Budge Budge Blast

আপনারা জানতেন না এখানে বাজি তৈরি হয়? পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ বজবজের বাসিন্দাদের

বজবজ, মহেশতলা ও নোদাখালির একাধিক এলাকায় চোখে পড়ল পুলিশের বিরুদ্ধে এমন ক্ষোভ। অনেকেরই অভিযোগ, সারা বছর পুলিশের নাকের ডগায় বাজি কারখানা চললেও কোনও পদক্ষেপ করা হয় না।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৩ ০৬:৫৬
Share:

বারুদের প্যাকেট ভাসতে দেখা গিয়েছে পুকুরেও। সোমবার, মহেশতলায়। নিজস্ব চিত্র।

প্রথমে এল থানার গাড়ি। তার পরে ভাড়া করে আনানো হল অটো। তাতে চড়েই মাইকে প্রচার করতে শুরু করলেন পদস্থ পুলিশ অফিসারেরা। এক-একটি পাড়ায় অটো ঘুরছে, আর মাইকে বলা হচ্ছে, ‘‘বেআইনি বাজি তৈরি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ এই ধরনের বাজি তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকলে কঠোর আইনি পদক্ষেপ করা হবে!’’

Advertisement

সোমবার ঘুরতে ঘুরতে সেই অটো যখন বজবজের নন্দরামপুর দাসপাড়ায় বাজি বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া বাড়িটার সামনে এসে পৌঁছল, এক ব্যক্তি হাত দেখিয়ে সেটি থামিয়ে বললেন, ‘‘আপনারা জানতেন না, এখানে বাজি তৈরি হয়? এত দিনে তো এমন ঘোষণা এক বারও শুনিনি! তিন জন মারা যেতে চাপে পড়ে অটো নিয়ে বেরিয়েছেন!’’ চোখ রাঙিয়ে পথ ছাড়তে বলে ফের ঘোষণা শুরু করলেন পুলিশকর্মী। তবে, এ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বজবজ, মহেশতলা ও নোদাখালির একাধিক এলাকায় চোখে পড়ল পুলিশের বিরুদ্ধে এমন ক্ষোভ। অনেকেরই অভিযোগ, সারা বছর পুলিশের নাকের ডগায় বাজি কারখানা চললেও কোনও পদক্ষেপ করা হয় না। আরও অভিযোগ, বিস্ফোরণে মৃত্যু হলেও বহু ক্ষেত্রে ‘খবর’ যাতে বাইরে না বেরোয়, প্রাণপণ সেই চেষ্টা করা হয়। তার পরে জানাজানি হয়ে গেলে কয়েক দিন টহল দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে গ্রেফতারিও হয়। তবে, যিনি গ্রেফতার হলেন, তিনিও জানেন, হাজতে থাকতে হবে বড়জোর ১৪ দিন। বেরিয়ে এসে পুলিশের চোখের সামনেই ফের বাজির ব্যবসা করা যাবে!

মহেশতলার পুটখালি মণ্ডলপাড়ায় একটি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে কয়েক মাস আগে মৃত্যু হয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আলো দাসের। তার বাবা টুটুল দাস এ দিন বলেন, ‘‘আমার মেয়ের মৃত্যুর পরে ওই বাজি কারখানার মালিককে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তিনি জামিন পেয়ে বাজির নতুন ব্যবসা ফাঁদার ছক কষছেন। ভয় হচ্ছে, এ ক্ষেত্রেও সকলেই জামিন পেয়ে যাবেন!’’ টুটুলের প্রতিবেশী এক ব্যক্তির অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গ্রেফতারির পরে বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয় না। আদালতে পুলিশ জেল হেফাজতের দাবি জানায়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই বলা হয়, বিস্ফোরক তেমন মেলেনি বা ফেটে গিয়েছে। নয়তো বাজি তৈরির সময়ে বিস্ফোরণ ঘটেছে না বলে তৈরি করা বাজিতে আগুন ধরে গিয়েছে জানিয়ে দুর্ঘটনার মতো করে বিষয়টি দেখানো হয়। অভিযোগ, যে হেতু বাজেয়াপ্ত বাজি তৈরির উপকরণ তেমন থাকে না এবং আরও জেরার প্রয়োজনের কথা বলে না পুলিশ, তাই জেল হেফাজত হয় ধৃতের। রবিবারের ঘটনার পরেও তেমনই করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। যেখানে ওই এলাকা থেকে বাজেয়াপ্ত বাজির পরিমাণ ৩৭ হাজার কেজি বলে জানিয়েছে পুলিশ। কিন্তু উদ্ধার হওয়া বাজি তৈরির উপকরণ শূন্য! রবিবারের ঘটনায় মৃত যমুনা দাসের ভাইপো অলোক ঘাঁটি নিজেই থানায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘কাজ দেখাতে এখন পুলিশ মারধর করে আমাদের তুলে এনেছে! কিন্তু কোনও নিয়মই যে এখানে মানা হয় না, পুলিশ তা জানত না?’’

Advertisement

১৫ কেজি পর্যন্ত বাজি ও বাজির মশলা তৈরির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হয় জেলাশাসকের থেকে। ১৫ থেকে ৫০০ কেজি হলে ‘কন্ট্রোলার অব এক্সপ্লোসিভস’-এর কাছ থেকে লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম। তারও বেশি ওজন হলে লাইসেন্স দেন ‘চিফ কন্ট্রোলার’। মশলা তৈরি, বাজি তৈরি এবং প্যাকেটবন্দি করার কাজওআলাদা ভাবে করতে হয়। এই সব কাজের জায়গার মধ্যে দূরত্ব থাকা উচিত ১৫ মিটার করে। কিন্তু বাজি তল্লাটে নিয়ম শুধু খাতায়-কলমেই। দেখা যায়, যে বাড়িতে বাজি তৈরি হয়, তার উপরেই মজুত করার জায়গা। যেখানে দোকান, সেখানেই মশলা মাখার জায়গা। বাজির বাক্স তৈরি হয় অন্য জিনিসের দোকানের আড়ালেও।

এই পরিস্থিতি কেন? এলাকার কোনও থানার আধিকারিকই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। একই অবস্থান ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপার রাহুল গোস্বামীর। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে তিনি এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চান না। তবে জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘রুটি-রুজির প্রশ্নের পাশাপাশি নানা স্তরের চাপ থাকে। তাই সব ক্ষেত্রে কড়া হওয়া যায় না!’’ একের পর এক মৃত্যু দেখেও নয়? ‘প্রদেশ আতশবাজি ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক শুকদেব নস্করের অর্থপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘পুলিশ যথেষ্ট কড়া হয়েই কাজ করে। এর বেশি কড়া হলে থানা চালাতে মুশকিল হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন