ছোটখাটো গোলমালেই গুলি চালিয়ে দেওয়া যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে এ শহরের!
কড়েয়া, বন্ডেল গেটে এলাকার দুষ্কৃতীদের গোলমালের জেরে প্রকাশ্যে গুলি চলেছে। এ বার এক তরুণ-তরুণীর গোলমালেও গুলি চলল আলিপুরের মতো অভিজাত এলাকায়। তবে কেউ হতাহত হয়নি। গুলি চালানোর অভিযুক্তকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাত দশটা নাগাদ আলিপুর রোডের একটি জিমন্যাসিয়ামের সামনে এক তরুণীর সঙ্গে ফারহান নামে এক যুবকের গোলমাল বাধে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ফারহান এবং ওই তরুণীর এক সময়ে বন্ধুত্ব ছিল। বচসার মাঝেই ফারহান ওই তরুণীর বর্তমান পুরুষসঙ্গী লক্ষ্মণ মার্কানন্দনকে চড় মারেন। তখন লক্ষ্মণ ফারহানকে লক্ষ করে দু’টি গুলি চালান, তবে গুলি ফারহানের গায়ে লাগেনি। রাতে আলিপুর থানায় ফারহান অভিযোগ দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার লক্ষ্মণকে মহেশতলার একটি অভিজাত আবাসন থেকে পাকড়াও করে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, ওই তরুণীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। লক্ষ্মণ এর আগে হায়দরাবাদে চন্দন কাঠ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাঁর আগ্নেয়াস্ত্রটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেটির লাইসেন্স আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লক্ষ্মণের চারচাকা গাড়িও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
পুলিশের অবশ্য দাবি, এই ঘটনায় অপরাধ-চক্রের কোনও যোগ নেই। নেহাতই সম্পর্কের গোলমাল থেকে এই ঘটনা। কিন্তু লক্ষ্মণের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলে রাজপথে বড় ধরনের গোলমাল হত। যেমনটা হয়েছে কড়েয়া কিংবা বন্ডেল গেটে।
তদন্তকারীদের একটি সূত্রে খবর, জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে দক্ষিণ শহরতলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল এক দুষ্কৃতী। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সোনা পাপ্পু নামে ওই দুষ্কৃতী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও স্থানীয় থানা বা লালবাজারের গোয়েন্দারা তার গতিবিধি নজরে রাখেননি। শেষমেশ বন্ডেল গেটে গুলি চালানোর ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এ ব্যাপারটি সামনে আসে তদন্তকারীদের। সেই সঙ্গে উঠে আসে অপরাধ জগতের হালহকিকত জানার ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের একাংশের ‘ব্যর্থতা’র কথাও। বন্ডেল গেট কিংবা কড়েয়ার ঘটনায় এখনও সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেননি গোয়েন্দারা। কিনারা হয়নি অগস্ট মাসে শেক্সপিয়র সরণিতে গুলি চলার ঘটনারও।
এই ঘটনার তদন্ত চলাকালীন কসবা থানার দুই অফিসারকে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। পুলিশের একাংশ অবশ্য বলছেন, সোনা পাপ্পু জামিন পেয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও থানার ওই দুই সাব-ইন্সপেক্টর তার গতিবিধি নজরে রাখেনি। বন্ডেল গেটের ঘটনা কসবা থানার আওতায় না হলেও পাপ্পু কসবারই বাসিন্দা। তাই জামিনে ছাড়া থাকলেও পাপ্পুর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে কসবা থানা কেন সক্রিয় হল না, তা নিয়েও ফের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন পুলিশকর্তারা। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার দুষ্কৃতীর উপরে নজরদারি না করার ফলেই শাস্তির কোপ পড়েছে দুই অফিসারের উপরে।
কসবা থানার একাংশ আবার জানাচ্ছেন, বন্ডেল গেটে গুলি চলার পরে পাপ্পুর বাড়িতে হানা দিয়েছিল চারটি থানার যৌথবাহিনী। তখন ওই দুই অফিসারকে ফোন করেছিলেন বিজন মুখোপাধ্যায় নামে স্থানীয় কাউন্সিলর। পুলিশ অফিসারদের একাংশ জানান, সেই ফোন উপেক্ষা করে পাপ্পুর বাড়িতে তল্লাশি করার ফলেই শাসক দলের কোপে পড়েছেন ওই দুই পুলিশ অফিসার। যদিও বিজনবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘গভীর রাতে এলাকার এক মহিলা ফোন করে জানান যে পুলিশ অত্যাচার করছে। আমি কী ঘটেছে সেটা জানতেই কসবা থানার এক এসআইকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু উনি তো ফোন ধরেননি।’’ সোনা পাপ্পু নামে কাউকে চেনেন না বলেও দাবি করেছেন বিজনবাবু।
পুলিশও সরাসরি ভাবে দুই অফিসারকে ‘ক্লোজ’ করার অন্য কারণ দেখিয়েছে। পুলিশকর্তারা জানান, বহু তদন্তের কাজ সময়ে শেষ না করার ফলেই ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে ওই দু’জনকে। যাদবপুর ডিভিশনের আরও ৯ অফিসারের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।