অন্ত্যেষ্টি: চিকোর আত্মার শান্তির কামনায়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
কোনওমতে নমো-নমো করে সারা নয়! একেবারে মানুষের মতো খুঁটিনাটি মেনে শুদ্ধাচারে সব কিছু সারতে হবে।
শোকার্ত মণ্ডল দম্পতির আবদারে ধন্দে পড়েছিলেন ঠাকুরমশাই গোপেশ ভট্টাচার্য। কুকুরের গোত্র তো জানা নেই! গোত্র জানা না-থাকা কারও শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে সচরাচর ‘যথা’ গোত্রে উৎসর্গ করাটাই দস্তুর। অত এব জার্মান স্পিৎজ কুলের সন্তান, চার বছরের চিকোর ক্ষেত্রেও তা-ই ব্যবস্থা হল।
রবিবার সকালে বালির দেওয়ানগাজি রোডে স্বপ্ননিকেতন আবাসনের ফ্ল্যাটে টানা তিন ঘণ্টা ধরে চলল শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। শ’দেড়েক অতিথি ছাদে প্যান্ডেলের নীচে খেতে বসলেন। কেটারিংয়ের রান্না ১৪ পদ নিরামিষ মেনু— চানা-কচুরি থেকে ধোঁকা-পোলাও-পনির-পায়েস-সন্দেশ-আইসক্রিম। তবে তার আগে মৃত কুকুর শিশুর ছবির সামনে তার প্রিয় মাছের মোটা পেটি, চিকেন-রুটি দেওয়া হয়েছে। গত ১৬ মার্চ, হঠাৎ খাট থেকে পড়ে পা ভাঙে চিকোর। বেলাগাছিয়ায় হাসপাতালের পথেই মৃত্যু। বালির পাঠকঘাট শ্মশানে তাকে গঙ্গাতীরে সমাহিত করা হয়েছিল। ব্যবসায়ী দম্পতি সৌরভ ও বনশ্রী মণ্ডল টানা হবিষ্যি খেয়ে অশৌচ পালন করেন।
আরও পড়ুন: ৭০ কেজির বিশালাকার কচ্ছপ উদ্ধার
মণ্ডল-বাড়িতে আগেও জার্মান শেফার্ড, ডোবারম্যানরা ঘরের লোক হয়ে উঠেছে। এখনও একটি কালচার পম রয়েছে দম্পতির কাছে। চিকোকে ঘিরেও কত স্মৃতি। ২০১২-র অগস্টে ১৭ দিনের একরত্তি স্পিৎজ তাঁদের ঘরে আসে। রাতেও ‘মা-বাবা’র সঙ্গেই খাটে শুয়ে ঘুমোত সে।
পশুপ্রেমী বলে পরিচিত অভিনেত্রী তথা বিধায়ক দেবশ্রী রায় এই কুকুরপ্রেমের কাহিনি শুনে খুবই আবেগতাড়িত। বলছেন, ‘‘আমার বাড়ির অজস্র কুকুরবেড়ালের কেউ মারা গেলেও তো আমি তিন দিনের একটা কাজ করি। তবে নানা কাজের চাপে অশৌচটা সব সময় সারতে পারি না।’’ তৃণমূলের বিধায়ক বার বার বলছেন, আ-হা এমন নিঃস্বার্থ ভালবাসার কথা শুনেও ভাল লাগে! ঘটনাচক্রে বালির এই বিরল কুকুরপ্রেমের কুশীলব সৌরভবাবু বিজেপি-র লোকাল কমিটির সদস্য।