‘স্বচ্ছ’ নয়, শোভন-ডাকে ‘নির্মল বাংলা’

নামে কী বা আসে যায়? অন্যে যে যা-ই বলুন, মানেন না কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাই নরেন্দ্র মোদীর ডাকে ঝাঁটা হাতে পথে নেমে ‘স্বচ্ছ ভারত’ গড়ার উদ্যোগকে কার্যত ‘নকল’ করলেও ওই নামে তাঁর ঘোর আপত্তি। বরং মেয়রের শোভন কর্মসূচি ‘নির্মল বাংলা’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৪
Share:

নামে কী বা আসে যায়? অন্যে যে যা-ই বলুন, মানেন না কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাই নরেন্দ্র মোদীর ডাকে ঝাঁটা হাতে পথে নেমে ‘স্বচ্ছ ভারত’ গড়ার উদ্যোগকে কার্যত ‘নকল’ করলেও ওই নামে তাঁর ঘোর আপত্তি। বরং মেয়রের শোভন কর্মসূচি ‘নির্মল বাংলা’।

Advertisement

দলীয় কাউন্সিলরদের কাছে বৃহস্পতিবার এটা স্বচ্ছ করে দিয়ে মেয়র নির্দেশ দেন, ‘স্বচ্ছ ভারত নয়, আমাদের কর্মসূচি কিন্তু নির্মল বাংলা।’

পুরসভা সূত্রে খবর, এ দিন দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে এক বৈঠক করেন মেয়র। সেখানেই এই প্রসঙ্গে কথা হয়। পরে তৃণমূল শাসিত পুরবোর্ডের কর্তারা বোঝালেন, আসলে প্রচারের তোড়ে মোদী সরকারের ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ এখন দেশবাসীর মুখে মুখে ছড়িয়ে গিয়েছে। এ দিনের বৈঠকেও কেউ কেউ তা বলে ফেলেছেন। আর ভুল যাতে না হয়, তাই সকলকেই বলে দেওয়া হয়েছে ১৫ অগস্ট শহর জুড়ে নির্মল বাংলা অভিযানে সামিল হতে।

Advertisement

‘নির্মল বাংলা অভিযান’ নামকরণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাল, স্বাধীনতা দিবসে রাজ্যের সর্বত্র দুপুর ১২টা নাগাদ নির্মল বাংলা অভিযানে রাস্তা সাফাইয়ে নামবেন জেলা, পঞ্চায়েত, পুরসভা এবং স্বশাসিত প্রশাসন। কলকাতা শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডেও সেই কাজে নামতে বলা হয়েছে কাউন্সিলরদের। এ দিনের বৈঠকে অবশ্য বিরোধী দলের কোনও কাউন্সিলরকে ডাকা হয়নি। এ বিষয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, ২০ অগস্ট পুরসভার অধিবেশন। তা নিয়ে দলের কাউন্সিলরদের কিছু পরামর্শ দেওয়া এবং নির্মল বাংলা অভিযোন সফল করার কথা বলার জন্য ডাকা হয়েছিল।

এটা যে স্বচ্ছ ভারত অভিযান নয়, তা ভাল ভাবেই বুঝিয়ে দেন মেয়র শোভনবাবু। বলেন, ‘‘স্বচ্ছ ভারত কি না, জানি না। আমরা নির্মল বাংলা অভিযান করছি। বাংলাকে ক্লিন ও গ্রিন করার পরিকল্পনা অনেক আগেই নিয়েছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য জুড়ে তা চলছে। সেই কাজেই কলকাতা সামিল হচ্ছে।’’ এর পরেই নরেন্দ্র মোদীর স্বচ্ছ ভারত অভিযানকে কটাক্ষ করে মেয়র বলেন, ‘‘ওখানে তো বলা হচ্ছে বাথরুম হবে, কিন্তু তার মাথায় ছাদ থাকবে না। এতে কী ভাবে সম্ভ্রম থাকবে, জানি না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘চার হাজার টাকায় বাথরুম হয়, এটা ভাবতে পারি না।’’ বৈঠকের পরে মেয়রের ঘরে এই আলোচনার সময়ে হাজির ছিলেন বিজেপি-র এক কাউন্সিলর অসীম বসু। কিছুটা প্রতিবাদের চেষ্টাও করেছিলেন, কিন্তু মেয়র তা কানে তোলেননি।

মেয়র এ দিন জানান, আজ, শুক্রবার সকালে তিনি এবং মেয়র পারিষদেরা নির্মল বাংলা অভিযানে সামিল হবেন। পুর-ভবনের সামনে থেকে বেরিয়ে গ্র্যান্ড হোটেলের সামনের রাস্তায় ঝাঁট দেবেন। কিন্তু ওই রাস্তার সামনে কেন? মেয়র জানান, শহরের সব রাস্তাই এখন পরিষ্কার থাকে। এই জায়গাটি পুরসভার সামনে বলে ওই রাস্তা বাছা হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, ঝাঁট দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই পুরবোর্ডের কর্তাদের গোটা পঞ্চাশেক অ্যাপ্রন এবং সাড়ে সাত হাজার টুপি বানানো হয়েছে।

এ দিকে মেয়র যা-ই বলুন না কেন, বিজেপি-র একাধিক সদস্যের কথায়, রাজনীতি করার জন্য মেয়র এ সব বলছেন। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ডাক মোদীজিই প্রথম দিয়েছেন। এখন যা হচ্ছে, সবই ওই অভিযানকে অনুকরণ করে। নরেন্দ্র মোদীর সরকারের কাছ থেকে পরিকল্পনা ধার নিতে সম্মানে বাধছে বলেই অভিযানের আলাদা নামকরণ করা হয়েছে। তাঁরা ওই দিন স্বচ্ছ ভারত অভিযানে সামিল হবেন বলেই এ দিন জানিয়েছেন বিজেপি-র সদস্যেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন