Fire Crackers

পাড়ায় মিলছে চকলেট বোমা থেকে কালীপটকা, খাঁ খাঁ বৈধ বাজারই

আদালতের নির্দেশ, শুধু কালীপুজোর রাতেই ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সবুজ বাজি ফাটানো যাবে। এ বছর কালীপুজো আজ, সোমবার, অর্থাৎ ২০ অক্টোবর। আজ রাত ১০টার পরে বাজি ফাটারই কথা নয়।

নীলোৎপল বিশ্বাস, চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২০
Share:

অবাধে: রাস্তার পাশেই বিক্রি হচ্ছে বাজি। রবিবার, উল্টোডাঙার মুচিবাজারে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

এ যেন পাড়ায় পাড়ায় বারুদের পাহাড়! কোথাও চৌকি পেতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বেআইনি বাজি, কোথাও মাটিতে ত্রিপল বিছিয়ে চলছে নিষিদ্ধ বাজির কেনাবেচা। এমনকি, যিনি সারা বছর অন্য ব্যবসা চালান কিংবা জামাকাপড় বিক্রি করেন, সেখানেও এই সময়ে সে সব সরিয়ে চলছে বাজি বিক্রি। কোনওটিরই পুলিশি অনুমতি থাকার কথা নয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, শহরে পুলিশের উদ্যোগে যেখানে বৈধ বাজি বাজার হচ্ছে, সেখানে পাড়ায় পাড়ায় এমন বিপজ্জনক বাজির ব্যবসা চলে কী ভাবে? তা হলে কি পুলিশের নজরদারি শূন্য?

লালবাজারের কর্তারা অবশ্য দাবি করছেন, এমন ভাবে বাজি বিক্রির ব্যাপার তাঁদের অজানা নয়। এ জন্যই কড়া হাতে ধরপাকড় চালানোহচ্ছে। যার ফল, কালীপুজোর আগের এক সপ্তাহের নিরিখে গত বছর যত বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, এ বার সেই সংখ্যা ছাপিয়েগিয়েছে। কলকাতা পুলিশের হিসাব বলছে, গত ১০ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৫৬১৮ কেজি বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৯ জনকে। এখনও পর্যন্ত রুজু হয়েছে ৪২টি মামলা। গত বছর কালীপুজো ছিল ৩১ অক্টোবর।লালবাজারের খবর, তার আগে ২১ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিশেষ অভিযানে মোট ৩৯৩৪.৬৯ কেজি বাজি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ৩৫ জনকে। প্রশ্ন উঠেছে, এ বার পুরনো সব হিসাব ছাপিয়ে যাচ্ছে যেখানে, সেখানে পুলিশ কেন আগেভাগে সতর্ক হল না? পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘এটা আদতে প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধ। ব্যবসার নামে মারণ-যজ্ঞের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।’’

প্রশ্ন উঠছে গত ১৪ অক্টোবর থেকে কাল, মঙ্গলবার ২১ অক্টোবর পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ বৈধ বাজি বাজারের অনুমতি দেওয়া নিয়েও। আদালতের নির্দেশ, শুধু কালীপুজোর রাতেই ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সবুজ বাজি ফাটানো যাবে। এ বছর কালীপুজো আজ, সোমবার, অর্থাৎ ২০ অক্টোবর। আজ রাত ১০টার পরে বাজি ফাটারই কথা নয়। কিন্তু পুলিশ বাজি বাজারের অনুমতি দিয়েছে ২১ তারিখ পর্যন্ত। নব দত্তের মন্তব্য, ‘‘ক্যামেরার সামনে, মঞ্চ থেকে এঁরা আদালতের নির্দেশ মানার কথা বলেন। কিন্তু আদতে আদালতের কোনও রায়ই মানা হয় না।’’

এই পরিস্থিতিতে বৈধ বাজি বাজারের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে পুলিশের। পুলিশের শীর্ষ স্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ২০ তারিখ অর্থাৎ কালীপুজোর সন্ধ্যাতেই যাতে শেষ বাজার বসে। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘‘পুলিশেরই বিজ্ঞপ্তিতে যখন ২১ তারিখ পর্যন্ত বাজার বসানোর অনুমতি আছে, ওই দিন পর্যন্তই বাজার বসবে।’’ বৈধ বাজি বাজারের এক ব্যবসায়ীর ঠাট্টার ছলে মন্তব্য, ‘‘বিতর্ক হলে বলব, ছটপুজোর বাজার ২১ তারিখ করে নেওয়া হচ্ছে!’’

তবে, বৈধ বাজি বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভও কম নেই। কলকাতা পুলিশের পূর্ব ডিভিশনের কালীকাপুর বাজি বাজারের এক ব্যবসায়ী শ্যামাপ্রসাদ মজুমদারবলেন, ‘‘এমনিতেই ক্রেতা আসছেন না। পাড়ায় পাড়ায় দোকান খুলতে দিয়ে পুলিশ নিজের উদ্যোগে করা বৈধ বাজি বাজারেরই মান রাখেনি। পাড়াতেই যদি চকলেট বোমা, কালীপটকা পাওয়া যায়, তা হলে কে আর সবুজ বাজি কিনতে আসবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন