প্রচার-পট: ভোটের জন্য তৈরি দেওয়াল। ঢাকুরিয়ার কাছে শহিদনগরে। —নিজস্ব চিত্র।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে মনে মনে ১৬ ফুটের একটি দেওয়ালের মাপজোক সেরে রেখেছেন উত্তর কলকাতার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস নেতা ভীষ্মদেব কর্মকার। গত কয়েক দিন রাতের দিকে গিয়ে দেখেও এসেছেন সেই দেওয়াল ‘অক্ষত’ আছে কি না। যদিও লোকলস্কর নিয়ে তিনি কিছুতেই দেওয়াল লিখতে নেমে পড়তে পারছেন না। কারণ, তাঁর দল যে এখনও উত্তর কলকাতায় প্রার্থীর নামই ঘোষণা করেনি!
আক্ষেপের সুরে ভীষ্মদেববাবু তাই বলছেন, ‘‘আমরা এখানে ভোটে লড়ছি কি না, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আমাদের দল প্রার্থী দেবে, না বামেদের সমর্থন করবে তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। আপাতত তাই দূর থেকেই দেওয়ালে নজর রাখছি। না হলে দখল হয়ে যেতে পারে।’’
রাজ্যের বিভিন্ন কেন্দ্রের মতোই গত এক সপ্তাহ ধরে দোলাচলে ভুগছেন কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ এবং যাদবপুর কেন্দ্রের নিচুতলার কংগ্রেস কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে বামেদের জোট হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে টানাপড়েন যত বাড়ছে, ততই দিশাহারা হয়ে পড়ছেন তাঁরা। মঙ্গলবার দুপুরে মোট ৩৮টি আসনে বামেরা প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেওয়ার পরে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বড় অংশই যখন মনে করছেন এ বারের মতো রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট হওয়ার আর সম্ভাবনা নেই, তখন ওই কর্মীরা বলছেন, ‘‘এমনও হতে পারে, কংগ্রেস নিজে প্রার্থী দিল না। কিন্তু জোট করে বাম প্রার্থীকেই সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিল। তখন কোথায় যাব?’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দক্ষিণ কলকাতার এক কংগ্রেস নেতা আবার বলেছেন, ‘‘গত কয়েক দিন চায়ের ঠেকে, পাড়ার আড্ডায় আমরা বলে এসেছি জোট হচ্ছে। সম্ভাব্য বাম প্রার্থীর নাম করে ভোটারদের বলেছি, ওঁকেই ভোট দেবেন। ওঁকে দেওয়া মানেই আমাদের দেওয়া। এখন জোট না হলে ওই লোকদেরই বলতে হবে, ওঁকে দেবেন না। ওঁরা আলাদা, আমরা আলাদা! এর মধ্যে দেওয়াল লিখে ফেললে আর দেখতে হবে না।’’
দেওয়াল লিখন নিয়ে অবশ্য ইতিমধ্যেই সমস্যায় পড়েছে বিজেপি। দল এখনও প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ না করলেও দক্ষিণ দিনাজপুরে জেলা সভাপতির নামে দেওয়াল লিখে ফেলা হয়েছিল। পরে অবশ্য চুন দিয়ে ওই প্রার্থীর নাম ঢেকে দিতে হয়। একই পথে পা বাড়িয়েছিল কংগ্রেসও। পুরুলিয়া কেন্দ্রে ফরোয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে আসন নিয়ে লড়াই চলছিল তাদের। এর মধ্যেই দল জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোকেই প্রার্থী করতে চলেছে বলে দেওয়াল লিখতে শুরু করে দেন তাঁর অনুগামীরা। গত শুক্রবার বামফ্রন্ট প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে পুরুলিয়া কেন্দ্রের জন্য ফব-র প্রার্থী বীরসিংহ মাহাতোর নাম ঘোষণা করে দেয়।
জেলার এই পরিস্থিতি যাতে শহরে না হয়, সে জন্য এ দিনও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র কর্মীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। আমরা প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ করে দেব। কর্মীদের প্রচারে নামতে সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারছি। তবু বলব, আর একটু ধৈর্য ধরুন।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী অবশ্য এ দিনও বলে গিয়েছেন, ‘‘ধর্মনিরপক্ষ জোট হিসেবে তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী ভোট একত্রিত করতে আমরাই সর্বতো ভাবে উদ্যোগী হয়েছিলাম। কেউ যদি সেই উদ্যোগে সঙ্গী হওয়া নিয়ে শীতলতা দেখান, তার দায় তাঁকেই নিতে হবে।’’
উত্তর কলকাতার কংগ্রেস নেতা প্রকাশ উপাধ্যায় বলছেন, ‘‘জোট হোক বা না হোক, হাতের হাত শক্ত করতে চুনের বালতি নিয়ে তৈরি হয়েই রয়েছি। আর ধৈর্য ধরছে না। সব নামগুলো দ্রুত ঘোষণা হোক!’’