(বাঁ দিকে) কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
শহরের বহুতলগুলির বাসিন্দাদের নিয়ে বুধবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে একটি বৈঠক করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেই বৈঠক চলাকালীন ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেয়রের ফোনে ফোন করে বহুতলবাসীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন তিনি। সূত্রের খবর, টানা ৩৭ মিনিট ফোনে ছিলেন মমতা। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন এবং বহুতলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়গুলি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শহরাঞ্চলের ভোটের হার বৃদ্ধিতে জোর দিতে চায় নির্বাচন কমিশন। বলা হয়েছে, শহরের যে সমস্ত বহুতল আবাসনে ৩০০ জনের বেশি ভোটার রয়েছেন, তার ভিতরেই ভোটকেন্দ্র বসবে। আবাসনের বাসিন্দারা সেখানে ভোট দেবেন। তাঁদের আর বাইরে যেতে হবে না। বাইরে থেকে কেউ সেখানে ঢুকতেও পারবেন না। কমিশনের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী এর বিরুদ্ধে কমিশনকে চিঠিও দিয়েছেন। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি দাবি করেছে, মুখ্যমন্ত্রীর নিজের আসন ভবানীপুর-সহ একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে বহুতলের বাসিন্দাদের উপরে তৃণমূল ‘চাপ’ সৃষ্টি করছে।
বিজেপির এই দাবি মানতে চায়নি তৃণমূল। তবে বহুতলবাসীরা যাতে সরাসরি মেয়রের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, ভোটকেন্দ্র নিয়ে নিজেদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানাতে পারেন, তার জন্য বুধবার বৈঠক ডাকা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর সেখানে থাকার কোনও কথা ছিল না। তবু তিনি মেয়রকে ফোন করে বহুতলবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সূত্রের খবর, আবাসনের বাসিন্দাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘আমাদের নামে অনেকে অনেক রকম কুৎসা করছে। বিশ্বাস করবেন না। কমিশন তো শুধু ভোটের সময় আসে। আমরাই আপনাদের পাশে আছি।’’ ফোনে মমতা আরও বলেছেন, ‘‘কাউকে ভয় পাবেন না। কারও কথায় কান দেবেন না। কোনও সমস্যা হলে আমাদের বলুন।’’ আবাসনের ভিতরে কোনও আয়োজন করতে গেলে আগে আবাসিকদের অনুমতি নিতে হয়, মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে শহরাঞ্চলের, বিশেষত আবাসনের ভোট অধিকাংশই গিয়েছে বিজেপির বাক্সে। তাই বিধানসভার ক্ষেত্রে আবাসনের ভোটারদের নিয়ে বাড়তি সতর্ক তৃণমূল। বিজেপির দাবি, আবাসনের ভিতর ভোটকেন্দ্র তৈরিতে আপত্তি জানিয়ে বাসিন্দাদের কমিশনকে চিঠি লিখতে বলছে রাজ্যের শাসকদল। একটি চিঠির বয়ান সব আবাসনে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বয়ানটি নাতিদীর্ঘ। পাঁচটি বাক্যে লেখা সে চিঠিতে শুধু ওয়ার্ড নম্বর লেখার জায়গাটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, বহুতলবাসীরা ওই বয়ানে শুধু লিখবেন তাঁরা কত নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। নীচে নিজেদের বহুতলের নাম, ঠিকানা-সহ সই করে দেবেন। দাবি, সে সব চিঠি নির্বাচন কমিশনে জমা করিয়ে তৃণমূল দেখাবে, বহুতলবাসীরা নিজেদের আবাসন চত্বরে ভোটকেন্দ্র চান না। শাসকদল এই দাবি মানতে চায়নি।