Happy Hypoxia

নিঃশব্দে কমছে অক্সিজেন, বাড়ছে চিন্তা

শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা নামছে, কিন্তু তা বুঝতেই পারছেন না রোগী।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৫৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

মাস্ক ছাড়া অনায়াসে ঘোরাঘুরি। কয়েক দিন জ্বর বা শুকনো কাশি বা গলা ব্যথা থাকলেও পরীক্ষা করাতে অনীহা। এমনই গা ছাড়া মনোভাব ক্রমশ বাড়ছে মানুষের মধ্যে। তেমনই করোনা পরিস্থিতিতে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য বাড়িতে পাল্স অক্সিমিটার কিনলেও এখন তা ব্যবহারের প্রবণতাও ক্রমশ কমছে। আর তাতেই ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

তাঁদের মতে, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা নামছে, কিন্তু তা বুঝতেই পারছেন না রোগী। যখন টের পেয়ে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন, তত ক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। অনেক সময়েই চেষ্টা করেও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতিতে এখন এই রোগ অর্থাৎ ‘হ্যাপি হাইপক্সিয়া’-তে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, সামান্য জ্বর, শুকনো কাশি বা গলা ব্যথা হলে সেটিকে সাধারণ ফ্লু কিংবা আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণ না ভেবে, তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি। তেমনই পাল্স অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করাও প্রয়োজন। তাতে বাড়াবাড়ির আগে কিছুটা আন্দাজ মিলতে পারে।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘যত দিন করোনা অতিমারি পরিস্থিতি চলবে, তত দিন পাল্স অক্সিমিটারে পরীক্ষা করা এবং সামান্য সমস্যাতেও চিকিৎসকের কাছে যাওয়াটা জরুরি। তাতে অনেক সময়ই হ্যাপি হাইপক্সিয়া থেকে বাঁচা যায়।’’ এখন সামান্যতম সমস্যাকেও উপেক্ষা করা অনুচিত বলে মত পালমোনোলজিস্ট অনির্বাণ নিয়োগীর। তিনি বলেন, ‘‘জ্বর হোক বা না হোক, শরীরে হাইপক্সিয়ার কিছু লক্ষণ থাকতে পারে। তাই সমস্যা যত সামান্যই হোক, সেটাকে অবহেলা করা চলবে না।’’

Advertisement

সম্প্রতি কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ হাসি দাশগুপ্তের মৃত্যুর একটি কারণ হ্যাপি হাইপক্সিয়া বলেও জানান চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কম হওয়াকে হাইপক্সিয়া বলা হয়। হাঁপানির আক্রমণ, সিওপিডি, হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে ফুসফুসে জল জমলে কিংবা যে কোনও কারণে ফুসফুসের বাইরেও জল জমলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে। কেউ এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে তাঁর শ্বাসকষ্ট হবেই। এ ছাড়াও অস্বস্তি ভাব, মাথা ঘোরানো, নাড়ির গতি বেড়ে বুক ধড়ফড় করা, প্রচণ্ড দুর্বলতা, রক্তচাপ কমে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া অর্থাৎ সিনকোপ হতে পারে। কিন্তু করোনার ক্ষেত্রে এ সব কিছু না হয়েও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে পারে। তার বেশ কিছু প্রমাণও মিলেছে। সেটাই বিপজ্জনক বলে মত চিকিৎসকদের।

তাঁরা জানাচ্ছেন, করোনার ক্ষেত্রে হ্যাপি হাইপক্সিয়া অত্যন্ত নীরবে আঘাত করছে। কারণ তাতে আক্রান্ত রোগী নিজে মনে করছেন তাঁর শরীরে কোনও অসুবিধা নেই। তিনি সুস্থ। অরুণাংশুবাবুর মতে, মাত্রা ৯৪ শতাংশের নীচে নেমে গেলেই অক্সিজেন দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু জ্বরে কয়েক দিন আক্রান্ত, ভিতরে করোনা হয়ে রয়েছে, তা সত্ত্বেও হয়তো রোগী বাড়িতেই তিন-চার দিন কাটিয়ে দিলেন। এর পরে যখন চিকিৎসকের কাছে গেলেন, তখন অক্সিজেনের মাত্রা ৭৫-৮০ তে নেমে গিয়েছে।

রোগীর একাংশের এই গা ছাড়া মনোভাবই কিছু ক্ষেত্রে বড় বিপদ ডাকছে বলে জানাচ্ছেন শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারও। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও, মৃত্যুর হার কিন্তু কমেনি। তাই জ্বর, কাশি-সর্দিকে সামান্য ভাবার প্রবণতা কাটাতে হবে। ওই রোগীই যখন ৫-৭ দিন কাটিয়ে হাসপাতালে আসছেন, তখন দেখা যাচ্ছে তিনি করোনা, নিউমোনিয়া হয়ে হ্যাপি হাইপক্সিয়ায় আক্রান্ত। মাস্ক পরা, হাত ধোয়ার মতো পাল্স অক্সিমিটারের ব্যবহারটাও চালিয়ে যেতে হবে।’’ তিনি জানান, পাহাড়ে ওঠার সময়ে মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম গেলে ঘুম ঘুম ভাব, মাথায় ব্যথা যেমন মারাত্মক, তেমনই সাধারণ জ্বর বা অন্য উপসর্গে শরীরে হ্যাপি হাইপক্সিয়া হচ্ছে কি না সেটা নজর রাখাও জরুরি। যাঁরা সর্দি-কাশি বা হাঁপানি, সিওপিডি, সুগার, রক্তচাপে ভোগেন তাঁদের পাশাপাশি বয়স্কদের প্রতিনিয়ত অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করাটা এই সময়ে খুব প্রয়োজন বলেই জানাচ্ছেন অনির্বাণবাবুও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন