কলকাতার কড়চা: বাঙালির কালি কলম মন

কিন্তু খ্যাপারা যে চিরকালই পরশপাথর খুঁজে ফেরেন। তাঁরা ঠিক খুঁজেপেতে আগলে রেখেছেন কাজল কালির শিশি, তার এনামেল বোর্ড, পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের কাটিং (সঙ্গের ছবি, অপূর্বকুমার পাণ্ডার সৌজন্যে)।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৭
Share:

কাজল কালী ব্যবহার করে সন্তোষ লাভ করেছি। এর কালিমা বিদেশী কালীর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’’ রবীন্দ্রনাথের প্রশংসাধন্য কাজল কালির কালিমা আম বাঙালির ঝরনা কলম থেকে নিঃসৃত হয়ে কত চিঠিপত্র পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠা এমনকী শার্টের বুকপকেট যে কলঙ্কিত করেছে তার হিসেব কেউ রাখেনি। কিন্তু খ্যাপারা যে চিরকালই পরশপাথর খুঁজে ফেরেন। তাঁরা ঠিক খুঁজেপেতে আগলে রেখেছেন কাজল কালির শিশি, তার এনামেল বোর্ড, পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের কাটিং (সঙ্গের ছবি, অপূর্বকুমার পাণ্ডার সৌজন্যে)। এমন নানা সংগ্রাহকের ঝুলিতে আছে কত রকমের কালির হদিস, কেউ রেখেছেন পেন্সিল-কলম, কেউ বা দুষ্প্রাপ্য বই-পুঁথি। কালি-কলম-মন, এই ত্র্যহস্পর্শেই তো লেখালিখির সূচনা। এই সব সংগ্রাহকের জমানো পুঁথি-দলিল-পাণ্ডুলিপি-চিঠি-ছাপা বই-পত্রিকায় বাঙালি মননের যে বিচিত্র প্রকাশ, তাকে তুলে ধরতেই এ বার শ্রীঅরবিন্দ ভবনের উপস্থাপনা ‘দুই শতাব্দীর সন্ধিক্ষণে কলকাতা ও শ্রীঅরবিন্দ/ পুরনো কলকাতা বিষয়ক প্রদর্শনী’। বিষয়: ‘কালি, কলম, মন’ (মুখ্য উপদেষ্টা প্রসাদরঞ্জন রায়)। থাকবে হাতে-লেখা পত্রিকা, বাংলা মুদ্রণের দুর্লভ কিছু নমুনা, বিয়ের পদ্য, নিমন্ত্রণপত্র, কাঠের ব্লক ও হরফ, লেখার নানা উপকরণ। যোগ দিচ্ছে কলকাতা কথকতা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, আলিপুর জাজেস কোর্ট, অরোরা ফিল্মস, পিএম বাগচী, দেব সাহিত্য কুটির, পত্রভারতী এবং কিঞ্জল পত্রিকা। শেক্সপিয়র সরণির শ্রীঅরবিন্দ ভবনে ৩ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায় এর উদ্বোধন করবেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, চলবে ৬ পর্যন্ত, রোজ ৩-৮টা। পাঁচ জন প্রবীণ সংগ্রাহককে সম্মান জানানো হবে— সুশীল চট্টোপাধ্যায়, গৌতম মিত্র, পরিমল রায়, সুনীল বিশ্বাস ও অমিত রায়। প্রকাশিত হবে চন্দ্রনাথ ও মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বই তিনটে, ছটা, নটায় (কথোপকথন)। জীবন থেকে যা হারিয়ে গিয়েছে— চিলেকোঠা, ফেরিওলার ডাক, রোয়াক, যৌথ পরিবার, বেতার জগৎ, এ সব নিয়েই এই বই।

Advertisement

পায়ে পায়ে

Advertisement

সন্ধে নামলে ট্যাক্সি চালকেরা প্রায়ই মেটিয়াবুরুজ যেতে চান না। কলকাতার বহু শিক্ষিত মানুষ এখনও শহরের এই রকম কয়েকটি এলাকার নামে অকারণেই শঙ্কিত হয়ে পড়েন। এই ভয়, অবিশ্বাস আর বিদ্বেষের জন্ম পড়শির সঙ্গে অপরিচয় থেকে। ধর্মের নামে দেশজোড়া বৈরিতা আর হানাহানিও এর আর এক কারণ। অবধের ক্ষমতাচ্যুত বাদশা ওয়াজ়িদ আলি শাহের স্মৃতিজড়ানো মেটিয়াবুরুজ কিন্তু নানা কিংবদন্তি, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের আকর। অপরিচয়ের দূরত্ব ঘুচিয়ে পড়শির সঙ্গে চেনা-জানার সেতু গড়তে ‘সহমন’ আয়োজন করেছে ‘পায়ে পায়ে মেটিয়াবুরুজ’। ৬ জানুয়ারি বেলা ১১টায় সুরিনাম ঘাট থেকে যাত্রা শুরু।

বিষয় বিপন্নতা

জনস্মৃতি ক্ষণস্থায়ী, তবু ‘আরবান নকশাল’ শব্দবন্ধের অভিঘাত পুরনো হয়নি এখনও। বিশেষত এই সময়ে, যখন বাক্‌স্বাধীনতায়, শিল্পীর স্বাধীনতায় নিয়ত হুল ফোটাচ্ছে ক্ষমতাসীন রাজনীতি ও রাষ্ট্রযন্ত্র। তাঁর নতুন উপন্যাস কাট: দ্য ডেথ অ্যান্ড লাইফ অব আ থিয়েটার অ্যাক্টিভিস্ট-এ (ব্লুমসবেরি) এই বিপন্নতাকেই বিষয় করেছেন শ্রীময়ী পিউ কুণ্ডু। মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে এক একদা-বিখ্যাত মরাঠি নাট্যপরিচালকের মৃত্যু, মর্গে বেওয়ারিশ হয়ে পড়ে থাকার খবর নাড়া দিয়েছিল শ্রীময়ীকে। তাঁর উপন্যাসের শুরুও অমিতাভ কুলশ্রেষ্ঠ নামে এক বিতর্কিত নাট্যব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে, শিল্পীর আজীবন লড়াই ফুটে ওঠে অন্যান্য চরিত্র-চোখে। আদ্যন্ত রাজনৈতিক এই উপন্যাস এরই মধ্যে রূপ পেয়েছে নাটকে, ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-র ছাত্রছাত্রীদের রূপায়ণে জানুয়ারিতে তার অভিনয় দিল্লিতে, ভারত রঙ্গমহোৎসব-এর প্রাক্কালে। বইটির উদ্বোধন লেখিকার নিজের শহর কলকাতাতেই, ৪ জানুয়ারি সন্ধে ৭টায়, পার্ক হোটেলে। শ্রীময়ীর সঙ্গে কথায় থাকবেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, পাঠে একাবলী খন্না, সোহিনী সেনগুপ্ত ও সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

আলোকচিত্র দিবস

বাংলায় ফটোগ্রাফি চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ তিনি। ‘বেঙ্গল ফটোগ্রাফিক সোসাইটি’র প্রথম ভারতীয় সম্পাদক। অথচ পুরাবিদ রাজেন্দ্রলাল মিত্রের তুলনায় আলোকচিত্রী রাজেন্দ্রলাল প্রায় অনালোচিত। ২ জানুয়ারি বই-চিত্র গ্যালারিতে রাজেন্দ্রলালের সেই কীর্তির স্মরণে পালিত হয় ‘বেঙ্গল ফটোগ্রাফি ডে।’ এ বারেও ২ জানুয়ারি সন্ধে সাড়ে ৫টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন মৃণাল ঘোষ। আলোচনায় ‘দ্য থার্ড আই’ সংস্থার অতনু পাল। ২-৫ জানুয়ারি প্রতি দিন ৩-৭টা আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ছবি দেখাবেন সিদ্ধার্থ বিশ্বাস, পৃথ্বীকান্ত রায়, দেবীপ্রসাদ রায় ও অন্যরা।

আকাশের মুখ

রাতের আকাশ হারিয়ে যাচ্ছে। অবাঞ্ছিত আলোয় আর বায়ুদূষণে যতটা, তার থেকেও বেশি আমাদের নির্লিপ্তিতে। আকাশ দেখি না। কিন্তু রহস্যের গভীরতায় আর সৌন্দর্যে তার তুলনা এই মাটির পৃথিবীতেও যে খুব বেশি নেই তা জানান দিতেই যেন ৪-৬ জানুয়ারি (২-৮টা) গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় পশ্চিমবঙ্গের শখের জ্যোতির্বিদদের তোলা আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে স্কাই ওয়াচার্স অ্যাসোসিয়েশন, কলকাতা: ‘আইজ় অন দ্য স্কাই’। প্রদর্শনীর অন্যতম বিষয় পৃথিবী-সহচর চাঁদ। মহাকাশ এবং অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফি সম্পর্কে কৌতূহলীদের নানা জিজ্ঞাসার উত্তর দেবেন সদস্যরা, পাশাপাশি থাকবে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার নানা উপকরণ, গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার সম্ভার।

সমতট ৫০

n সমতট এমনই এক সাময়িক পত্রিকা, যা সমাজ সাহিত্য শিল্পকলা সঙ্গীত খেলাধুলো বিনোদন— কোনও কিছুকেই ঠাঁই দিতে পিছপা হয়নি কখনও। পাঠকের কাছে এ-পত্রিকা আদতে ‘বহুভিত্তিক মত প্রকাশের মঞ্চ হয়ে ওঠা।’ অর্ঘ্যকুসুম দত্তগুপ্তের সম্পাদনায় পত্রিকার সূচনা এপ্রিল ১৯৬৯-এ, তিনি চেয়েছিলেন পত্রিকাটি হবে দস্তুর মতো নিরপেক্ষ, ‘‘যেখানে নানা মতবাদের লেখক তাঁদের বিশ্বাসের কথা যুক্তিসিদ্ধভাবে লিখতে পারবেন।’’ প্রথমে দ্বিভাষিক হলেও পরে প্রধানত এই বাংলা পত্রিকার বিস্তার শুধু এ দেশে নয়, প্রবাসেও। পত্রিকাটির পঞ্চাশ বছর পূর্তি হবে ২০১৯-এ, সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্‌যাপন ইজেডসিসি-তে ৬ জানুয়ারি বিকেল ৫টায়। বলবেন অমর্ত্য সেন ও নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। প্রকাশ পাবে বিশেষ একটি যুগ্ম সংখ্যা, সেখানে পুনঃপ্রকাশে অম্লান দত্ত, অরুণকুমার বসু, ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ, আবদুর রউ়ফ-এর মতো লেখকদের রচনার সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন আজকের পাঠক, পাশাপাশি থাকছে নতুন লেখাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন