Calcutta News

কলকাতার রাস্তায় মহিলা বক্সারকে হেনস্থা, অভিযোগের ২ ঘণ্টার মধ্যেই পাকড়াও ৩ অভিযুক্ত

শুক্রবার সকালেই ঘটনাটি ঘটেছে মোমিনপুরে। সম্প্রতি তাইওয়ানে পেশাদার বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা বক্সার সুমন কুমারীর বাড়ি খিদিরপুর এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৯ ১৯:১৫
Share:

সুমন কুমারী। —নিজস্ব চিত্র।

দিনদুপুরে পুলিশের সামনেই আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এক মহিলা বক্সারকে হেনস্থার অভিযোগ উঠল শহরে। চোখের সামনে সব দেখেও হেনস্থাকারীকে পাকড়াও করা দূরে থাক, ওই বক্সার সাহায্য চাইলে তাঁকে থানায় যাওয়ার ‘পরামর্শ’ দিয়ে দায় এড়িয়েছেন এক পুলিশকর্মী! এর পরই গোটা ঘটনার বিবরণ দিয়ে ওই মহিলা বক্সার তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন। সেই পোস্ট দেখে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয় সাউথ পোর্ট থানায়। তার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই তিন অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ।

Advertisement

শুক্রবার সকালেই ঘটনাটি ঘটেছে মোমিনপুরে। সম্প্রতি তাইওয়ানে পেশাদার বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা বক্সার সুমন কুমারীর বাড়ি খিদিরপুর এলাকায়। তিনি রাজ্য সরকারের কৃষি দফতরের অস্থায়ী কর্মী। তাঁর অভিযোগ, অন্য দিনের মতো এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি নিজের স্কুটিতে চেপে মহাকরণে তাঁর অফিসের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময় মোমিনপুর মোড়ের কাছে এক যুবক তাঁর সামনে এসে পড়েন। সুমন বলেন, ‘‘ওই যুবক বাস ধরার চেষ্টা করছিলেন। আমার স্কুটির সামনে দিয়ে যেতে গিয়ে সামান্য আটকে যান। আর তাতেই তিনি মেজাজ হারিয়ে বাসে ওঠার সময় আমার উদ্দেশে গালিগালাজ শুরু করেন।’’ সুমনের অভিযোগ, তিনি তখন প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেন, তত ক্ষণে বাসটি ছেড়ে দেয়।

সুমন তখন বাসটির পিছন পিছন যান। পরের স্টপেজে বাস থামলে তিনি স্কুটি থামিয়ে ওই যুবককে প্রশ্ন করেন, কেন তিনি গালিগালাজ করেছেন? সুমনের অভিযোগ, প্রতিবাদ করতেই ওই যুবক বাস থেকে নেমে এসে তাঁকে মারার চেষ্টা করেন। তাঁর গলা চেপে ধরেন। সুমন বলেন, ‘‘যখন ওই যুবক আমার গলা চেপে ধরেছেন, তখন কয়েক মিটার দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক পুলিশ কর্মী। আমি তাঁর কাছে সাহায্য চেয়ে চিৎকার করি। কিন্তু তিনি কোনও সাহায্য না করে আমাকে বলেন থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাতে। তিনি কোনও সাহায্য করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।” পুলিশের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে সুমন নিজের মতো করে ওই যুবককে প্রতিরোধ করেন। ফলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় দু’জনের মধ্যে। অভিযোগ, তখনও নিছক দর্শক ছিলেন ওই পুলিশ কর্মী। বরং এলাকার মানুষ ছুটে এসে দু’জনকে ছাড়িয়ে দেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: কসবা থানার এসআই-কে জাত তুলে কটাক্ষ, কনস্টেবলের বিরুদ্ধে এফআইআর

এর পর নিজের দফতরে পৌঁছন সুমন। তাঁর অভিজ্ঞতা জানিয়ে নিজের সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেন।

আরও পড়ুন: গ্রেফতার করুন অর্জুনকে, ভাটপাড়ায় গিয়ে পুলিশকে নির্দেশ ববির, পাল্টা চ্যালেঞ্জ সাংসদের

ক’দিন আগেই কলকাতার রাস্তায় হেনস্থার শিকার হন মডেল এবং অভিনেত্রী ঊসষী সেনগুপ্ত। তিন তিনটি থানা তাঁকে ঘোরায়, গড়িমসি করে অভিযোগ নিতে। সেই ঘটনার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন নগরপাল অনুজ শর্মা নিজে। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রতিটি থানা যেন সতর্ক হয় যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। এর আগে নগরপাল অধস্তন আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছিলেন থানার পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে হবে ট্রাফিক পুলিশকেও। তাতে বহু ক্ষেত্রেই দ্রুত কোনও ঘটনার হস্তক্ষেপ করতে পারবে পুলিশ। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। কিন্তু নগরপালের নির্দেশের পরেও যে আদৌ বদলায়নি শহরের পুলিশ বাহিনীর নিচু তলার কর্মীদের মনোভাব, তা প্রমাণিত এ দিনের ঘটনায়।

সুমন অবশ্য আস্থা রেখেছেন কলকাতা পুলিশের উপর। তিনি আশাবাদী এই ঘটনার প্রতিকার হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে সুমনের পোস্ট দেখে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। ডিসি পোর্ট ওয়াকার রাজা বলেন, “ওই মহিলা বক্সারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তিনি সাউথ পোর্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪, ৫০৬, ৫০৯ এবং ১১৪ ধারায় মামলা রুজু করেছি।” অভিযোগ দায়ের করার দু’ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ রাহুল শর্মা, শেখ ফিরোজ এবং ওয়াসিম খান নামে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “ওই মহিলা বক্সার থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগে পুলিশের উপস্থিতিতে ঘটনা ঘটেছে, এমন কোনও কথা উল্লেখ করেননি। তবে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তা উল্লেখ করে থাকতে পারেন। আমরা বিষয়টা খতিয়ে দেখছি।”

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন