বেহাল দশা কলকাতা পুরসভার বহু স্বাস্থ্য ক্লিনিকেরই

ম্যালেরিয়ার রক্ত পরীক্ষা ছাড়া আর কিছু হয় না—ক্লিনিকের গা থেকে এই তকমা ঝেড়ে ফেলতে আংশিক সফল হলেও সচেতনতার প্রচারে এখনও পিছিয়েই রয়েছে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ। তাই যে সব রোগে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলাটাই পুরসভার সবচেয়ে বড় কর্তব্য হওয়া উচিত, সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়েছে তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ২০:৩৩
Share:

ম্যালেরিয়ার রক্ত পরীক্ষা ছাড়া আর কিছু হয় না—ক্লিনিকের গা থেকে এই তকমা ঝেড়ে ফেলতে আংশিক সফল হলেও সচেতনতার প্রচারে এখনও পিছিয়েই রয়েছে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ। তাই যে সব রোগে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলাটাই পুরসভার সবচেয়ে বড় কর্তব্য হওয়া উচিত, সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়েছে তারা।

Advertisement

কিছুদিন আগের জাপানি এনসেফ্যালাইটিস কিংবা হালের সোয়াইন ফ্লু-র সময়ে কলকাতা পুরসভার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। কেন এমন জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যায় পুরসভা সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করবে না, সে নিয়ে অনেকেই সোচ্চার হয়েছেন। পুর স্বাস্থ্যকর্তারা এর কোনও সদুত্তরও দিতে পারেননি। তবে তাঁদের দাবি, স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলিকে আগের তুলনায় অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে সফল হয়েছেন তাঁরা।

কেমন স্বয়ংসম্পূর্ণ? পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এখন পুরসভার ৫০টি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে ডায়াবিটিসের জন্য রক্ত পরীক্ষা হয়। ওষুধও দেওয়া হয়। যেহেতু ডায়াবিটিস ক্রমশ মহামারীর আকার নিচ্ছে দেশ জুড়ে, সেই কারণেই ডায়াবিটিসের চিকিৎসাও পুরক্লিনিকে করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৬টি ক্লিনিকে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন- টোটো-ভ্যানোর বিষয় খতিয়ে দেখতে মমতার নির্দেশ শুভেন্দুকে

সরকারিভাবে কলকাতায় পাস্তুর ইনস্টিটিউট এবং শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দেওয়া হয়। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই প্রতিষেধকের সরবরাহ নিয়ে অভিযোগ ওঠে। পুরসভার ক্লিনিকে এই প্রতিষেধকের ব্যবস্থা হওয়ায় সাধারণ মানুষ অনেকটাই উপকারী হবেন বলে দাবি পুরকর্তাদের। তপনবাবু বলেন, ‘‘প্রত্যেক বরো-তে একটি করে এবং ১০ নম্বর বরোর এলাকা যেহেতু অনেকটাই বেশি সেই কারণে ওই বরো-তে দুটি ক্লিনিক থেকে ওই টিকা সরবরাহ হয়। কিন্তু টিকা নেওয়ার জন্য কোনও এলাকার ভাগ নেই। যে কোনও এলাকার মানুষই যে কোনও এলাকা থেকে টিকা নিতে পারবেন।’’

১৪১টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতেই একটি করে স্বাস্থ্য ক্লিনিক রয়েছে। সেখানে থাকার কথা একজন করে ডাক্তার, চারজন করে মাল্টিপারপাস হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট , একজন হেলথ সুপারভাইজার। এ ছাড়া থাকেন কয়েকজন ফিল্ড ওয়ার্কার এবং মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী।

কিন্তু বেশ কিছু ক্লিনিকেই ডাক্তার পাওয়া যায় না। হেলথ সুপারভাইজার পাওয়া যায় না বহু জায়গাতেই। নিয়ম অনুযায়ী সকাল আটটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত ক্লিনিক খোলা থাকার কথা, কিন্তু বেলা একটা বাজতে না বাজতেই ক্লিনিকে তালা ঝুলেছে, এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই। জ্বর ছাড়া অন্য সাধারণ শরীর খারাপের সমস্যা নিয়ে গেলে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, এমন অভিযোগও ওঠে।

কিন্তু পুরসভা যদি স্বাস্থ্য ক্লিনিক খুলেই থাকে, তা হলে যে কোনও রোগীকে পরিষেবা দেওয়াটাই তো তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রই রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দিতে পারে না। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালের আউটডোরের সঙ্গে পুরসভার স্বাস্থ্য ক্লিনিককে গুলিয়ে ফেললে হবে না। শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্যের বিষয়গুলি নিয়েই পুরসভা কাজ করে। তাই ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির ক্ষেত্রে তারা যতটা তৎপর, অন্যক্ষেত্রে ঠিক ততটাই তৎপরতা দেখা যাবে না। যে রোগগুলি দ্রুত নিণর্য় এবং চিকিৎসা না হলে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার ভয় রয়েছে, সেই সব ক্ষেত্রে দ্রুত তৎপর হতেই হয়। যেমন ডেঙ্গির ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এলে কখন রোগী এসে সেই রিপোর্ট নেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করি না। ফোন করে তৎক্ষণাৎ রোগীকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়।’’

মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলে, স্বাস্থ্য পুরসভার প্রাথমিক দায়িত্ব নয়, ওটা রাজ্যের কাজ। তা সত্ত্বেও সোয়াইন ফ্লু-র সম্পর্কে আমরা যথেষ্ট প্রচার চালিয়েছি। আগে পুরসভার ক্লিনিকে কার্যত কোনও পরিষেবাই পাওয়া যেত না। এখন আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। শুধু ক্লিনিক নয়, অপারেশন থিয়েটার সহ একটা মেটারনিটি হোম-ও তৈরি হয়েছে।’’

কিন্তু তা সত্ত্বেও বহু ক্লিনিকে কেন এখনও ডাক্তার পাওয়া যায় না? কেন স্বাস্থ্যকর্মীদের ভরসাতেই থেকে যেতে হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে? মেয়র বলেন, ‘‘গোটা রাজ্যেই এখন ডাক্তারের আকাল। পুরসভা তো রাজ্যের বাইরে নয়। অনেক সময়ে যে ডাক্তারদের আমরা নিয়োগ করি, তাঁরা বাতি সুযোগসুবিধার জন্য সরকারি হাসপাতালে বা অন্যত্র চলে যান। এটা তো আমাদের হাতে নেই। পুরসভা তো আর মেডিক্যাল কলেজ খুলতে পারবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন