‘ক্যানসারে তো ভুগছি, এ বার কি শিয়রে ডেঙ্গিও!’

বাড়ির পাশেই ফাঁকা জমিতে পড়ে থাকে জঞ্জালের স্তূপ। সেখানে বৃষ্টির জল জমে মশার বংশবিস্তারের আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েছে!

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০২:০২
Share:

আতঙ্ক: বাড়ির পাশে ফাঁকা জমিতে জঞ্জালের স্তূপ দেখাচ্ছেন অসীমবাবু। গোলপার্কের কাঁকুলিয়া রোডে। নিজস্ব চিত্র

ফাঁকা জমিতে জঞ্জাল না ফেলার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। এমনকি কারও জমিতে জঞ্জাল ফেলা হলে মালিককে জরিমানা করার পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ হবে বলেও সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে সে সব রয়ে গিয়েছে খাতায়-কলমেই, তার প্রমাণ গোলপার্কের কাঁকুলিয়া রোড। যেখানে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রাম্ত ৮২ বছরের বৃদ্ধ অসীম মুখোপাধ্যায় ডেঙ্গির আতঙ্কে প্রতিদিন কাটাচ্ছেন!

Advertisement

কারণ, তাঁর বাড়ির পাশেই ফাঁকা জমিতে পড়ে থাকে জঞ্জালের স্তূপ। সেখানে বৃষ্টির জল জমে মশার বংশবিস্তারের আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েছে! তাঁর দাবি, বহুবার আবেদন করেও ফাঁকা জমিতে জঞ্জাল ফেলা আটকাতে পারেননি তিনি। এ দিকে ডেঙ্গি-আতঙ্ক কাটাতে কার কাছে যেতে হবে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে সে দিকেও নজর করতে পারছেন না। শুধু ডেঙ্গি আতঙ্ক নয়, ওই ভাবে আবর্জনা জমে থাকায় বায়ুদূষণও হচ্ছে। এর জেরে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকের।

গত বারো বছর ধরে কাঁকুলিয়া রোডে সপরিবার থাকেন অসীমবাবু। গত বছর ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে। বর্তমানে তাঁর কেমোথেরাপি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন স্ত্রী। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত অবস্থা ওই পরিবারের। কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে বসে স্নাতক স্তরের হিসাবশাস্ত্রের বইয়ের লেখক অসীমবাবু বলে চলেন, ‘‘বাড়ির পাশেই প্রতিদিন জঞ্জাল জমা হচ্ছে। কার কাছে বললে যে এই সমস্যা মিটবে, সেটাই বুঝতে পারছি না! এমনিতেই অসুস্থতার কারণে সে ভাবে যাতায়াত করতে পারি না। তার উপরে এই ডেঙ্গি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ক্যানিংয়ে গ্রামে রবিনহুড আর্মি

অসীমবাবুর এক ছেলে কালীচরণ মুখোপাধ্যায় জানালেন, কাজের সূত্রে তাঁকে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছর পুজোর আগে এক বার কলকাতা পুরসভা জায়গাটা পরিষ্কার করে দিয়েছিল। তার পরে দু’তিন দিন পাহারাও দিয়েছিলাম, যাতে কেউ জঞ্জাল ফেলতে না পারেন। কিন্তু এ ভাবে পাহারা দিয়ে আটকানো তো সম্ভব নয়। ফলে আবারও যে কে সেই অবস্থা!’’ পুরসভার আট নম্বর বরোর ৯০ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন ওই এলাকা। বরো অফিসের তরফে দাবি করা হয়েছে, আগে একাধিক বার ওই জায়গাটি পরিষ্কার করা হয়েছে। আবারও করা হবে।

প্রসঙ্গত, ফাঁকা জমিতে জঞ্জাল ফেলা ও জমা জলের বিপদ ঠেকাতে পুর আইনকে আরও জোরদার করেছে কলকাতা পুরসভা। বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও জমি পরিষ্কার না করলে পুর আইনের ৪৯৬ (এ) ধারা অনুযায়ী এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার কথা বলা হয়েছে। এমনকি জমির মালিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপও করা হবে। পুরসভা সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে কিন্তু সে সব কিছুই হয়নি।

উপরন্তু বাসিন্দাদের বহুবার নিষেধ সত্ত্বেও ওখানে নোংরা ফেলা আটকানো যায়নি কেন? বরো অফিসের এক কর্তার কথায়, ‘‘জমিটি নিয়ে আইনি ঝামেলা রয়েছে। সেটাই বড় সমস্যা।’’ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় আবার জঞ্জাল সাফাইয়ের ক্ষেত্রে লরির ঘাটতির যুক্তি দিয়েছেন। বৈশ্বানরবাবুর কথায়, ‘‘আট নম্বর বরো অনেকটা জায়গা। জঞ্জাল সাফ করে নিয়ে যেতে অনেক সময়ই লরি পেতে অসুবিধা হয়। তবে সব ফাঁকা জমি পরিষ্কারেই আমরা উদ্যোগী হয়েছি। এটাও করে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন