ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স দিতে বাজারগুলিতে শিবির করবে পুর প্রশাসন।
নির্বাচনী আচরণবিধির জেরে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের পাশাপাশি ধাক্কা খাচ্ছে রাস্তা সারাইয়ের কাজও। বর্ষার আগে ওই কাজ থমকে যাওয়ায় ফাঁপরে পড়েছে পুর প্রশাসন। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, পানীয় জল সরবরাহ, জঞ্জাল অপসারণ ও জনস্বাস্থ্য কর্মসূচির কাজ চললেও কোনও কাজের ক্ষেত্রেই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নতুন করে দরপত্র ডাকা যাবে না। বন্ধ করা হয়েছে সবার জন্য গৃহ এবং গীতাঞ্জলি প্রকল্প। তবে ছাড় দেওয়া হয়েছে ‘রূপশ্রী’কে। শুক্রবার নির্বাচন কমিশন এই ছাড়পত্রের কথা জানিয়েছে।
ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগেই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম পুর কমিশনারের মাধ্যমে প্রতিটি দফতরকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, যা কিছু কাজ বাকি রয়েছে, দ্রুত টেন্ডার ডেকে তা করে ফেলতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশ মতো কাজ না হওয়ায় এখন সমস্যা বাড়ছে। বিশেষ করে রাস্তা সারাইয়ের কাজ নিয়ে বিপাকে
পড়েছেন পুরকর্তারা।
এ দিকে, পুরসভার একাধিক মেয়র পারিষদ থেকে কাউন্সিলর— সকলেই চান, তাঁদের এলাকার প্রকল্প দ্রুত শেষ হোক। কিন্তু বাদ সাধছেন পুর অফিসারেরা। তাঁদের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি এ ব্যাপারে কঠোর। তাই কিছু করা যাচ্ছে না।
পুরসভা সূত্রের খবর, এমনিতেই শহরের রাস্তা সারাইয়ের ক্ষেত্রে পরিবেশ আদালতের খাঁড়া মাথার উপরে ঝুলছে। আদালত বলেছে, যে হটমিক্স দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়, তার কারখানা শহরের ভিতরে রাখা যাবে না। কলকাতায় পুরসভার দু’টি হটমিক্স কারখানা রয়েছে। আদালতের ওই নির্দেশের পর থেকে নতুন রাস্তা তৈরি তো দূর, হটমিক্সের অভাবে ভাঙাচোরা রাস্তা সারানোও বন্ধ করতে বাধ্য হয় পুরসভা। পরে আদালতে বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত শহরে হটমিক্স কারখানা চালানোর অনুমতি মেলে। এর পরেই মেয়রের নেতৃত্বে এক বৈঠকে জানানো হয়, এপ্রিলের মধ্যে দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় নতুন
কাজের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
পুরসভার এক পদস্থ কর্তা জানান, ২০১৯-এর আদর্শ আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্যও নতুন করে দরপত্র ডাকা যাবে না। গত ১০ তারিখ ভোটের দিন ঘোষণা হয়েছে। ওই ঘোষণার আগে কোনও প্রকল্পের টেন্ডার-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে থাকলেও যদি ১০ মার্চের পরে কাজের বরাত দেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে সেই কাজও বন্ধ রাখতে হবে। ভোটের এই আচরণবিধি তাঁদের ভাবিয়ে তুলেছে বলে জানিয়েছেন মেয়র পারিষদ (রাস্তা) রতন দে। রতন জানান, অনেক কাজের ক্ষেত্রেই দরপত্র ও বরাতের প্রক্রিয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এ দিকে, ২১ এপ্রিলের পরে আবার হটমিক্স কারখানা চালু রাখা যাবে না। এই দ্বিমুখী চাপে চিন্তা বাড়ছে পুরকর্তাদের।
রাস্তা সারাইয়ের সঙ্গে যুক্ত ডিজি-দের নিয়ে গত বুধবার এক বৈঠক হয় পুর ভবনে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২১ এপ্রিলের আগেই যাতে হটমিক্স কারখানা তৈরি করে ফেলা যায়, তার জন্য জোরকদমে চেষ্টা চলছে।
আবার কলকাতা শহরের কয়েকটি পার্কিং লটের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে ১০ মার্চের আগেই। কিন্তু বরাত দেওয়া হয়নি। তাই সেই প্রক্রিয়াও বন্ধ রাখতে হয়েছে পুরসভাকে। ফলে ওই সমস্ত পার্কিং লট থেকে আয়ও বন্ধ
হয়ে গিয়েছে।
পুরসভার সমাজকল্যাণ দফতরের মাধ্যমে নিরাশ্রয় ও নিম্নবিত্ত শহরবাসীরা ‘সবার জন্য ঘর’ প্রকল্পে সহায়তা পান। সেই কাজও আপাতত বন্ধ। সমস্যা বাড়ছে ‘গীতাঞ্জলি’র মতো প্রকল্প নিয়েও। বহু আবেদন জমা পড়লেও এই মুহূর্তে কাউকে কিছু দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর বিয়ে ঠিক হয়ে গেলেও ১০ মার্চের পরে ‘রূপশ্রী’র কোনও আবেদনে সাড়া দিতে পারছে না পুর প্রশাসন। পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অসুবিধা হচ্ছে জানি, কিন্তু কিছু করার নেই। রাজ্যের মুখ্যসচিবের নির্দেশের
অপেক্ষায় আছি।’’