Topsia

তপসিয়ায় ভয়াল আগুনে শ’খানেক ঝুপড়ি ছাই

বস্তির মধ্যেই একটি গুদামে কেরোসিন, মোবিল ও রঙের মতো অতি দাহ্য সামগ্রী রাখা ছিল বলে খবর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২০ ০৪:০৬
Share:

ভস্মীভূত: তখনও জ্বলছে তপসিয়ার বস্তি, কালো ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। ছবি এএফপি।

বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে গেল তপসিয়া রোডের দাতাবাবা মাজার বস্তি। শ’খানেক ঝুপড়ি ভস্মীভূত। ভয়াবহ ওই আগুনে কেউ হতাহত না হলেও অনেকেই গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। ওই বস্তির মধ্যেই একটি গুদামে কেরোসিন, মোবিল ও রঙের মতো অতি দাহ্য সামগ্রী রাখা ছিল বলে খবর। সেই গুদাম থেকেই আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান। দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, ‘‘দমকল দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাড়াতাড়ি আগুন নিভিয়ে ফেলায় বস্তির বাইরে তা ছড়ায়নি।’’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ ওই গুদামে আগুন লাগে। কালো ধোঁয়ায় ভরে যায় চার দিক। আজিজুল হক নামে বস্তির এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আগুন খুব দ্রুত ছড়াতে শুরু করে। সেই সঙ্গে প্রবল শব্দে ফাটতে থাকে দাহ্য পদার্থে বোঝাই ড্রামগুলি। একটি জ্বলন্ত ড্রাম ফেটে গিয়ে দূরে ছিটকে পড়ে। আগুনের শিখা ও ধোঁয়া বহু দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল।’’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ছিটকে পড়া জ্বলন্ত ড্রাম থেকেই অন্যান্য ঝুপড়িতে আগুন লেগে যায়। এক সময়ে মনে হচ্ছিল, আগুন খালের অন্য পারের ঘরগুলিতেও ছড়িয়ে পড়বে। স্থানীয় বাসিন্দা নাজিয়া বেগম বললেন, ‘‘ছেলেকে নিয়ে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনে বাইরে এসে দেখি, আমাদের ছাদ দাউদাউ করে জ্বলছে। কোনও মতে ওকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছি। দরকারি কিছুই নিতে পারিনি।’’ আর এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘যে জামাটা পরে ছিলাম, সেটা বাদে আর কিছুই বাঁচাতে পারিনি। সব পুড়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

‘ফায়ার রোবট’ দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ চলছে। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

আরও পড়ুন: কিছু ক্ষণের আগুনেই শেষ বহু দিনের কষ্টার্জিত সঞ্চয়

আর এক প্রত্যক্ষদর্শী, ওই বস্তির উল্টো দিকের আবাসনের বাসিন্দা অভিরাজ মিত্র বললেন, ‘‘পড়াশোনা করছিলাম। হঠাৎ বোমা ফাটার মতো আওয়াজ পাই। বারান্দায় এসে দেখি, সামনের বস্তির কিছু ঝুপড়ি দাউদাউ করে জ্বলছে। ড্রামগুলো ফাটছে। সঙ্গে সঙ্গে ১০১-এ ফোন করি।’’

দমকল পৌঁছনোর আগেই অবশ্য স্থানীয় লোকজন খাল থেকে জল নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘আগুন এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে, বালতির জলে নেভানো যাচ্ছিল না। আধ ঘণ্টার মধ্যে দমকল চলে আসে।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দাহ্যে ঠাসা ওই গুদাম থেকেই আগুন লাগে। এর আগেও সেখানে আগুন লেগেছিল বলে জানান তাঁরা। দমকলের ২০টি ইঞ্জিনের পাশাপাশি এ দিন আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হয় ‘ফায়ার রোবট’ও। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘এই প্রথম ফায়ার রোবট কাজে নামল।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগুন লাগার পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ১২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ। কিন্তু অভিযোগ, স্থানীয় কিছু লোকজন তাঁকে মারধর করেন। জখম সুশান্তবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে খবর।

এ দিন নবান্ন থেকেই ধোঁয়া দেখতে পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যান তিনি। স্থানীয় বিধায়ক জাভেদ খানের সঙ্গে কথা বলেন। নবান্ন সূত্রের খবর, আগুনে ঘরহারাদের জন্য যা যা করণীয়, কলকাতা পুরসভাকে দ্রুত তা করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত রাখতে বলেছেন। পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার কাছ থেকে পরিস্থিতি সবিস্তার জেনে নেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন