‘মা-মাটি পাঁপড় পাঁচ টাকা! ‘অন্য কী বলব, বলুন তো?’

শনিবার ২১ জুলাইয়ের সভায় পাঁপড় বেচার জন্য কাকভোরে আমতা থেকে ধর্মতলায় হাজির হন লিয়াকত মল্লিক। চাঁদনি চকের এক হোটেলে ভেজেছেন ৬০টি গোল-বড় মশলা পাঁপড়।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০০:৫৮
Share:

চলছে বিক্রিবাটা। —নিজস্ব চিত্র।

‘ময়দান’ ছাড়লেন না লিয়াকত!

Advertisement

ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতেই এ দিক-ও দিক দৌড় লাগাচ্ছেন কর্মী, সমর্থকেরা। কিন্তু ‘কুছ পরোয়া নেহি’ মনোভাবে মঞ্চের পিছনের রাস্তায় তখনও দাঁড়িয়ে ষাট বছরের ওই বৃদ্ধ। হাতে অ্যালুমিনিয়ামের গামলায় প্লাস্টিকে মোড়া ‘মা-মাটি’ পাঁপড় ভাজা। সেগুলি বিক্রির জন্য ভিজতেও আপত্তি নেই তাঁর।

গ্রামের লোকের বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস আছে বলে দাবি করেই চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের দিকে হাঁটা দিলেন ডোরা কাটা লুঙ্গি ও আকাশি জামা পরা লিয়াকত। বৃষ্টি একটু ধরতেই প্লাস্টিকের মোড়ক খুলে হাতে একটা পাঁপড় তুলে বলতে শুরু করেন, ‘মা-মাটি পাঁপড়! এক পিস ৫ টাকা!’

Advertisement

শনিবার ২১ জুলাইয়ের সভায় পাঁপড় বেচার জন্য কাকভোরে আমতা থেকে ধর্মতলায় হাজির হন লিয়াকত মল্লিক। চাঁদনি চকের এক হোটেলে ভেজেছেন ৬০টি গোল-বড় মশলা পাঁপড়। ভেজা আবহাওয়ায় যাতে পাঁপড় নেতিয়ে না যায়, তার ব্যবস্থাও করেছেন। বড় বড় দু’টি প্লাস্টিকে ভরে নিয়েছেন পাঁপড়। এর নাম কি সত্যিই ‘মা-মাটি পাঁপড়’? বৃদ্ধ ফোকলা দাঁতে হেসে বললেন, ‘‘আজকের দিনে অন্য কী বলব, বলুন তো?’’

লিয়াকতকে সমর্থন করলেন সভায় যোগ দিতে আসা কর্মী স্বপন গোস্বামীও। তিনি বলেন, ‘‘আজ সবই মা-মাটি-মানুষের। অন্য কিছু আর মনেই আসে না।’’ পাঁচ টাকার কয়েন বার করে একটা পাঁপড় কিনে নিলেন তিনি। তত ক্ষণে বৃষ্টি কমেছে, ফের রাস্তায় নেমেছেন মানুষ। তা দেখে বেজায় খুশি লিয়াকতও। বলেন, ‘‘আর কয়েকটা পাঁপড় বাকি। তাড়াতাড়ি বিক্রি করে ফিরতে হবে। দেরি হলে বাসে বড্ড ভিড় হবে।’’ কথার মাঝেই বৃদ্ধকে ঘিরে ধরলেন বেশ কয়েক জন খদ্দের।

তবে এ বার বাজার মন্দা শ্যামনগরের রফিকের। লোকাল ট্রেনে বিশেষ ধরনের চিরুনি ফেরি করা ওই যুবক প্রতি বছরই ২১ জুলাই সকালে হাজির হন ধর্মতলা চত্বরে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ‘মা-মাটি-মানুষ খোঁপা’ বানানোর বিশেষ চিরুনি নিয়ে রাস্তায় নামলেও বাদ সেধেছে বৃষ্টি। অগত্যা রাস্তা ছেড়ে ধর্মতলা মেট্রো স্টেশনের গেটে এক কোণে দাঁড়ানো রফিক বললেন, ‘‘সভা তো শেষ হতে চলল। ৩০০ পিস চিরুনি এনেছিলাম। মাত্র ৭০টা বিক্রি হয়েছে।’’ লোহার রডের উপরে বসানো ফাইবারের তৈরি মডেলের মাথার হাল্কা বাদামি চুলে মেয়ে মুসকানের নাম লেখা চিরুনি দিয়ে নানা কায়দার খোঁপা তৈরি করে দেখান রফিক।

প্রতি বছর ওই কায়দা দেখানোর মাঝেই চোঙার শব্দ উপেক্ষা করে রফিক চিৎকার করেন, ‘মা-মাটি মানুষ খোঁপা। দাম মাত্র ২০ টাকা‍!’ এ বছর অবশ্য চোঙার শব্দে বারবার চাপা পড়ছে রফিকের গলা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন