যদি এমন হত...মোমে-মানুষে মুখোমুখি। হতে পারত, হল না। নিজের মোম-প্রতিকৃতির (বাঁ দিকে) সামনে গেলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদের প্রতিকৃতি দেখে উদ্ভাসিত। নিউ টাউনে মাদার ওয়াক্স মিউজিয়ামে, মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
নিজের মুখোমুখি হতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লন্ডনের মাদাম তুসোর প্রেরণায় কলকাতার মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়মে নিজের মূর্তির কাছাকাছি গিয়েও খানিকটা আড়ষ্ট ভাবে অন্য দিকে ঘুরে গেলেন তিনি।
নিউ টাউনের ফিনানশিয়াল হাব-এর সাততলায় সদ্য সেজে ওঠা মূর্তিশালায় মঙ্গলবার বিকেলে এই দৃশ্যই দেখা গেল। সোম-সন্ধ্যায় চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চ থেকে রিমোটে কলকাতার এই নয়া দ্রষ্টব্যের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনই তা সাধারণ দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রথম দিনের দর্শক মমতা নিজেও।
মমতার ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, দেশ-বিদেশে বাঙালির বরণীয়দের মাঝে তাঁর মূর্তি রাখা নিয়ে ঘোর আপত্তি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। শেষটা নিমরাজি হন তিনি। তবে বলে দেন, মূর্তিশালার পিছনের দিকেই যেন তাঁর মূর্তিটি রাখা হয়।
সেটাই হয়েছে। এ দিন বিকেলে কাছে এগিয়েও নিজেকে এক ঝলক দেখেই অন্যত্র মনোনিবেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন? এর পিছনে কি নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে এক ধরনের কুণ্ঠা কাজ করছে মমতার? মনস্তত্ত্ববিদেরা তা মানছেন না। অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ তো আয়নার মুখোমুখি হওয়া নয়। নিজের মূর্তি। এর মুখোমুখি না-দাঁড়ানোর মধ্যে নিজেকে নিয়ে কোনও আড়ষ্টতা নেই। বরং এটাই তো সামাজিক সৌজন্যবোধ অথবা বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ।”
তবে মমতার মূর্তি যেখানে, সেই ঘরেই রয়েছেন তাঁর পছন্দের অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান ও মিঠুন চক্রবর্তী। ঘটনাচক্রে আপাতত তিনি ছাড়া অন্য কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এই সংগ্রহশালায় মূর্তিমান হননি। শাহরুখের ক’হাত দূরে অনেকটা জায়গা জুড়ে তাঁর দফতরের টেবিল, পিছনে বইয়ের র্যাক সাজিয়ে চেয়ারে আসীন ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা’। চেহারাটিতে অবশ্য কয়েক বছর আগের পুরনো মমতার আদল। গোলগাল, হাসিখুশি মুখ ‘মুখ্যমন্ত্রী’র। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন তাঁর এই মোম-সংস্করণের কাছাকাছি গেলেন, সেই মমতা অনেকটাই ক্ষীণতনু। কঠোর পরিশ্রমের ছাপ তাঁর চোখেমুখে।
মুখ্যমন্ত্রী পরে জানিয়েছেন, ভগিনী নিবেদিতা ও মাদার টেরিজার প্রতিকৃতিও শীঘ্রই মূর্তিশালায় স্থাপন করা হবে। হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানিয়েছেন, নতুনত্ব জিইয়ে রাখতে ঘুরেফিরে বিভিন্ন বরণীয়দের মূর্তিগুলি রাখা হবে। এমনকী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর মূর্তিও বসানোর কথা।
মূর্তিশালা ঘুরে দেখার পরে বেরিয়ে মমতা উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে অমিতাভ, শাহরুখ বা মান্না দে-র প্রতিকৃতির প্রশংসা করেন। তবে উত্তম-সুচিত্রাকে ততটা পছন্দ হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর। বলেছেন, মূর্তিগুলি পাল্টাতে হবে। মূর্তিশালায় যাঁরা ঠাঁই পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ, গাঁধী, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, নেতাজি, নজরুল, জগদীশচন্দ্র বসু থেকে কিশোর, লতা বা সৌরভ-কপিলও রয়েছেন। বিদেশিদের মধ্যে একমাত্র বল পায়ে মারাদোনা। সবাই যে সমান আকর্ষণীয়, তেমন নয়।
মূর্তিমতী নিজেকে দেখে কেমন লাগল? প্রশ্ন শুনে জবাব না দিয়ে গটগটিয়ে হেঁটে গাড়িতে উঠে যান মুখ্যমন্ত্রী।