মাঝেরহাট ব্রিজ দুর্ঘটনাস্থলে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। —নিজস্ব চিত্র
মাঝেরহাট ব্রিজ দুর্ঘটনার প্রাথমিক অভিঘাত কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। এবার শুরু তদন্ত, দড়ি-টানাটানি। রাজ্য সরকার এখনও দোষ ঠেলতে চাইছে রেলের ঘাড়েই। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বুধবারও ঘটনাস্থলে গিয়ে দাবি করলেন, মেট্রোর কাজের জন্য ব্রিজের কাঠামো দুর্বল হতেই পারে। তদন্তে নেমেছে নির্মাণ সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় পরামর্শদাতা সংস্থা রাইটস। তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রী। ব্রিজ দুর্ঘটনা নিয়ে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করেছে কলকাতা পুলিশও। অন্যদিকে কলকাতা হাইকোর্টেও নথিবদ্ধ হয়েছে একটি জনস্বার্থ মামলা। বুধবার ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও।
মঙ্গলবার বিকেলে মাঝেরহাট ব্রিজের মাঝের অংশ ভেঙে পড়ে। আহতদের চিকিৎসা ও উদ্ধারের প্রাথমিক পর্ব কাটার পরই শুরু হয়েছিল চাপান-উতোর। বুধবারও সেই দায় চাপানোর খেলা অব্যাহত। এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার মনে হয় বয়সের ভারে ব্রিজের স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সহনশীলতা কমে গিয়েছিল। পাশাপাশি মেট্রোর কাজের জন্য হেভি পাইলিং করা হচ্ছিল। তার জন্য প্রতি দিনই ভাইব্রেশন হচ্ছিল। এই দুই এর কারণেই ব্রিজ ভেঙে পড়েছে বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। যদিও আমরা এখন এই বিষয়ে কাউকে কোনও দোষ দিতে চাইছি না।’’
বুধবার ঘটনাস্থলে আসে রাইটসের একটি প্রতিনিধি দল। ব্রিজ ভাঙার কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি গোটা ব্রিজের পরিস্থিতিই খতিয়ে দেখেন তাঁরা। সেই পরিদর্শন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পুরমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘রাইটস সঠিক ভাবে তদন্ত করছে না।’’
ঘটনাস্থলে গিয়ে কী বললেন ফিরহাদ হাকিম। দেখুন ভিডিও
মাঝেরহাট ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে পূর্ত দফতর। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামতির গাফিলতিতে দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় বর্তায় এই দফতরের উপরেও। ফলে তাদের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এদিন অবশ্য মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘ইতিমধ্যেই কেএমডিএ এবং আরবান ডেভেলপমেন্ট-এর অধীনে যত ব্রিজ এবং উড়ালপুল রয়েছে, তার স্বাস্থ্য খতিয়ে দেখতে ‘হাই পাওয়ার কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে। বুধবার বিকেলেই সেই রিপোর্ট নিয়ে রিভিউ মিটিং হবে।’’
আরও পডু়ন: ঢুকছে না জেসিবি, হাতে হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে চলছে প্রাণের খোঁজ
মঙ্গলবারই ঘটনাস্থলে গিয়ে ফিরহাদ প্রশ্ন তুলেছিলেন, মেট্রোর কাজের জন্য ব্রিজ ভেঙে পড়েনি তো? তার পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রো রেল বিবৃতি দিয়ে গোটা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, মেট্রো রেলের কাজের জন্য ক্ষতি হলে পিলার দুর্বল হতে পারত। কিন্তু ব্রিজের মাঝের অংশ খুলে পড়েছে। ফলে মেট্রোর কাজের জন্য দুর্ঘটনার তত্ত্ব খাটে না। কিন্তু তার পরও সেই দড়ি টানাটানি চলছেই।
আরও পডু়ন: ‘কেন আজ বই কিনতে গিয়েছিলি?’
দুর্ঘটনার তদন্ত তরান্বিত করতে কলকাতা পুলিশের ডিসি সাউথ মিরাজ খালিদ একটি মামলা দায়ের করেছেন। স্বতঃপ্রণোদিত ওই মামলায় ৩০৪, ৩০৮, ৪২৭ এবং ৩৪ নম্বর ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন, খুনের ষড়যন্ত্র, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য দিকে কলকাতা হাইকোর্টেও একটি জনস্বার্থ মামলা রুজু করেছেন এক আইনজীবী।বৃহস্পতি বা শুক্রবার সেই মামলার শুনানি হতে পারে বলে উচ্চ আদালত সূত্রে খবর।
(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)