পার্কিং ফি নিয়ে জুলুম রোধে কড়া হচ্ছেন মেয়র

কলকাতা শহরে পুরসভার পার্কিং ব্যবস্থা নিয়ে অনিয়মের কথা কবুল করলেন মেয়র স্বয়ং। পুজোর পরে পার্কিংয়ের জন্য নতুন করে টেন্ডার ডাকা হবে বলেও ঘোষণা করলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:১১
Share:

কলকাতা শহরে পুরসভার পার্কিং ব্যবস্থা নিয়ে অনিয়মের কথা কবুল করলেন মেয়র স্বয়ং। পুজোর পরে পার্কিংয়ের জন্য নতুন করে টেন্ডার ডাকা হবে বলেও ঘোষণা করলেন তিনি। তবে প্রশ্ন উঠল, যে রোগ পুরনো এবং তাঁর জানা, তার দাওয়াই দিতে এত দেরি কেন? সূত্রের খবর, পার্কিংয়ে অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ এ বার নবান্নের কানে পৌঁছেছে। তার পরেই কোমর বেঁধে নেমেছেন মেয়র।

Advertisement

পুরসভার নির্ধারিত ফি-এর থেকে বেশি টাকা নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা পার্কিংয়ে মৌরসিপাট্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ খোদ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। এমনকী, কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁকে মারধরের ভয়ও দেখানো হচ্ছে বলে জানান মেয়র। এ বার সেই চক্র ভাঙতে চান তিনি। মঙ্গলবার পুরসভার মেয়র পারিষদদের বৈঠকে তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন শোভনবাবু। ওই বৈঠকে বর্তমান ঠিকাদারদের সময় বাড়ানো নিয়ে একটি প্রস্তাব আসে। সেখানেই মেয়র জানিয়ে দেন, কোনও ঠিকাদারের সময় বাড়ানো হবে না। উল্টে যাঁরা এই সব কাজ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেয়রের ওই কথার পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পুজোর পরে নতুন করে পার্কিংয়ের টেন্ডার ডাকা হবে।

পার্কিং ফি আদায়ে বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। বহু অভিযোগ জমা পড়েছে পুরসভায়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তবে ওই ঠিকার দায়িত্ব যাঁরা পেয়ে থাকেন, তাঁদের কেউ কেউ শাসক দলের গুণগ্রাহী হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই থমকে যেতে হয়েছে পুর প্রশাসনকে। কখনও আবার পুরকর্মীদের একাংশ মদত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই পার্কিংয়ের অনিয়ম রুখতে ততটা ‘আগ্রহ’ পুর-প্রশাসকদের ছিল না বলেই মনে করছেন একাধিক আমলা।

Advertisement

হঠাৎ করে কী এমন ঘটল যে, পুরসভা এতটা তৎপর হল?

তৃণমূলের একাধিক নেতার কথায়, পার্কিংয়ে জোরজুলুমের কাণ্ডকারখানার খবর পৌঁছে গিয়েছিল নবান্নেও। তাই রাশ টানতে আসরে নেমেছে পুর-প্রশাসন। মেয়র নিজেই এ দিন জানান, পার্কিংয়ের একটা নিয়ম রয়েছে। রয়েছে নির্ধারিত ফি-ও। ঘণ্টায় ১০ টাকা। কিন্তু জনা কয়েক অসাধু লোক পার্কিংয়ের নামে তোলাবাজি চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘গ্র্যান্ড হোটেলের সামনে নেওয়া হচ্ছে ঘণ্টায় ৫০ টাকারও বেশি। পুরভবন লাগোয়া নিউ মার্কেটের সামনে ঘণ্টায় ৩০-৪০ টাকা। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁকে প্রাণের ভয়ও দেখানো হচ্ছে। প্রতিবাদীকে চমকাতে আবার বাইরের লোকও আনা হচ্ছে।’’ কলকাতা শহরে এ সব চলতে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন মেয়র। তাঁর কথায়, পুলিশের কাছে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জানানো হয়েছে। পুলিশকে বলা হয়েছে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে। যে সব সংস্থা বা সমবায় ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে বলে জানান মেয়র।

পুরসভা সূত্রের খবর, বর্তমানে ২৭টি সমবায় এবং ১৮টি সংস্থা শহরের পার্কিংয়ের দায়িত্বে রয়েছে। তাদের হাতে দিনে ৯৬টি এবং রাতে ৫২টি লট দেওয়া আছে। মোট গাড়ি রাখার কথা দিনে ৭৫০০ এবং রাতে ২২০৬টি। যদিও পুরসভার এক আমলার কথায়, ‘‘গাড়ি রাখা হয় তার অনেক বেশি। তাই যাঁরা বেশি টাকা আদায় করে থাকেন, বেশি গাড়ি থাকায় মুনাফাও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যদিও তার বিন্দুমাত্র পুরসভার ভাঁড়ারে আসে না।’’

বছরখানেক আগে বেশি পার্কিং ফি নেওয়া নিয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছিল পুরসভায়। পুরসভার পার্কিং দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানান, অনিয়ম রুখতেই প্রতিটি পার্কিং লটে স্বয়ংক্রিয় মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। কে কতটা সময় গাড়ি রাখছেন, তা নিয়েও দ্বন্দ্ব হত গাড়ির মালিক এবং পার্কিং-কর্মীদের মধ্যে। ওই মেশিনে তাতে কিছুটা সুরাহা হয়েছে ঠিকই, তবে সর্বত্র ওই মেশিন এখনও চালু হয়নি। এর সঙ্গে রয়েছে বেআইনি পার্কিংয়ের রমরমা ব্যবসা। পুরসভা সেখান থেকে কানাকড়িও পায় না। এ বিষয়ে পার্কিং দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা জানি। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়ার মুরোদ নেই পুর-প্রশাসনের।’’

মেয়র এ দিন জানান দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো শহরে যেখানে মোট আয়তনের ১৮-২২ শতাংশ রাস্তা, সেখানে কলকাতার পরিমাণ মাত্র সাড়ে ৬ শতাংশ। তার উপর পার্কিং যদি অগোছালো ভাবে থাকে, তাতে যানজটের সমস্যা বাড়ে। তাই নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে পার্কিং করতে হবে। পুজোর পরে অফিস খুললেই পার্কিং নিয়ে কঠোর হবে পুরসভা। আপাতত এই ক’দিন বর্তমান ঠিকাদারেরাই কাজ চালাবেন। তবে তাঁরা যাতে কোনও জোরজুলুম না করতে পারেন তা দেখতে বলা হয়েছে পুলিশকে।

পার্কিং ফি নিয়ে অভিযোগ জানানোর নম্বর:

৮৩৩৫৯৮৮৮৮৮, ৮৪৭৮৮৮৮৮৮৮

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন