Fire Cracker

কয়েক ঘণ্টায় ধৃত দুশোর বেশি, তবুও পরীক্ষায় ব্যর্থ পুলিশ

মঙ্গলবারের ধরপাকড়ের হিসাব দিয়ে জানানো হয়েছে, কালীপুজোর রাতেই বাজির বিধিভঙ্গের জন্য ৪৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে মোট ১০২৬.৭৫ কিলোগ্রাম বাজি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৪৮
Share:

অবাধ: সোমবারের মতোই চলল দেদার শব্দবাজি ফাটানো। মঙ্গলবার, ই এম বাইপাস সংলগ্ন রাজডাঙা এলাকায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

আদালতের নির্দেশ রয়ে গেল খাতায়-কলমেই! কালীপুজোর রাতে এবং তার পরের দিন, মঙ্গলবার নিষিদ্ধ বাজি নিয়ন্ত্রণে কার্যত ব্যর্থ হল পুলিশ। সেই সুযোগে পাড়ায় পাড়ায় ফাটতে থাকা বাজির দাপটে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। অসুস্থ হয়ে পড়ে থানায় ফোন করলেন কেউ কেউ। অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে উত্তরই আসেনি, কিছু ক্ষেত্রে ‘শান্ত থাকুন, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’ গোছের আশ্বাস দিয়ে দায় সারল থানা। এই দু’দিনের অভিজ্ঞতা প্রশ্ন তুলে দিল, যে পরিমাণ বাজি ফেটেছে, পর্যাপ্ত পুলিশি নজরদারি থাকলে কী ভাবে তা হয়?

Advertisement

এ নিয়ে কলকাতা পুলিশের বড় কর্তারা আলাদা করে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শুধু মঙ্গলবারের ধরপাকড়ের হিসাব দিয়ে জানানো হয়েছে, কালীপুজোর রাতেই বাজির বিধিভঙ্গের জন্য ৪৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে মোট ১০২৬.৭৫ কিলোগ্রাম বাজি। পুলিশ তৎপর না থাকলে এই পরিমাণ বাজি উদ্ধার সম্ভব নয় বলেই দাবি করেছে লালবাজার। যদিও আরও একটি পরিসংখ্যান ভাবাচ্ছে। দেখা গিয়েছে, কালীপুজোর রাত ১১টা পর্যন্ত বাজির বিধিভঙ্গের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল ২৫৯ জনকে। উদ্ধার হয়েছিল ৪২০.৬৫ কিলোগ্রাম বাজি। অর্থাৎ, ওই সময়ের পর থেকে কয়েক ঘণ্টায় গ্রেফতার হয়েছেন আরও ২২১ জন। উদ্ধার হয়েছে আরও ৬০৬ কিলোগ্রাম বাজি। দীপাবলির রাত ৮টা পর্যন্ত ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে উদ্ধার হয়েছে ৩৬ কেজি নিষিদ্ধ শব্দবাজি।

রাত যত বেড়েছে, বাজির দাপটও যে তত বেড়েছে, তা এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট বলে মত অনেকের। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজির দাপট বাড়ার একই চিত্র দেখা গিয়েছে দীপাবলিতেও। পুলিশেরই একাংশের দাবি, সোমবার বৃষ্টির জন্য বাজি ফাটানোয় যেটুকু বিরতি ছিল, মঙ্গলবার আকাশ পরিষ্কার হতেই দেখা যায় বিরতিহীন উৎসাহ। বেশির ভাগ জায়গায় পুলিশ ছিল কালীপুজোর রাতের মতোই নীরব দর্শকের ভূমিকায়।

Advertisement

কালীপুজোর রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে সল্টলেক সুইমিং পুলের কাছে। সেখানে এক নেতার মদতপুষ্ট পুজোয় ওই সময়ে দেদার শব্দবাজি ফাটানো চলছিল। অনেকেই ভয়ে কান চেপে ছোটাছুটি করছিলেন। কিন্তু কিছু দূরে দাঁড়ানো পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। এক সময়ে বাজির তীব্র আওয়াজ এবং আগুনের ফুলকি ছিটকে আসার ভয়ে অনেকেই দ্রুত এলাকা ছাড়েন। সেখানেই এক উদ্যোক্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘জানি, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সন্ধ্যা আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বাজি ফাটানোর সময়। কিন্তু ওই সময়ে মণ্ডপে দর্শকের ভিড় থাকে। তাই প্রতি বারই বেশি রাতে আমাদের বাজি ফাটানো হয়। এলাকায় থাকতে হলে কালীপুজোর এই আনন্দের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।’’

পুলিশ কেন দর্শক? ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক পদস্থ পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন অফিসারদের থেকে নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কিছুই করা সম্ভব নয়।’’ একই দাবি খিদিরপুরের একটি পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের। রাত ১টা নাগাদ সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, দেদার বাজি ফাটানো চলছে। কোনটারই আওয়াজ ৯০ ডেসিবেলের মধ্যে নয়। এমন ভাবে বাজির শেল এবং রকেট ফাটানো হচ্ছে যে, সেগুলির কোনটি কোন দিকে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে কারও কোনও হুঁশ নেই।

মঙ্গলবার দীপাবলির সন্ধ্যায় একই ভাবে বাজি ফাটানোর খবর মিলল কসবার সুইন হো লেনে। সেখানে একসঙ্গে অনেকগুলি কালিপটকা পর পর বসিয়ে তাতে আগুন ধরিয়েই ছুটতে দেখা গেল কয়েক জনকে। বেলেঘাটা এলাকার একটি পুজোর সামনে আবার দেদার চকলেট বোমা ফাটানোর অভিযোগ উঠল। স্থানীয়দের অভিযোগে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও পরিস্থিতির কোনও বদল হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, বরং রাতের দিকে আওয়াজ আরও বেড়ে গিয়েছিল। এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘কোথাও কোনও অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। কালীপুজোর রাতে বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি এনেছিল। দীপাবলিতে সেই নিস্তার মেলেনি।’’

বাজির দৌরাত্ম্যে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে রক্ষা পেল একটি পাড়া। মানিকতলা এলাকার একটি পুজো মণ্ডপের সামনের ঘিঞ্জি এলাকায় সোমবার গভীর রাতে বাজি ফাটানো চলছিল। সেই আগুনের ফুলকি একটি টালির চালের নীচের প্লাস্টিকে লাগে। দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে স্থানীয়েরাই কোনও মতে তা নেভাতে চেষ্টা করেন। অল্পের জন্য রক্ষা পায় গোটা পাড়া। রাত আড়াইটে নাগাদ সেখানে গিয়ে দেখা গেল, নতুন উদ্যমে বাজি ফাটানো চলছে ওই এলাকায়! এক স্থানীয় বাসিন্দাকে প্রশ্ন করায় বললেন, ‘‘আগুন তো ঘণ্টাখানেক হল নিভে গিয়েছে। অল্প ছোট আগুন লেগেছিল। সে জন্য কি বাজি ফাটানো বন্ধ করা যায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন