Panihati

Panihati Festival: অসুস্থদের শুশ্রূষায় ঘর খুলে দেন স্থানীয়েরা

রবিবার পানিহাটির ওই উৎসব সাক্ষী থেকেছে বেলাগাম ভিড় এবং একই সঙ্গে প্রশাসনিক অব্যবস্থার।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য, চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২২ ০৬:৩৪
Share:

চিহ্ন: রাস্তাতেই আহতদের চিকিৎসা শুরু করা হয়েছিল। পড়ে রয়েছে তারই সরঞ্জাম। সোমবার, পানিহাটিতে। নিজস্ব চিত্র

‘‘একের পর এক পুণ্যার্থীকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখে রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কী করব,কিছুই মাথায় আসছিল না। প্রথমে ওঁদের মন্দিরের সামনে থেকে বার করে সামনের স্কুলে নিয়ে যাই। কিন্তু ওই ভিড় ঠেলে যাওয়া কি মুখের কথা? শেষে আগুপিছু না ভেবে মন্দিরের কাছে আমার বাড়িরভিতরে সকলকে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিই। সেখানেই ডাক্তার ডেকে এনে শুরু হয় ওঁদের চিকিৎসা।’’— সোমবার এক নিঃশ্বাসে কথাগুলি বলে গেলেন প্রৌঢ় শম্ভুচরণ নন্দী। শুধু তিনিই নন, রবিবার পানিহাটির দণ্ড মহোৎসবে অবস্থা ‘হাতেরবাইরে’ চলে যাচ্ছে দেখে এগিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় অনেকেই। কেউ নিজেরা উদ্যোগী হয়ে অসুস্থদের বাড়িতে এনে ওআরএস খাইয়ে প্রাথমিক শুশ্রূষা করেছেন। কেউ আবার পানীয় জল, খাওয়াদাওয়া থেকে শৌচাগারের ব্যবস্থা করেছেন।

Advertisement

রবিবার পানিহাটির ওই উৎসব সাক্ষী থেকেছে বেলাগাম ভিড় এবং একই সঙ্গে প্রশাসনিক অব্যবস্থার। তিন জনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রশাসনের তরফে তীব্র গরম এবং অসুস্থদের শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের মাত্রার তারতম্যকে দায়ী করা হলেও একটা সময়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করেপুণ্যার্থীদের বার করে আনতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছিল। পরিস্থিতি সামলাতে পানিহাটি হাসপাতালের পাশাপাশি স্থানীয় একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক-দল এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠাতে হয় উৎসব-স্থলে। অসুস্থদের উদ্ধার করতে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পুলিশের সঙ্গে হাত লাগান স্থানীয় বাসিন্দারা।

ভিড়ের চাপে আর গরমে একের পর এক পুণ্যার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন দেখে বাড়িকেই কার্যতহাসপাতাল বানিয়ে ফেলেছিলেন প্রৌঢ় শম্ভুবাবু। তাঁর সঙ্গে অসুস্থদের শুশ্রূষায় হাত লাগান ভাই-ভাইপোরাও। শম্ভুবাবুর কথায়, ‘‘চোখের সামনে দেখছি, একের পর এক বয়স্কমানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে যাচ্ছেন। আর তাঁদের মাড়িয়ে, গায়ের উপর দিয়ে হুড়মুড়িয়ে বেরোনোর চেষ্টা করছেন লোকজন। কোনও মতে ধরাধরি করে ওঁদের তুলে এনে বাড়িতে ঢুকিয়ে আগে শুইয়ে দিই। তার পরে ওআরএস খাওয়াই।’’ ওই প্রৌঢ় জানালেন, প্রায় ৫০ জনেরও বেশি পুণ্যার্থীকে প্রাথমিক সেবা করেছেন তাঁরা। অনেকে শম্ভুবাবুর বাড়িতেই খাওয়াদাওয়া করে, একটু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।

Advertisement

অসুস্থ পুণ্যার্থীদের জন্য একই ভাবে বাড়ির দরজা খুলে দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা অমর সরকার এবং তাঁর স্ত্রী। ওই দম্পতি জানালেন, প্রায় ১৫০ জন তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অমরবাবু বলেন, ‘‘শৌচাগার থেকে অসুস্থদের দাঁড়ানোর জায়গা, সবই তো প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। তাই কিছু না ভেবেই বাড়ির দরজা খুলে দিয়েছিলাম।’’

উৎসব-প্রাঙ্গণের পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে দেখে বন্ধুদের নিয়ে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্থানীয় যুবক কৌশিক সরকারও। এ দিন কৌশিক বলেন, ‘‘ওই দৃশ্য দেখে তো চোখ বন্ধ করে বসে থাকা যায় না। পুলিশও পর্যাপ্ত ছিল না। তাই নিজেরাই উদ্ধারকাজে নেমে পড়ি। যাঁকে যেখানে পেরেছি, সেখানে ঢুকিয়ে প্রাথমিক ভাবে সুস্থ করার চেষ্টা করেছি।’’

এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, তিনটি প্রাণ গেলেও এ যাত্রায় আরও বড় বিপদ কোনও মতে সামাল দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু তাঁদের প্রশ্ন, এর পরেও প্রশাসন শিক্ষা নেবে কি?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন