‘‘হুজুর! কুকুরের চিৎকারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি!’’
বিচারপতি: আমি কুকুর খুব পছন্দ করি।
‘‘দিনরাত পোষা কুকুরগুলো একটানা চিৎকার করে চলছে।’’
বিচারপতি: কুকুরের কাজই তো চিৎকার করা।
‘‘ওদের চিৎকারে আমার এক মাসের মেয়ে, বৃদ্ধ বাবা-মা রাতে ঘুমোতে পারছেন না।’’
বিচারপতি: রাতেই তো কুকুর বেশি ডাকবে।
‘‘ওদের চিৎকারের ঠেলায় দিনরাত জানলা-দরজা বন্ধ করে রাখতে হয়। এত চেঁচায় যে, জানলার কাচ কাঁপে!’’
বিচারপতি: কুকুরের চিৎকার কমানোর কোনও প্রশিক্ষণ রয়েছে? আমার তো জানা নেই।
‘‘ওরা এত জোরে চেঁচায় যে, ভয়ে কেঁদে ওঠে আমার মেয়ে। মা-বাবাও অতিষ্ঠ।’’
বিচারপতি: কথায় বলে, যে কুকুর বেশি চেঁচায়, সে তত কামড়ায় না।
এই কথোপকথন বুধবার দুপুরের। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর এজলাসে।
প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার। তাঁর দুই পোষ্যের চিৎকারে অতিষ্ঠ হয়ে সোনারপুর থানায় বার তিনেক অভিযোগ জানিয়েছেন সুমন বল। সেখানকার বিডিও অফিসের সামনে বোসপুকুর রোডে তাঁর দোতলা বাড়ি। মুখোমুখি দোতলা বাড়িটি ওই প্রতিবেশীর।
কুকুরের চেঁচামেচি পুলিশ বন্ধ করতে পারেনি, এই অভিযোগ তুলে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার মামলা ঠুকেছেন তিনি। সেই মামলার শুনানিতেই বিচারপতি বাগচী সুমনবাবুর কৌঁসুলি কবিতা মুখোপাধ্যায়ের উদ্দেশে ওই কথা বলেন।
তার পরে তিনি সরকারি কৌঁসুলির কাছে জানতে চান, সোনারপুর থানার পুলিশের বক্তব্য। সরকারি কৌঁসুলি শুভব্রত দত্ত জানান, সুমনবাবুর প্রতিবেশীর দু’টি কুকুর রয়েছে। একটি অ্যালসেশিয়ান, অন্যটি হাস্কি। দু’টি কুকুর পোষার লাইসেন্সও রয়েছে তাঁর। দোতলায় কাচের বাতানুকূল একটি ঘরে তারা থাকে। শুভব্রত আদালতে একটি ছবি দেখিয়ে জানান, সুমনবাবুর বিরুদ্ধে ওই পোস্টার লাগানোর অভিযোগ করেছেন তাঁর প্রতিবেশী। কুকুরের চিৎকার আটকাতে প্রতিবেশীর উদ্দেশে ওই পোস্টার টাঙানো হয়েছে বলে অভিযোগ। তার ভিত্তিতে সুমনবাবুর বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে।
তা শুনে বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘পুলিশ ওই মামলা দায়ের না করলেই পারত।’’
বিচারপতি বাগচী এ দিন সুমনবাবুর আইনজীবীকে জানান, কুকুর নিয়ে পাড়ায় পরবর্তীকালে কোনও অশান্তি বা গোলমাল হলে তাঁর মক্কেল সংশ্লিষ্ট এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন। ম্যাজিস্ট্রেট আইমাফিক ব্যবস্থা নেবেন।