নিউ মার্কেটে ফের আগুন, পুড়ল আলুপট্টি

তখন দুপুর সাড়ে বারোটা। সকালের বাজারের পরে মালপত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলেন কিছু ব্যবসায়ী। হঠাৎই বাজারের কোনা থেকে ধোঁয়া দেখে চিৎকার করে ওঠেন কয়েক জন। সঙ্গে সঙ্গে হুড়োহুড়ি করে বাজার থেকে ছুটে পালাতে থাকেন সকলে। মালপত্র সরাতেও ব্যস্ত হয়ে পড়েন বেশ কয়েক জন। ২১ দিনের মাথায় ফের আগুন নিউ মার্কেট এলাকায়। গত ২৬ এপ্রিল আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল সিটি মার্ট। এ বার ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই নিউ মার্কেট সংলগ্ন এস এস হগ মার্কেটের আলুপট্টি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৫ ০৩:১৭
Share:

আগুনের গ্রাসে বাজার। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

তখন দুপুর সাড়ে বারোটা। সকালের বাজারের পরে মালপত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলেন কিছু ব্যবসায়ী। হঠাৎই বাজারের কোনা থেকে ধোঁয়া দেখে চিৎকার করে ওঠেন কয়েক জন। সঙ্গে সঙ্গে হুড়োহুড়ি করে বাজার থেকে ছুটে পালাতে থাকেন সকলে। মালপত্র সরাতেও ব্যস্ত হয়ে পড়েন বেশ কয়েক জন।
২১ দিনের মাথায় ফের আগুন নিউ মার্কেট এলাকায়। গত ২৬ এপ্রিল আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল সিটি মার্ট। এ বার ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই নিউ মার্কেট সংলগ্ন এস এস হগ মার্কেটের আলুপট্টি। সোমবার দুপুরে ওই পট্টিতে আগুন লাগে। দমকলের ২০টি ইঞ্জিন প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনলেও, ততক্ষণে পুড়ে গিয়েছে পুরো বাজারটিই। দমকলের প্রাথমিক অনুমান, বাজারের ভিতরে থাকা মিটার ঘরে শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছিল। তবে কারণ খুঁজতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি দমকল সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। আলুপট্টির আগুন মাছ বাজারে ছড়িয়ে না পড়লেও সেখানের ব্যবসা এ দিন পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয়।

Advertisement

দমকল সূত্রের খবর, দুপুর ১২টা ৪২ মিনিটে সদর অফিসে ফোন করে নিউ মার্কেটের আলুপট্টিতে আগুন লাগার খবর দেওয়া হয়। প্রথমে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন পাঠানো হলেও আগুনের তীব্রতা দেখে আরও ১৮টি ই়ঞ্জিনকে ডেকে পাঠানো হয়। ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, খবর দেওয়ার প্রায় আধ ঘণ্টা পরে দমকলের ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। আর দমকলের দেরির জন্যই আগুন চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও ডিজি দমকল এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, দমকল খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। যথেষ্ট তাড়াতাড়িই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, দুপুরে আলুপট্টির একটি বন্ধ ঘর থেকে প্রথমে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। স্থানীয় লোকজনই জল এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই ঘর থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের দোকান ও একটি মিটারঘরে। আর তার পরেই আগুন বড় আকার নেয়। ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ। স্থানীয় বাসিন্দা ভিকি মল্লিক বলেন, ‘‘রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ ধোঁয়া নজরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে বাজারের লোকজনকে ডেকে দেখাই এবং জল নিয়ে এসে নিজেরাই আগুন নিভিয়ে ফেলার চেষ্টা করি। কিন্তু আগুন ছড়িয়ে পড়ছে দেখে সঙ্গে সঙ্গে খবর পাঠানো হয় দমকলে।’’

Advertisement

এ দিন ঘটনাস্থলে দেখা যায়, অপরিসর রাস্তায় পরপর দমকলের ইঞ্জিন। রাস্তা কম থাকায় বেগ পেতে হয় দমকলকে। তবে পাইপের পাশাপাশি ‘ওয়াটার জেট’-এর সাহায্যে জল দিতে দেখা যায় দমকলকর্মীদের। দমকলের ২০টি ইঞ্জিনের পাশাপাশি বালতি, গামলা করে জল এনে আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান মাছ বাজার সংলগ্ন বস্তির লোকজনও। দুপুরের দিকে আলুপট্টি সংলগ্ন মাছ বাজারেও আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখে তাঁরা জল এনে সেই আগুন আটকান।

স্থানীয় বাসিন্দা অজয় মল্লিক, বিকাশ মল্লিকরা বলেন, ‘‘দমকলকে বারবার বলা সত্ত্বেও মাছ বাজারের দিক থেকে আগুন নেভানোর জন্য আসেনি। ও দিকে আগুন লাগলে মাছের বাজারের সঙ্গে আমাদের বস্তিও পুড়ে যেত। তাই নিজেরাই হাত লাগিয়ে এ দিকের আগুন নিভিয়েছি।

এ দিকে আগুন লাগার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দমকল আগুন আয়ত্তে আনার জন্য কাজ করছে। কী করে আগুন লাগল, তা পরে তদন্ত করে দেখা হবে।’’ শুধু মেয়র নন, পৌঁছন ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোপাল সাহা, পাশের এলাকার কাউন্সিলর সন্দীপন সাহা-সহ বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মাছ বাজারে ঢুকতে গেলে সেখানকার লোকজন তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। স্থানীয় লোকজনের বাধায় তাঁকে বাজারের গেটে ঢুকেও ফিরে আসতে হয়। পরে তাঁকেও দমকলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘দমকল ঠিক সময়েই এসেছে বলে এত বড় আগুন এত তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে।’’ তবে আগুন লাগার কারণ নিয়ে তিনিও কোনও কথা বলতে চাননি।

তবে দমকলের এক কর্তা জানান, সঠিক কারণ জানা না গেলেও মনে হচ্ছে মিটার ঘর থেকেই আগুনটা ছড়িয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বাজারের ভিতরেই স্টোভ জ্বেলে রান্না করা হচ্ছে। ভিতরে একটি ছোট ঘরে ২০-২২টির মতো মিটার লাগানো রয়েছে। আগুন তা থেকেও ছড়িয়ে থাকতে পারে। ওই বাজারটিতে যে বেনিয়ম রয়েছে, তা স্বীকার করেছেন কলকাতা পুরসভার বাজার বিভাগের এক কর্তাও। তিনি জানান, পুরসভার খাতায়-কলমে দোকানের সংখ্যা ৫২টি নথিভুক্ত করা থাকলেও, ভিতরে প্রচুর বেআইনি গুদাম করা হয়েছে। এমনকী, একটি দোকান ভেঙে দু’টি করে নেওয়ায় ভিতরের জায়গাও অপরিসর। এতে আগুন লাগলে তা বড় আকার নেওয়া স্বাভাবিক বলেই দাবি ওই কর্তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন