ভোট বাড়াতে ওজন কমছে প্রার্থীদের

সম্প্রতি নিজের কেন্দ্র আসানসোলে প্রচারের ফাঁকেই বাবুল বললেন, ‘‘আর বলবেন না! এক দিন ভিড়ের মধ্যে হাতের ফিটনেস ব্যান্ডটা কে যেন টেনে নিলেন।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩৩
Share:

গলদঘর্ম: প্রচারে বেরিয়ে গরমে নাজেহাল সিপিএম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য (বাঁ দিকে) এবং তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

হাতের ফিটনেস ব্যান্ডে প্রতিদিন ১৫ হাজার পা হাঁটার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। ভেবেছিলেন, ভোটের বাজারে গ্রাম-শহর চষে ফেলতে গেলে ঠিক হয়ে যাবে। তিনি তো আবার প্রচারে বেরিয়ে যখন-তখন ফুটবল খেলতেও নেমে পড়েন। তখন এমনিতেই ১৬ হাজার পা হাঁটা হয়ে যায় তাঁর। তবে এই প্রচারের মধ্যেই পা গোনার প্রক্রিয়া সাঙ্গ করতে হয়েছে বাবুলকে।

Advertisement

সম্প্রতি নিজের কেন্দ্র আসানসোলে প্রচারের ফাঁকেই বাবুল বললেন, ‘‘আর বলবেন না! এক দিন ভিড়ের মধ্যে হাতের ফিটনেস ব্যান্ডটা কে যেন টেনে নিলেন। তার আগের দিনই তাতে দেখেছি, ২১ হাজার পা হাঁটা হয়েছে। ভোটের পরে আর একটা ব্যান্ড কিনতে হবে।’’ এর পরেই সহাস্য সংযোজন, ‘‘তবে এখন আর ওজন নিয়ে ভাবছি না। প্রচারে সকলের ওজন কমছে, আর আমার বাড়ছে। এখানকার মানুষ ভালবেসে রোজ লাড্ডু, লস্যি খাওয়াচ্ছেন।— এ রকম করলে ওজন কমবে? এ বার না গণেশ হয়ে যাই!’’ জানিয়ে দিলেন, গত লোকসভা ভোটের পরে ওজন মেপে দেখেছিলেন, ৮ কিলোগ্রাম বেড়ে গিয়েছে।

রাজ্যে সাত দফার ভোট প্রক্রিয়ার মধ্যে দু’দফা শেষ। বাকি দফাগুলোয় অনেক প্রার্থীরই পরীক্ষা দেওয়া বাকি। তার আগে এখন সকাল থেকে রাত, নিজের নিজের কেন্দ্রের গলিঘুঁজি চষে ফেলছেন তাঁরা। এক মাসের কিছু বেশি সময়ের এই প্রচারাভিযানে কার কত ওজন কমল, তা-ই জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রার্থীদের কাছে। সকলেই এক কথায় জানালেন, চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার আগে চেষ্টার কসুর করছেন না কেউ। জুতোর সুখতলা যেমন খসছে,

Advertisement

খসছে ওজনও।

বাবুলের মতোই উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ বললেন, ‘‘প্রার্থী হিসেবে হেভিওয়েট কি না, জানি না। তবে আমি এমনিতেই মোটা। উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের গলি তস্য গলিতে ঘুরে ঘুরে প্রচার করতে গিয়ে অনেকটা রোগা হয়েছি। ভালই হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে প্রচার শুরুর আগে ওজনটা মেপে রাখলে ভাল হত!’’ ওই কেন্দ্রেরই তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য মত, ‘‘ছোট থেকে রাজনীতি করছি। মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে ওজনের কথা মাথায় রাখলে চলে না।’’ সুদীপ-গৃহিণী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বললেন, ‘‘সুদীপের ওজন পাঁচ-ছ’কেজি কমে গিয়েছে। আমি চাই আরও কমুক। যত রোগা হবে, তত ভাল। তবে মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে ও যা আনন্দ পায়, তাতে ওজন কমায় কিছু যায়-আসে না।’’

দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় অবশ্য ভোট প্রচারে নামার আগে যন্ত্রে ওজন মেপে রেখেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের বাড়িতে একটা ওজন মাপার যন্ত্র আছে। এই দু’দিন আগে তাতে মাপতে গিয়ে দেখলাম, পাঁচ কিলোগ্রাম মতো ওজন কমে গিয়েছে। যে হারে মানুষের কাছে ছুটছি, তাতে এটা হওয়ারই ছিল।’’ কত কমল ওজন? খানিক লজ্জিত কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন। বললেন, ‘‘থাক, ওজন আর না-ই বা জানলেন।’’ তবে যাদবপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘আমি বরাবরই এ রকম খাটাখাটনি করি। ভোটের জন্য নতুন করে কিছু নয়। ফলে ওজনও আর আলাদা করে মাপিনি।’’

ওজন নিয়ে প্রশ্ন করায় শ্রীরামপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা দু’বারের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আর বলবেন না, এত হাঁটাহাঁটিতে ভুঁড়ি একেবারে কমে গিয়েছে। সেই সঙ্গে গায়ের রংটাও গিয়েছে।’’ এমনিতে ভাল প্রচার সংগঠক হিসেবে তৃণমূলে নামডাক রয়েছে আইনজীবী কল্যাণের। নিয়ম করে সেই প্রচারে বেরোনোর ফিরিস্তি শুনিয়ে বললেন, ‘‘এমন করে আর এক মাস চললে আলকাতরার সঙ্গে আমার গায়ের রঙের পার্থক্য করা যাবে না। সে হোক, মানুষের কাছে যেতে পারছি এটাই বড় কথা।’’

তাঁর ওজন কমলেও চিন্তায় নেই মেদিনীপুরে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। বললেন, ‘‘সকাল থেকে এলাকায় হাঁটতে বেরোই। কোনও গলি ছাড়ছি না। এর মধ্যেই ছ’কিলোগ্রাম ওজন কমে গিয়েছে। এই তো কয়েক দিন আগেই মেপেছি।’’ নিজের কেন্দ্রের পাশাপাশি বিজেপি সভাপতি হিসেবে রাজ্যের দায়িত্বও তাঁর কাঁধে! সেই কথা মনে করিয়ে বললেন, ‘‘আমার ওজন কমছে কমুক। বিজেপির ওজন বাড়লেই হল। রাজ্যে বিজেপির ওজন ভালই

বাড়ছে কিন্তু!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন