ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান সৃজিত ঘোষ মনে করছেন, বন্ধু না থাকার জেরেই এই চরম সিদ্ধান্ত উত্তরা চৌধুরীর।
কারও মাথায় ঋণের বোঝা। কেউ আবার বাবা-মাকে হারিয়ে চূড়ান্ত নিঃসঙ্গ। এমনই নানা সঙ্কটে পড়ে আত্মহত্যার মতো চরম পথ বেছে নিচ্ছেন তরুণ প্রজন্মের একাংশ।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। সামাজিক বন্ধনের শিথিলতা এবং জটিল পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে না পারার জেরেই এ ধরনের বিপজ্জনক প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। শুক্রবার রাতে তিলজলা থানার চৌবাগায় উত্তরা চৌধুরীর মৃত্যুতেও সেই প্রবণতাই দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা।
বছর চারেক আগে কিডনির সমস্যায় ভুগে বাবা মারা যান। সম্প্রতি মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। শুক্রবার রাতে মায়ের মৃত্যুর কিছু পরেই বন্ধ ঘর থেকে ১৯ বছরের ওই তরুণীর ঝুলন্ত দেহ মেলে।
বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে কেউ পাশে না থাকায় তীব্র মানসিক সঙ্কটে পড়েছিলেন উত্তরা। সেই ‘ট্রমা’ সহ্য করতে না পেরেই তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন বলে মনে করছেন মনোরোগ চিকিৎসকদের একাংশ। ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি-র চিকিৎসক সুজিত সরখেল বলেন, ‘‘আত্মহত্যার প্রধান কারণ, পাশে কেউ না থাকার অনুভূতি। উত্তরার ক্ষেত্রেও হয়তো সেটাই ঘটেছিল।’’
শনিবার ওই কলেজপড়ুয়ার পাড়ায় গিয়ে জানা যায়, বাবা-মায়ের সঙ্গেই অধিকাংশ সময় কাটাতেন তিনি। বিশেষ বন্ধুও কেউ ছিল না। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান সৃজিত ঘোষ মনে করছেন, বন্ধু না থাকার জেরেই এই চরম সিদ্ধান্ত। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক বছরের মধ্যেই বাবা-মায়ের মৃত্যু তাঁকে সঙ্কটে ফেলে দিয়েছিল। মায়ের মৃত্যুর পরেই তিনি হয়তো ট্রমায় চলে যান। তার উপরে কারও সঙ্গে নিজের দুঃখও ভাগ করে নিতে পারছিলেন না। তাই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত।’’
উত্তরার মৃত্যু সমাজের বন্ধন আলগা হওয়াকেই আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরল, এমনটাই মত সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্রের। তাঁর মতে, ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে হলেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এই প্রজন্মের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি। তাঁর কথায়, ‘‘আগে বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে সন্তানেরা আত্মীয়দের কাছে বড় হত। এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। মেয়েটি শুধু অনাথ নয়, অসহায় অনুভব করেছিলেন।’’ অভিজিৎবাবুর প্রশ্ন, ‘‘সমাজ তৈরি হয়েছে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। তা হলে সামাজিক বন্ধন কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে?’’