হাওড়া স্টেশনে পার্সেল বুকিংয়ের লাইন। নিজস্ব চিত্র
রেল মন্ত্রকের নির্দেশ অনুসারে ‘স্পর্শকাতর’ বিভাগগুলিতে চার বছরের বেশি থাকা যাবে না। তার মধ্যেই অফিসার বা কর্মীদের বদলি করে দিতে হবে।
কিন্তু অভিযোগ, রেলের এই নির্দেশের পরোয়া না করে হাওড়া স্টেশনের পূর্ব রেলের কমার্শিয়াল দফতরের কর্মী ও অফিসারদের একাংশ একই পদে, একই বিভাগে রয়ে গিয়েছেন দেড় থেকে দু’দশক। রেলকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, এর জেরে পার্সেল-সহ কমার্শিয়াল দফতরের বিভিন্ন বিভাগ হয়ে উঠছে দুর্নীতির আখড়া। অভিযোগ, হাওড়া স্টেশনের পার্সেল বিভাগ-সহ সুপার গোডাউন, পেরিশেবল গুডস ডেলিভারি বিভাগ, পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব রেলের আউটওয়ার্ড গুদাম, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ইনওয়ার্ড গুদাম, লিজ হোল্ডার গুদাম-সহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে থাকা অফিসার ও কর্মীদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে।
রেলের অফিসারদের একাংশের অভিযোগ, হাওড়ার পার্সেল বিভাগ বর্তমানে সোনা ও নগদ টাকা পাচারের অন্যতম করিডর হয়ে উঠেছে। সেখানে এক শ্রেণির ক্লিয়ারিং এজেন্টরা চরম ‘দাদাগিরি’ করছেন। দুর্নীতির জেরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে রেল।
রেলকর্মীদের সংগঠন ন্যাশনাল ফ্রন্ট অব ট্রেড ইউনিয়নসের নেতাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বদলি না হওয়ার জন্যই দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা দরকার। না হলে বিস্ফোরক পাচারের মত বড় ঘটনাও ঘটতে পারে হাওড়া স্টেশনে।
ওই সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তথা সংগঠনের জাতীয় স্তরের সহ-সভাপতি অমিয় সরকার বলেন, ‘‘যাঁরা এত বছর ধরে একই পদে থেকে গিয়েছেন, শুধু তাঁদের নিয়ে তদন্ত করলেই হবে না, কারা, কী স্বার্থে নিয়ম না মেনে ওই কর্মী-অফিসারদের একই পদে বহাল রেখেছেন, তারও তদন্তের প্রয়োজন।’’ অমিয়বাবুর অভিযোগ, চাপে পড়ে কখনও কাউকে বদলি করা হলেও তা একটি স্পর্শকাতর পদ থেকে অন্য আর একটি স্পর্শকাতর পদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
গত জানুয়ারিতে হাওড়ার এন জে টু গুদামে পার্সেলের ভিতরে ভারতীয় টাকার ১, ২, ৫ ও একশো টাকার মোট ১৫ লক্ষ টাকার নোট-সহ প্রচুর বিদেশি সিগারেট উদ্ধার হয়। তারও এক মাস আগে ওই দফতরেই পার্সেলের ভিতরে সোনা পাচারের সময়ে তা ধরা পড়ে। এর পরে রেল কিছু দিন কড়াকড়ি করায় পাচার প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে। কিন্তু তার পরে ফের একই অবস্থা। হাওড়া স্টেশনের কমার্শিয়াল দফতরের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, বর্তমানে পার্সেল দফতর এক শ্রেণির এজেন্টদের কাছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার বেআইনি মাল আমদানি ও রফতানির অন্যতম করিডর হয়ে উঠেছে।
হাওড়ার পার্সেল দফতরের কর্মী ও রেলের ন্যাশনাল ফ্রন্ট অব ট্রেড ইউনিয়নসের সভাপতি সুনীল শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘লাগেজ ভ্যানে যেখানে তিন টনের বেশি মালপত্র যাওয়ার কথা নয়, সেখানে স্পর্শকাতর পদে দীর্ঘ দিন ধরে থাকা অফিসারদের মদতে ক্লিয়ারিং এজেন্টরা পাঁচ টনেরও বেশি মাল পাঠাচ্ছে। যার ফলে ট্রেনের কামরা ওভারলোড হয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করছে।’’
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এমন ঘটে থাকলে অবশ্যই খোঁজ করা হবে। রেল মন্ত্রকের নির্দেশ অমান্য করার প্রশ্নই নেই। এমন হয়ে থাকলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’