Advertisement
E-Paper

বহুতলগুলিতে ভোটকেন্দ্র রুখতে বাসিন্দাদের উপর ‘তৃণমূলী চাপ’! বিজেপির অভিযোগ, বহুতলবাসীদের নিয়ে বুধে বৈঠক মেয়রের

বহুতলগুলির বাসিন্দাদের হাতে একটি চিঠির বয়ান তুলে দেওয়া হচ্ছে এবং সে চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:০৩
BJP alleges TMC pressure on Kolkata high rise residents asking for letter opposing polling booths inside complexes, Mayor Firhad to meet high rise residents on Wednesday

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

অভিজাত বহুতলের বাসিন্দাদের জন্য আবাসন চত্বরে ভোটকেন্দ্র তৈরির বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পত্রাঘাতেই থামল না ঘটনাপ্রবাহ। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের আসন ভবানীপুর-সহ একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে বহুতলের বাসিন্দাদের উপরে তৃণমূল ‘চাপ’ বাড়ানো শুরু করেছে বলে অভিযোগ করল প্রধান বিরোধীদল বিজেপি। একের পর এক বহুতলে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং স্থানীয় কাউন্সিলর হাজির হচ্ছেন বলে বিজেপির দাবি। বিরোধীদলের অভিযোগ, আবাসন চত্বরে ভোটকেন্দ্র তৈরিতে আপত্তি জানিয়ে কমিশনকে চিঠি লিখতে বলা হচ্ছে একাধিক বহুতলের বাসিন্দাদের।

তৃণমূল অবশ্য বহুতলে গিয়ে চাপ দেওয়ার অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছে। তারা বলছে, মেয়র ফিরহাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার সুযোগ করে দিতে বহুতলবাসীদের বুধবারই ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে ডাকা হয়েছে।

বিজেপি নেত্রী তথা দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপির তরফে বহুতলবাসীদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত শতরূপার দাবি, বহুতলগুলির বাসিন্দাদের হাতে একটি চিঠির বয়ান তুলে দেওয়া হচ্ছে এবং সে চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে বলা হচ্ছে। বয়ানটি নাতিদীর্ঘ। পাঁচটি বাক্যে লেখা সে চিঠিতে শুধু ওয়ার্ড নম্বর লেখার জায়গাটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, বহুতলবাসীরা ওই বয়ানে শুধু লিখবেন তাঁরা কত নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। নীচে নিজেদের বহুতলের নামঠিকানা-সহ সই করে দেবেন। বিজেপির দাবি, সে সব চিঠি নির্বাচন কমিশনে জমা করিয়ে তৃণমূল দেখাবে, বহুতলবাসীরা নিজেদের আবাসন চত্বরে ভোটকেন্দ্র চান না।

আলিপুর পার্ক এলাকার একটি বহুতল আবাসনের বাসিন্দা তথা স্থানীয় বিজেপি নেত্রী পারমিতা দত্তের দাবি, আলিপুর থানার ওসি এবং অতিরিক্ত ওসি-কে সঙ্গে নিয়ে মেয়র ফিরহাদ (ববি) এবং স্থানীয় কাউন্সিলর দেবলীনা বিশ্বাস একের পর এক বহুতলে গিয়েছেন। তিনটি আবাসনের নামও তাঁরা করছেন। সেগুলি হল ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের পেন কোর্ট, বন্দনা অ্যাপার্টমেন্ট, গোদরেজ অ্যাপার্টমেন্ট। এ ছাড়াও লর্ড সিন্‌হা রোডে শ্রী শিক্ষায়তনের পার্শ্ববর্তী এলাকার একটি বহুতল আবাসনে গিয়েও ভোটকেন্দ্র তৈরির বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে কমিশনকে চিঠি লিখতে সেখানকার কমিটিকে ‘চাপ’ দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপি দাবি করছে।

যে ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এই অভিযোগ আসছে, সেটি মুখ্যমন্ত্রীর নিজের আসন ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ওই বিধানসভা কেন্দ্রেরই আর এক প্রান্তে অবস্থিত ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকেও একই অভিযোগ উঠছে। স্থানীয় কাউন্সিলর সুস্মিতা ভট্টাচার্য (চট্টোপাধ্যায়) বহুতলের বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের উপরে ‘চাপ’ সৃষ্টি করছেন বলে বিজেপির দাবি। একই অভিযোগ এসেছে বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র এলাকা থেকেও। আয়রন সাইড রোডের উইন্ডসর ক্যাসল এবং বালিগঞ্জ পার্কের ব্রজ ধামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে আবাসন চত্বরে ভোটকেন্দ্র তৈরির বিষয়ে ‘আপত্তিপত্র’ চাওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি।

তবে ‘হিতাকাঙ্ক্ষী’র ভঙ্গিতেই ‘আপত্তিপত্র’ চাওয়া হচ্ছে বলে খবর। ‘আবাসন চত্বরে যদি ভোটকেন্দ্র তৈরি হয়, তা হলে কয়েক দিন আগে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী সেখানে ঢুকে পড়বে, তাদের থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, তার পরে ভোটকর্মীরা আসবেন, দেড়-দুদিন কাটাবেন। এত কিছু হলে আবাসনের ভিতরের পরিবেশ বিঘ্নিত হবে, সাজসজ্জা নষ্ট হবে।’ এই ভাবে বোঝানো হচ্ছে বাসিন্দাদের। ‘ঝুটঝামেলা’ এড়াতে ‘আপত্তিপত্রে’র বয়ানে সই করে দিতে বলা হচ্ছে পরামর্শ দেওয়ার ভঙ্গিতে।

তৃণমূল কাউন্সিলররা ‘চাপ সৃষ্টির’ অভিযোগ সম্পূর্ণ নস্যাৎ করছেন। ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা কলকাতা পুরসভার ন’নম্বর বরোর চেয়ারপার্সন দেবলীনা বলেছেন, ‘‘চাপ বা হুমকি কাউকেই দেওয়া হয়নি। তবে এ বিষয়ে কারও কারও সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বুধবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে কলকাতার বিভিন্ন বহুতলের বাসিন্দাদের আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। সেখানে মেয়রও থাকবেন। বহুতলবাসীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা সেখানেই সকলকে জানাতে বলা হয়েছে।’’ ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুস্মিতাও চাপ দেওয়ার অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘এই বিষয়ে কথা বলতে আমি নিজে কোনও বহুতলেই যাইনি।’’

মেয়র ফিরহাদকে ফোন করে হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাঁকে হোয়াট্সঅ্যাপে পাঠানো বার্তারও জবাব মেলেনি। মেয়রের অন্য একটি নম্বরে ফোন করলে সেটি অন্য কেউ ধরে বলেন, ‘‘স্যর মিটিংয়ে ব্যস্ত।’’ কখন মেয়রকে পাওয়া যাবে, তা-ও তিনি বলতে পারেননি।

সম্প্রতি কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দেওয়া এক হিসাব অনুযায়ী, ‘আপাতত কলকাতায় অভিজাত বহুতল আবাসন ও কমপ্লেক্সের সংখ্যা হাজার দু’য়েক বা তার একটু বেশি। শহরের ভোটার তালিকায় তাঁদের অংশীদারিত্ব ৮-১০ শতাংশের মতো’। অশান্তি এড়িয়ে চলতে চাওয়া এই বহুতলবাসীদের অনেকেই ভোটের দিনে বুথমুখো হন না। কিন্তু বহুতল চত্বরেই ভোটকেন্দ্র তৈরি হয়ে গেলে বহুতলবাসীদের সিংহভাগই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। তার প্রভাব কলকাতার বেশ কয়েকটি বিধানসভা আসনে পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। তাই একটি দল উদগ্রীব বহুতল চত্বরেই ভোটকেন্দ্র তৈরি করাতে। অন্য দল চাইছে ‘স্থিতাবস্থা’ বহাল রাখতে।

High Rise Buildings Polling Booth BJP Bengal AITC Election Commission FirhadHakim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy