বাগুইআটি

রাস্তা আটকে মেলা, অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন

গাড়ি চলাচল করে, যাতায়াত করেন লোকজনও। দু’দিকে অস্থায়ী লোহার গেট তৈরি করে আটকে দেওয়া হয়েছে তেমনই একটি রাস্তা। কারণ তার দু’পাশে গড়ে উঠেছে মেলার স্টল। ১১ দিনের এই বাগুইআটি মেলার জেরে ওই রাস্তা বন্ধ থাকায় রীতিমতো বিপাকে সাধারণ মানুষ।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৯
Share:

রাস্তা জুড়ে মেলার গেট। ছবি: শৌভিক দে

গাড়ি চলাচল করে, যাতায়াত করেন লোকজনও। দু’দিকে অস্থায়ী লোহার গেট তৈরি করে আটকে দেওয়া হয়েছে তেমনই একটি রাস্তা। কারণ তার দু’পাশে গড়ে উঠেছে মেলার স্টল। ১১ দিনের এই বাগুইআটি মেলার জেরে ওই রাস্তা বন্ধ থাকায় রীতিমতো বিপাকে সাধারণ মানুষ। কারণ, এই রাস্তা ভিআইপি রোডের কলেজ মোড় থেকে দমদম পার্ক ও শ্যামনগর ছুঁয়ে যশোর রোডের অন্যতম সংযোগকারী। ফলে মেলার কারণে এখন অনেকটা ঘুরপথে যাতায়াত করতে হচ্ছে গাড়ি ও বাইকআরোহীদের। এ দিকে, মেলা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে বিধাননগর পুরনিগম ও মেলা কমিটির মধ্যে। মেয়র সব্যসাচী দত্ত জানিয়েছেন, মেলার কোনও অনুমতি নেই। মেলা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা তথা রাজারহাট গোপালপুর বিধানসভার বিধায়ক ও মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর পাল্টা দাবি, মেলার জন্য প্রয়োজনীয় সব অনুমতি রয়েছে তাঁদের কাছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশও।

Advertisement

২৪ ডিসেম্বর বাগুইআটির নারায়ণতলায় ডিপোর মাঠের মাঝে রাস্তা জুড়ে শুরু হয়েছে মেলা। চলবে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেলা কমিটির সম্পাদক মনোজ রায় জানান, প্রতি বছরই মেলার নিরাপত্তার কারণে ওই রাস্তার দু’দিক গেট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘মেলা প্রাঙ্গণের আগে একটি রাস্তা রয়েছে, সেখান দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করা যায়। আর সন্ধের পরে মেলার ভিতর দিয়েই হেঁটে যেতে পারেন মানুষ।’’ তবে নারায়ণতলার ওই চত্বরের বাসিন্দাদের বক্তব্য, বেলগাছিয়ায় মেট্রো ধরার জন্য ওই রাস্তাই সহজ উপায়। কিন্তু এখন যশোর রোড থেকে অটো ধরতে ঘুরতে হচ্ছে। দমদম পার্কের দিক থেকেও নারায়ণতলায় ঢুকতে প্রায় দেড় কিমি রাস্তা ঘুরতে হচ্ছে। আর সন্ধ্যায় পায়ে হেঁটে মেলার ভিতর দিয়ে যাওয়া গেলেও সেখানে বিপুল ভিড় ঠেলতে হচ্ছে বলে জানান বাসিন্দারা। তাঁদের আশঙ্কা, হঠাৎ আগুন লাগলে মেলা প্রাঙ্গণের পাশে পুকুরের জল ব্যবহার করতে সমস্যায় পড়বে দমকল। কারণ সোজা রাস্তায় এলাকায় ঢোকা যাবে না।

এ দিকে, বিধাননগর পুর নিগমের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ওই মেলার কোনও তথ্যই পুর নিগমের কাছে নেই বলে দাবি বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের। এ ভাবে অনুমতি না নিয়ে, রাস্তা বন্ধ করে কেন মেলা হচ্ছে, কৈফিয়ত চেয়ে মেলা কমিটির কাছে চিঠি পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। মেলা নিয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি স্থানীয় কাউন্সিলর শম্পা চক্রবর্তীরও। যদিও উদ্যোক্তাদের দাবি, শম্পাদেবীর নাম মেলা কমিটিতে রয়েছে। তবে শম্পাদেবী বলেন, ‘‘না জানিয়ে নাম ব্যবহার হয়েছে। আমার সঙ্গে কেউ আলোচনা করেননি, অনুমতিও চাননি।’’ বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘গেট বানিয়ে মেলার জন্য রাস্তা আটকালে অনুমতি পাওয়ার কথা নয়, বিষয়টি দেখতে হবে।’’

Advertisement

আদতে বাগুইআটি মেলাটি কয়েকটি স্থানীয় ক্লাবের কর্মকর্তারা মিলে করলেও উদ্যোক্তা মনোজবাবু জানান, মেলার সঙ্গে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায়, স্থানীয় রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, সাংসদ দোলা সেনরা যুক্ত। মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু মঙ্গলবার ফোনে বলেন, ‘‘পুলিশ কমিশনারের সই করা মেলার জন্য অনুমোদনপত্র ও পুরসভার জমা করা টাকার রসিদ — সবই রয়েছে। প্রয়োজনে দেখাতে পারি।’’

ঘটনাচক্রে মঙ্গলবারই বিধাননগর পুর নিগমে বাগুইআটি মেলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তী। সূত্রের খবর, বোর্ড মিটিং চলাকালীন তিনি মেয়রের কাছে জানতে চান ওই মেলা থেকে পুর নিগমের কত আয় হচ্ছে। তখনই মেয়র অন্যান্য আধিকারিকদের জিজ্ঞাসা করে হাউজকে জানান, বাগুইআটি মেলা সম্বন্ধে কোনও তথ্য পুর নিগমের কাছে নেই। দেবরাজবাবুর প্রশ্ন প্রসঙ্গে পরে মেয়র সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘সব ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদেরই বলা হয়েছে পুরনিগমের আইনকে সম্মান দিয়ে কাজ করতে।’’

এ দিকে, উল্টোডাঙার গোলাঘাটায় অন্য একটি মেলার জেরে প্রবল যানজট হচ্ছে ভিআইপি রোডে। পুলিশ জানাচ্ছে, মেলার জন্য আলাদা জায়গা থাকলেও ভিড় নেমে আসছে সার্ভিস রোডে। ফলে সন্ধ্যার পরে তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) সি সুধাকর জানান, উৎসবের সময়ে যান চলাচল কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা নিয়ে বুধবার তাঁদের বিশেষ বৈঠক রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন