ইন্দ্রজিতের পরিবারের সঙ্গে কোকো ও জোজো। নিজস্ব চিত্র
মায়ের মতোই মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল বাড়ির বড় ছেলের। চোদ্দো বছর আগের ঘটনার এই পুনরাবৃত্তি মেনে নিতে পারছে না নিউ ব্যারাকপুরের বসু পরিবার।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দমদম পার্ক সিগন্যালে ৪৬বি রুটের একটি বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় স্কুটি আরোহী ইন্দ্রজিৎ বসুর (৩৫)। বুধবার রাতে ওই বাসের চালক নিমাই কর্মকারকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সল্টলেকের করুণাময়ীর অফিস থেকে নিউ ব্যারাকপুরের বাড়িতে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন
বেসরকারি সংস্থার ওই কর্মী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, সিগন্যাল সবুজ হওয়ার পরে ৪৬বি এবং আর একটি বাসের মাঝখানে ছিল ইন্দ্রজিতের স্কুটি। আচমকা ৪৬বি রুটের বাসের ধাক্কায় ইন্দ্রজিৎ স্কুটি-সহ পড়ে যান। ওই বাসের এক যাত্রী অরুন্ধতী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ইন্দ্রজিতের দেহ বাসের সামনের চাকায় আটকে গিয়েছে দেখে চিৎকার করেন যাত্রীরা। কিন্তু চালক বাস থামাননি বলে অভিযোগ। ওই অবস্থায় ইন্দ্রজিতের দেহ ঘষটাতে ঘষটাতে অনেকটা রাস্তা চলে যায়। তার পরে বাস থামিয়ে চম্পট দেন চালক।
বুধবার ইন্দ্রজিতের পিসেমশাই গোপাল গুহ মজুমদার জানান, ১৯৯৪ সালে অফিস যাওয়ার পথে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ইন্দ্রজিতের মা রমা বসুর মৃত্যু হয়েছিল। স্বামী সুভাষ বসু মোটরবাইকে করে পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী স্ত্রীকে অফিস পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। কৈখালির কাছে একটি চার্টার্ড বাসের ধাক্কায় মোটরবাইক থেকে ছিটকে যান রমা। তাঁর মাথায় চোট লেগেছিল। হাসপাতালে নিয়ে গেলে রমাদেবীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। এ দিন শোকের আবহে নিউ ব্যারাকপুরের চন্দ্রপল্লি এলাকায় পরিজন-প্রতিবেশীদের স্মৃতিতে ফিরে এসেছে সে দিনের কথা। পরিবার সূত্রে খবর, সুভাষবাবুর দুই ছেলের মধ্যে ইন্দ্রজিৎ বড়। ছোট ভাই অরিজিৎ বসু লন্ডনে পড়াশোনা করছেন। দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি দেশে ফিরছেন।
মাত্র আড়াই বছর আগে বিয়ে হয়েছিল ইন্দ্রজিতের। পরিবার সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বামীর জন্য নিউ ব্যারাকপুরের বিটি কলেজ মোড়ে অপেক্ষা করছিলেন স্ত্রী সুস্মিতা বসু। সেখানে ইন্দ্রজিৎ এলে তাঁর সঙ্গে মধ্যমগ্রাম যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। রাত সাড়ে আটটার পরেও ইন্দ্রজিৎ আসছেন না দেখে মোবাইলে ফোন করেন সুস্মিতা। এক পুলিশকর্মী ইন্দ্রজিতের ফোন ধরে দুর্ঘটনার কথা জানান। পরিবারের সদস্যেরা লেকটাউনে পৌঁছে জানতে পারেন, পথ দুর্ঘটনায় ইন্দ্রজিতের মৃত্যু হয়েছে।
মৃতের পিসেমশাই বলেন, ‘‘বাড়ির ছেলের এই পরিণতি আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না।’’ কোকো ও জোজো নামে ইন্দ্রজিতের দুই সারমেয় রয়েছে। পরিজনেরা জানান, তারাও মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে চুপ হয়ে গিয়েছে। অন্য সময়ে বাড়িতে আগন্তুক দেখলে যারা গোটা বাড়ি মাথায় তোলে, তারা এ দিন শুধু চুপ করে মেঝেয় শুয়ে ছিল।
প্রাথমিক তদন্তের পরে দুর্ঘটনার জন্য চালকের ভূমিকাকেই কাঠগড়ায় তুলেছিলেন বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তারা। এ দিন একই সুরে মৃতের মামিমা গোপা ঘোষ দস্তিদার বলেন, ‘‘বেঘোরে আমাদের ছেলেটার প্রাণ গেল। শুধু গ্রেফতার করলে চলবে না, ওই চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’