এ ভাবেই রুদ্ধ জিঞ্জিরাবাজারের মণি খাল। ছবি: অরুণ লোধ।
শহর থেকে প্লাস্টিক বর্জনের প্রচারে চালাতে গায়ক-গায়িকাকে দিয়ে সিডি বার করেছিল কলকাতা পুর-প্রশাসন। বছর তিনেক আগে টাউন হলে তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুর-প্রশাসকেরা জোর গলায় বলেছিলেন, শহরে ৪০ মাইক্রনের কম মোটা প্লাস্টিক প্যাকেট ব্যবহার বন্ধ করা হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে যে বাস্তবের ফারাক অনেকটা, তা এখন মেনে নিচ্ছেন পুরকর্তারাও। কারণ এখনও শহরে রমরমিয়ে চলছে ৪০ মাইক্রনের চেয়ে পাতলা প্লাস্টিক প্যাকেটের ব্যবহার।
তিন বছর আগে আরও বলা হয়, শহর জুড়ে প্লাস্টিক নিয়ে সচেতনতার প্রচার হবে। কাজ না হলে কড়া দাওয়াই প্রয়োগ করবে পুরসভা। ভাটা পড়েছে সেই অভিযানেও। আর কড়া দাওয়াই প্রয়োগের কথা তো কেউ ভাবেনওনি। বলা হয়েছিল, ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের সময়ে প্রতি দোকান বা সংস্থাকে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার না করার কথা মুচলেকা দিয়ে জানাতে হবে। কার্যকর হয়নি সেই উদ্যোগও।
পুর-ইঞ্জিনিয়ারদের বক্তব্য, ম্যানহোল, পাম্পিং স্টেশন ও গালিপিটে এই প্লাস্টিক জমে থাকাই কলকাতায় জল জমার একটি বড় কারণ। এই প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ না হলে দ্রুত জল বার করা যে সম্ভব নয় তা-ও বার বার জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তাতেও ঘুম ভাঙেনি পুর-কর্তাদের।
কলকাতা না পারলেও প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের সুফল হাতেনাতে দেখিয়ে দিয়েছে নদিয়ার কল্যাণী পুরসভা। সেখানে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক প্যাকেটের ব্যবহার কমাতে সক্ষম হন তৎকালীন চেয়ারম্যান শান্তনু ঝা। ২০০৯-১০ সালে ওই পুরসভার দায়িত্বে ছিল বাম পুরবোর্ড। তখনই নজর কেড়েছিল কল্যাণী। শান্তনুবাবু জানান, সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বিক্রি বন্ধ করায় কাজ হয়েছিল। কল্যাণীর বাসিন্দারাও জানান, দোকানে-বাজারে রীতিমতো অভিযান চালিয়েছিল পুরসভা।
কিন্তু কল্যাণী যা পারে, কলকাতা পুর-প্রশাসন তা পারছে না কেন? পুরসভার এক আমলা বললেন, ‘‘সদিচ্ছার অভাবই এর কারণ। প্লাস্টিক তৈরির কারখানা, তা বিক্রির দোকান— সর্বত্রই অবাধ গতি পুর-প্রশাসনের। শ’য়ে শ’য়ে ইনস্পেক্টর আছেন। তাঁদের অভিযানে নামালেই নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার রোখা যেতে পারে।’’ ওই আমলার মত, রাজনৈতিক কারণেই ওই সব সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন না পুরসভার নীতি নির্ধারকেরা। পরিবেশ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কয়েক হাজার টাকা খরচে সিডি বার করেই দায়িত্ব সেরেছেন পুর-কর্তারা।’’
যখন ওই সিডি বার হয়, তখন মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) ছিলেন সঞ্চিতা মণ্ডল। পরে রাজনৈতিক কারণে তাঁকে অবশ্য ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমান মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার জানান, ৪০ মাইক্রনের কম মোটা প্লাস্টিক প্যাকেট ব্যবহার করা নিষিদ্ধ জানিয়ে প্রচার হয়। একাধিক বার ট্যাবলোও বার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘জনসচেতনতা বাড়ানোই মূল লক্ষ্য।’’ শুধু তাতে কী কাজ হবে? স্বপনবাবুর বক্তব্য, ‘‘কলকাতা বড় শহর। অভিযান চালানোর আগে নিয়মিত জন সচেতনতা বাড়ানোয় নজর দিতে হবে। কেন ওই প্লাস্টিক নিষিদ্ধ, তা মানুষকে বোঝাতে না পারলে শুধু অভিযানে কাজ হবে না। সে পথেই এগোচ্ছে পুরসভা।’’
যদিও, মেয়র পারিষদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর অসীম বসুর বক্তব্য, ‘‘বছর তিন আগে সিডি বেরিয়েছে। সে রকম কাজ হয়নি। সচেতনতা গড়তে এত সময় লাগলে ফল কবে মিলবে বুঝতে পারছি না।’’ পুরসভার গড়িমসিকে বিঁধেছেন বিরোধী সিপিএম কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, ‘‘পরিবেশ রক্ষা নিয়ে আপসের দিন শেষ। রাজনীতি ভুলে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বন্ধ করতে হবে।’’