মিষ্টিমুখ: ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগে শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে ব্যস্ততা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
মমতা-মোদীর সহাবস্থান! অবাক হচ্ছেন? রাজনীতিতে নয়। আজ, বৃহস্পতিবার এমনই অসাধ্য সাধন করতে চলেছেন এ শহরের মিষ্টি বিক্রেতারা।
কেউ তৈরি করছেন ক্ষীরের ‘দিদি’, কেউ বা নরেন্দ্র মোদী। কাচের শো-কেসে থরে থরে সাজানো থাকছে সে সব। থাকছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতীক-সহ হরেক নকশার সন্দেশ, রকমারি রসগোল্লাও। ভোটের ফলাফল কী হবে, সেই উত্তেজনার মধ্যেই বিভিন্ন রকম মিষ্টির পসরা নিয়ে বসছেন ব্যবসায়ীরা। জয়ী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মিষ্টিমুখ করাতে বুধবার সকাল থেকেই সে কাজে মগ্ন ময়রারা। ‘পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি রবীন পাল বলেন, ‘‘সারা রাজ্যে মিষ্টি তৈরি করতে প্রতিদিন যে পরিমাণ দুধ ও ছানার প্রয়োজন হয়, লোকসভা ভোটের ফল বেরোনোর দিন তার থেকে বাড়তি ২০ শতাংশ দুধ ও ছানা মজুত রাখতে হচ্ছে।’’
সামাজিক অনুষ্ঠান এবং উৎসবে মিষ্টিমুখ করানো এ দেশের রেওয়াজ। তাই ভোটে জয়ী দলের নেতা-কর্মীদের মিষ্টিমুখ করাতে আজ দোকানগুলিতে ভিড় জমবে। বুথ ফেরত সমীক্ষার কি কোনও প্রভাব থাকছে মিষ্টি তৈরিতে? ওই সমীক্ষা নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি। রাজনৈতিক দলগুলি থেকে বায়না না পেলেও আগের দিন থেকে ভাঁড়ারে রকমারি রসগোল্লা-সন্দেশ তৈরি করে মজুত রাখার প্রস্তুতি তুঙ্গে শহরের মিষ্টি বিপণিগুলিতে। ‘বলরাম মল্লিক অ্যান্ড রাধারমণ মল্লিক’-এর কর্ণধার পপি মল্লিকের কথায়, ‘‘দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ও নরেন্দ্র মোদীর ক্ষীরের মডেল তৈরি করে রাখা আছে। এ ছাড়াও থাকছে ‘সাফল্যের অভিনন্দন’। গুড়ের সন্দেশের মাঝখানে লেখা রয়েছে এমনটি।’’ যাতে জয়ী যে কোনও দলই অনায়াসে কিনতে পারে এই সন্দেশ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
‘নলিন চন্দ্র দাশ অ্যান্ড সন্স’-এর তরফে তপনকুমার দাশ বলেন, ‘‘তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম— চারটি রাজনৈতিক দলের প্রতীক দিয়ে সন্দেশ তৈরি হচ্ছে। তবে ঘাসফুলের প্রতীকের নকশায় সন্দেশ বেশি সংখ্যক হচ্ছে।’’ রিষড়ার ‘ফেলু মোদক’-এর কর্ণধার অমিতাভ দে-র কথায়, ‘‘স্ট্রবেরি, সবুজ, কেশর (গেরুয়া) এবং ব্লুবেরি (নীল) রঙের রসগোল্লা মজুত রাখছি। এ ছাড়াও তৃণমূল ও বিজেপির প্রতীকের নকশায় সন্দেশ-কেকও রয়েছে।’’
রাজনৈতিক পালাবদলের সন্ধিক্ষণে মিষ্টিতেও যে তার ছাপ রাখতে হবে, এমন মতে একেবারেই বিশ্বাসী নন ‘গিরিশচন্দ্র দে ও নকুড়চন্দ্র নন্দী’র বিক্রেতারা। সংস্থার মুখপাত্র পার্থ নন্দী বলেন, ‘‘আমরা কোনও দলীয় প্রতীকের নকশায় সন্দেশ তৈরি করি না। তবে লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের দিন অন্য দিনের তুলনায় বেশি রসগোল্লা, সন্দেশ অবশ্যই রাখা হবে।’’
মিষ্টি তৈরির ধারাবাহিকতায় বিশ্বাসী প্রভুজি হলদিরামও। সংস্থার এক কর্ণধার বলেন, ‘‘স্পেশ্যাল মিষ্টি হচ্ছে না। সারা শহরে ১০টির মতো শাখার প্রতিটিতে কয়েক হাজার বাড়তি স্টক রাখা হচ্ছে। সব থেকে বেশি চাহিদা রয়েছে কেশর লাড্ডুর, তার পরেই কাজু বরফির।’’
বুথ ফেরত সমীক্ষা যা-ই বলুক, শহরের দক্ষিণে কাঁচা আমের স্বাদে সবুজ রসগোল্লার চাহিদা সব থেকে বেশি বলে জানাচ্ছেন ‘পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতি’র কোষাধ্যক্ষ অরূপকুমার দাস। তাঁর কথায়, ‘‘দক্ষিণ কলকাতার মিষ্টির দোকানগুলিতে সবুজ রসগোল্লা বেশি থাকবে। তবে উত্তরে কাঁচা আমের স্বাদের ওই রসগোল্লার তত চাহিদা নেই।’’