মশা মারতে বাড়ির তালা ভাঙা নিয়ে আগেই টানাপড়েন চলেছিল কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর ও কাউন্সিলরদের একাংশের মধ্যে! শুক্রবার কলকাতা পুরসভায় বরোভিত্তিক ডেঙ্গি পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠকেও কাউন্সিলরেরা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া বন্ধ বাড়ির তালা ভাঙার ঝুঁকি তারা নেবেন না! কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের ‘সহযোগিতা’ পাওয়া যাচ্ছে না।
যার প্রেক্ষিতে পুর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই সমস্যার কথা কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে জানানো হবে। এ দিন ৩, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বরোর ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় পুরভবনে একটি বৈঠক হয়। সেখানেই বন্ধ বাড়ির তালা ভাঙার ক্ষেত্রে পুলিশি বোঝাপড়ার অভাবের বিষয়টি ওঠে। প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ডের কোনও বাড়ি তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকলে সে তালা ভেঙে বাড়ির ভিতর ও আশপাশ পরিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে পুর স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, পুরসভা বলছে, ওরকম ভাবে বন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকা বাড়ি অনেক ক্ষেত্রেই ডেঙ্গির জীবাণুবহনকারী এডিস ইজিপ্টাই মশার আঁতুড়ঘর হয়ে যায়। এ দিন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সত্যেন্দ্রনাথ দে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় পুরভবন থেকে কোনও অর্ডার হাতে না-পেলে শুধু কাউন্সিলরদের কথার উপরে ভিত্তি করে পুলিশ তালা ভাঙতে চাইছে না। ফলে একটা বোঝাপড়ার অভাব হচ্ছে।’’ বৈঠকের পরে আর এক কাউন্সিলর বলেন, ‘‘পুলিশ সঙ্গে না থাকলে তালা ভেঙে বাজে আইনি ঝামেলায় কে জড়াবে!’’
মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ অবশ্য জানিয়েছেন, কোনও বন্ধ বাড়ির ভিতরে জমানো জঞ্জাল-সহ সার্বিক পরিবেশ যদি জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়, তা হলে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বাড়ির তালা ভেঙে তা পরিষ্কার করার আইনি ক্ষমতা (কলকাতা পুর আইনের ৫৪৬ নম্বর ধারা) পুর কমিশনারকে দেওয়া হয়েছে। বাড়ি পরিষ্কারের পরে পুলিশের উপস্থিতিতেই সেখানে নতুন তালা লাগিয়ে দেওয়া হবে। অতীনবাবু বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় পুলিশের নীচের তলার অফিসারেরা এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছেন না। পুর কমিশনার সমস্যাটি কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে জানাবেন।’’
এর পাশাপাশি সরকারি ও রেলের আবাসনগুলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সচেতনতা প্রচার চালানো হবে বলে অতীন জানিয়েছেন। তবে ডেঙ্গি-মৃত্যুতে চিকিৎসকেরা যে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন, অনেক সময়েই তা নিয়ম মেনে লেখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অতীনবাবু। অতীনের বক্তব্য, ‘‘ডেথ সার্টিফিকেটে ইমিডিয়েট কজের পাশাপাশি অ্যালায়েড কজ লিখতে হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেটা লেখা হচ্ছে না। আমরা সমস্ত রিপোর্ট স্বাস্থ্য ভবনে পাঠাচ্ছি। সেখানকার বিশেষজ্ঞেরাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনুমতি ছাড়া বন্ধ বাড়ির তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকতে পারি না। একমাত্র সন্দেহজনক কিছু থাকলে তবেই তালা ভাঙতে পারি। তবে সে ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি লাগে।’’