গাদর্শন (আনন্দ) বইয়ে। গোমুখ থেকে গঙ্গাসাগর আড়াই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পেরিয়েছেন তিনি বহু বছরের পরিশ্রমে, কোনও কোনও জায়গায় ফিরে গিয়েছেন বার বার। বহু রূপে দেখেছেন গঙ্গাকে, দেখেছেন মানুষের বিচিত্র জীবন। সুন্দরলাল বহুগুণা তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, ‘গঙ্গার তীরে ঘুরতে ঘুরতে কী পেলে বেটা?’ উত্তর দিয়েছেন, ‘ভারতবর্ষকে দেখেছি।’ সুন্দরলালজি বলেছিলেন, ‘ঠিকই বলেছ। এ তো শুধু কোনও নদীকে দেখা নয়, পাঁচ হাজার বছরের ভারতবর্ষকে দেখা।’ সেই দেখার আনন্দের প্রকাশ তাঁর বইয়ের ছত্রে ছত্রে। শুধু কথায় নয়, অজস্র সাদাকালো আলোকচিত্রেও। চেনা-অচেনা নানা জায়গার কথা, নদীর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি। এ শুধু ‘গঙ্গাদর্শন’ নয়, সত্যিই এ বই হয়ে উঠেছে লেখকের ‘ভারতদর্শন’।

বিস্মৃত বিপ্লবী

স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালি বিপ্লবীদের মধ্যে অনেকেই থেকে গিয়েছেন বিস্মৃতির অতলে। যেমন নদিয়ার পোড়াগাছা গ্রামের বসন্ত বিশ্বাস। দিল্লিতে বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অগ্রজ বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর তত্ত্বাবধানে বোমা ছোড়েন বসন্ত। লক্ষ্য বড়লাট। কিন্তু তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ধরা পড়লে তাঁর ফাঁসি হয়। তাঁর জীবনকাহিনি নিয়ে ‘বহ্নিবালক বসন্ত’ নামে পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তাঁর নিকটাত্মীয় রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। পরিচালনায় শঙ্কর মজুমদার। বসন্তের ভূমিকায় নতুন মুখ অর্করঞ্জন ভট্টাচার্য। সংগীত পরিচালনায় সুজাতা গঙ্গোপাধ্যায়। কাহিনিসূত্র বেঁধেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ছবিটি মুক্তি পেল নন্দন ৩-এ। থাকছে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

বেহালার উৎসে

ভারতই যে বেহালার আদি উৎস, এবং তা সম্ভবত পাঁচ, অন্তত দেড়-দুই হাজার বছরের প্রাচীন, তার সমর্থনে যুক্তি জুগিয়েছিলেন কার্ল এঙ্গেল, এফ জে ফেটিস প্রমুখ কয়েকজন উনিশ শতকীয় সংগীত-ঐতিহাসিক এবং আরও সম্প্রতি শিশিরকণা ধরচৌধুরী। সেই গবেষণাকে নতুন ধারায় প্রবাহিত করতে প্রয়াসী হয়েছেন পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, পণ্ডিত বিষ্ণুগোবিন্দ যোগের সুযোগ্য শিষ্য। শিক্ষার্থী করে নিতে প্রাথমিক ভাবে অনিচ্ছুক ভি জি যোগ যে-কিশোরের জেদের কাছে হার মেনেছিলেন, দশক-অধিক কাল পেরিয়ে এক শেষরাতে তারই বাজনা শুনে তাকে করেছেন আলিঙ্গন। নাগরিক শিক্ষার্থীকুল ছাড়াও পল্লব তাঁর ‘প্রয়াস’ প্রকল্পে নদিয়ার বগুলায় প্রত্যন্ত গ্রামের ১৫টি শিশুর ভরণপোষণসহ সংগীত শিক্ষার সমস্ত ভার তুলে নিয়েছেন। বিগত পাঁচ বছরের মতো ৩১ জানুয়ারি গুরুর প্রয়াণদিবসে কলামন্দিরে স্মরণানুষ্ঠান ‘গুরুপ্রণাম’, পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভাট বাজাবেন মোহনবীণা, পল্লব নিজে বাজাবেন বেহালা। তবলায় রামকুমার মিশ্র ও সমর সাহা। প্রধান অতিথি বিদুষী শিশিরকণা ধরচৌধুরী।

প্রাক্তনী সম্মান

সম্প্রতি আশি বছরের জন্মদিনে অনেক শ্রদ্ধার্ঘ্য আর সম্মাননায় তাঁর দুই হাত ভরিয়ে দিয়েছে শহর। ভারতীয় সাহিত্যে অবদানের জন্য গত কয়েক মাস ধরে বাংলা ভাষার এই লেখককে একের পর এক পুরস্কার দিয়ে গিয়েছে মুম্বই, ভুবনেশ্বর, বেঙ্গালুরু। নবনীতা দেব সেন অবশ্য বলছিলেন, প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী সংঘের দেওয়া ‘অতুলচন্দ্র গুপ্ত বিশিষ্ট প্রাক্তনী সম্মান’টিতেই তিনি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছেন। ‘হাজার হোক, নিজের কলেজ বলে কথা,’ হাসলেন নবনীতা। হাসির অবশ্য অন্য কারণও ছিল। ২০১৪ সালে চালু হওয়া এই সম্মানটি পেয়েছেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, অমর্ত্য সেন, মিহিরচন্দ্র রক্ষিত, সুকান্ত চৌধুরীর মতো দিকপাল ছাত্ররা। এত দিনে সেই পুরুষপ্রাধান্য ভাঙল। এ কি ট্রাকবাহনে ম্যাকমাহনে পৌঁছনোর থেকে কম কৃতিত্বের?

সুনীল-স্মরণ

‘সুনীল নেই, তা সত্ত্বেও সুনীলের লেখা নাটক হচ্ছে। এমনকী আপনারা এত মানুষ দেখতেও এসেছেন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’ বলছিলেন স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। সম্প্রতি তপন থিয়েটারে লিটল ম্যাগাজিন ফোরাম-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণ সন্ধ্যা।’ অজস্র মানুষের সমাগম। কবি ও নাট্য-পরিচালক প্রদীপ দাশগুপ্তের পরিচালনায় অভিনীত হল ‘এক আশ্রমে রক্তপাত’— সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত শেষ নাটক। মঞ্চ পরিকল্পনায় যোগেন চৌধুরী। সঙ্গে ছিল সুপরিচিত কাব্যনাটক ‘রাজসভায় মাধবী’। ফোরামের অন্যতম উপদেষ্টা পবিত্র সরকার উপস্থিত ছিলেন। আর ছিল গোটা সন্ধ্যার এক স্মৃতিমেদুরতা ও সুনীল-স্মরণ।

উদ্বাস্তু-স্মৃতি

১৯৪৭। দেশভাগ, দাঙ্গা। পূর্ব পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তুর ঢল নামল পশ্চিমবঙ্গে। তারই একাংশ সরকারি পুনর্বাসন-পরিকল্পনায় না গিয়ে কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে জোর করেই ঘর বাঁধলেন— নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই গড়ে নেওয়ার অদম্য প্রেরণায়। গত দুই দশকে সেই সব ‘উদ্বাস্তু কলোনি’র চেহারা আমূল বদলে গিয়েছে, তা পরিণত হয়েছে আধুনিক নাগরিক অঞ্চলে। লেখক-আলোকচিত্রী নাজেস আফরোজ উদ্বাস্তু পরিবারের পুরনো অ্যালবাম থেকে খুঁজে বেরিয়েছেন ‘স্মৃতি’, পাশাপাশি রেখেছেন একই জায়গার আজকের ছবি। আছে স্মৃতিকথা, দেশ থেকে সঙ্গে করে নিয়ে আসা নানা জিনিস। সব মিলিয়ে ফুটে উঠেছে সাত দশক আগের যাত্রাপথ। গ্যেটে ইনস্টিটিউট/ ম্যাক্সমুলার ভবনের সহযোগিতায় ১০ লেক টেরাসে যদুনাথ ভবন মিউজিয়াম অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টারে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলছে এই প্রদর্শনী ‘আনসার্টেন ল্যান্ডস্কেপ/ রেফিউজি মেমোরিজ অব কলকাতা’। এরই অঙ্গ হিসাবে ৩০ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায় সেন্টারে কলকাতার উদ্বাস্তু-স্মৃতি বিষয়ে আলোচনা: থাকবেন দেবব্রত দত্ত, অঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়, মৈনাক বিশ্বাস। সঞ্চালনায় নাজেস আফরোজ। সঙ্গে ১৯৫০-এর দশকে বিজয়গড়ের ছবি।

ইতিহাস উৎসব

‘মাসিমা মালপুয়া খামু’ খ্যাত ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ও যে স্বাধীনতা আন্দোলনে নাম লিখিয়েছিলেন সে কথা ক’জন মনে রেখেছেন! দিদি প্রকৃতিদেবীই ছিলেন ওঁর বিপ্লবী কার্যকলাপের মূলে। ঢাকায় স্কুলে পড়ার সময় দীনেশ গুপ্তের সঙ্গে ওঁর আলাপ হয়, যোগ দেন অনুশীলন সমিতিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাপ বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সঙ্গে এবং ওঁর প্রিয় ছাত্রও হয়ে ওঠেন তিনি। এই সব বিষয়কে কেন্দ্র করেই আয়োজিত হয়েছে একটি প্রদর্শনী ‘হাসি শুধু হাসি নয়’ শীর্ষকে।
এ বারেও সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদ এবং সাবর্ণ সংগ্রহশালার উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে ত্রয়োদশ ইতিহাস উৎসব ও প্রদর্শনী, বেহালার সপ্তর্ষি ভবনে। সূচনা ৪ ফেব্রুয়ারি। উৎসবের মূল আকর্ষণ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের নানা দিক। থাকছে ওঁর ব্যবহৃত পানের ডিবে, লেখার প্যাড, কলম, চশমা, যাত্রার পোস্টার, বই, অর্জিত পুরস্কার। সঙ্গে সাবর্ণ পরিবারের বিচিত্র গয়নার বাক্স এবং সাবর্ণ পরিবারকে বিভিন্ন সময়ে লেখা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, প্রেমেন্দ্র মিত্র বা প্রমথনাথ বিশী প্রমুখের চিঠি। থাকছে ঐতিহ্যের পদযাত্রা। প্রকাশ পাবে ওদের হাতে লেখা পত্রিকা সপ্তর্ষি–র ২৯তম সংখ্যা। এ বারের প্রদর্শনীর থিম দেশ তাইল্যান্ড। প্রদর্শনী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (১০-৯)।

ইয়ারবুক

হলুদ পোস্টকার্ডে নির্ভুল ঠিকানা ছাপার আবেদন... এ বারের সাহিত্যের ইয়ারবুক/ ঠিকানাপঞ্জি ২০১৮-র প্রচ্ছদে, তাতে একেবারে উপরে লেখা: বাংলা সাহিত্যের গুগল। গুগল-ই বটে, যখনই কোনও সাহিত্যিক-শিল্পী, পত্রপত্রিকা, প্রকাশনা সংস্থা-র বিস্তারিত যোগাযোগ দরকার, দ্বারস্থ হতেই হবে এ-বইয়ের। হাতবদলও ঘটে গেল, পূর্বতন মানুষটি, জাহিরুল হাসান দায়িত্ব তুলে দিলেন নতুন সম্পাদক বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের হাতে। ‘উনিই ঠিক লোক’, মনে হয়েছে জাহিরুলের। আর সম্পাদকের কথায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিশ্বনাথবাবু: ‘শেষ পর্যন্ত আমাকেই তিনি তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচন করলেন।’ প্রত্যাশা আর শুভেচ্ছা দুই-ই রইল পাঠকদের তরফে।

পরবাসে

আমি বাংলার সন্তান। আমি যা কিছু শিখেছি বা করেছি সব কিন্তু এই বাংলার জন্যেই। সেই কারণে আমি গর্বিত’, বলছিলেন স্বদেশ চট্টোপাধ্যায়। জন্ম বাঁকুড়ার সোনামুখীতে। পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা বেলুড় বিদ্যামন্দির আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই ত্রিবৃত্ত থেকেই ওঁর বিশ্বযাত্রা। কিন্তু ভুলে যাননি নিজের শিকড়ের টানকে। স্ত্রী এবং এক বছরের শিশুকন্যাসহ ১৯৭৮-এ নভেম্বরের প্রবল ঠান্ডায় যখন আমেরিকার বিমানবন্দরে নামেন তখন ওঁর হাতে ছিল মাত্র ৩৫ ডলার। মনে ছিল শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা! ক্রমে থিতু হয়েছেন ক্যারোলিনাতে। নিজের স্থান করে নিয়েছেন ও-দেশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রণেন সেনের সময়ে সম্পাদিত হয়েছিল দু’দেশের মধ্যে পরমাণু চুক্তি। হোয়াইট হাউসের ‘ইস্ট রুমে’ ২০০৮-এর ৮ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয় সেই চুক্তি। ইন্ডিয়া-ইউকে ফ্রেন্ডশিপ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি এই বিষয়ে মধ্যস্থতা করেছিলেন। দু’দেশের মধ্যে সেই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে ওঁর মনে হচ্ছিল কিছু একটা করা উচিত। রণেন সেন সে-দিন বলেন, ‘স্বদেশ, সোনামুখী থেকে হোয়াইট হাউস, এই জার্নিটা কেমন! এ বারে লিখে ফেলো’। প্রথমে ইংরেজিতে প্রকাশ পায় বিল্ডিং ব্রিজেস। তারই বাংলা অনুবাদ পরবাসে আমার দেশ (আনন্দ) প্রকাশ পেল স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে, ওবেরয় হোটেলে একটি অনুষ্ঠানে। বইটি প্রকাশ করেন রণেন সেন এবং সুলভ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা বিন্ধ্যেশ্বর পাঠক। বইটিতে পাঁচটি অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে দুই দেশের সম্পর্কের নানা দিক, ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন