গুজবের জেরে গণপিটুনির ঘটনা শুরু হয়েছিল দক্ষিণ শহরতলিতে। শুক্রবার রাতে সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে খাস কলকাতাতেই। ফুলবাগানের গোখানায় এক যুবককে গণপিটুনির পরে আক্ষরিক অর্থেই নড়ে বসেছে লালবাজার। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দিন ঠিক কী ঘটেছিল এবং পুলিশ কী কী ব্যবস্থা নিয়েছিল, সে ব্যাপারে ফুলবাগান থানার ওসি-র কাছে সবিস্তার রিপোর্ট তলব করেছেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। ফুলবাগান থানার ওসি পীযূষ কুন্ডু সোমবার বিকেলে সেই রিপোর্ট পাঠিয়েছেন।
লালবাজারের খবর, সে দিন খবর শোনার পরেই যে অফিসারেরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন, তাঁদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। কিন্তু শীর্ষ কর্তাদের প্রশ্ন, দক্ষিণ শহরতলির ঘটনার পরে পুলিশকে সচেতনতার প্রচার চালাতে বলার পরেও ফের কেন গণপিটুনির ঘটনা ঘটল? কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সচেতনতার প্রচার এবং আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না, তা জানার প্রয়োজন রয়েছে। কোথাও খামতি থাকলে তা শুধরোতে হবে।’’ পুলিশের একাংশের দাবি, এখনও অনেক থানা এই গুজব ঠেকানোয় সক্রিয় নয়। ফুলবাগানের ঘটনাকে সামনে রেখে ওই থানাগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে। এমন ঘটলে দ্রুত অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো প্রয়োজন। ফুলবাগানে চার জন পুলিশকর্মীও মার খেয়েছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকেই এই শিশু চোরের গুজব রটানো শুরু হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। যার প্রভাব পড়েছিল রাজাবাগান, আনন্দপুর, ঠাকুরপুকুরের মতো দক্ষিণ ২৪ পরগনা লাগোয়া এলাকাগুলিতেও। তখন থেকেই সচেতনতার প্রচার চালাতে বলা হয়েছিল। গত শনিবার ওসি এবং ডিসি-দের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন নতুন পুলিশ কমিশনার (সিপি) অনুজ শর্মা। তার আগের রাতের ঘটনার প্রসঙ্গও বৈঠকে উঠেছিল। যার প্রেক্ষিতে সিপি কয়েক দফা নির্দেশও দেন।
পুলিশের খবর, ওসি-দের নিজস্ব থানা এলাকায় জনসংযোগ বাড়াতে বলেছেন সিপি। তাঁর নির্দেশ, থানা এলাকার বিভিন্ন বাসিন্দার সঙ্গে ওসি বা অতিরিক্ত ওসি যেন নিজেরা ব্যক্তিগত স্তরে যোগাযোগ রাখেন। তার ফলে তিনি যেমন নিজের পরিচিতি বাড়াতে পারবেন, তেমনই ওই বাসিন্দারা কোনও খবর জানতে পারলে সরাসরি ওসি বা অতিরিক্ত ওসি-কে জানাবেন। পুলিশকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, অনেক সময়ে বাসিন্দারা ওসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে ভয় পান। নিচুতলার কর্মীদের খবর দিলে তাঁদের অনেকেই খবরকে গুরুত্ব দেন না। তার ফলে সেই খবর ওসি পর্যন্ত পৌঁছয় না। লালবাজারের এক কর্তা জানান, ওসি বা অতিরিক্ত ওসি-র মধ্যে যে কোনও এক জনকে রাতে থানাতেই থাকতে বলেছেন সিপি।
পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতা শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশ দিয়েছেন সিপি। কিছু ঘটলে ওসি-কে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে গুজবের খবর পেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না-আসা পর্যন্ত থানার এক জন আধিকারিককে ঘটনাস্থলে থাকতে বলেছেন পুলিশ কমিশনার। নৈশ টহলদারির ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় হতে বলেছেন। কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে আয়ত্তের বাইরে না যায়, তার জন্য রাতে ওসি বা অতিরিক্ত ওসি-কে থানায় থাকার ব্যাপারেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে লালবাজারের তরফে।