ফেরা: সুমন দাস। নিজস্ব চিত্র
বছর দু’য়েক আগে এক দুপুরে গার্ডেনরিচ থানায় এসেছিল ফোনটা।
বছর পঁচিশের এক যুবক মারমুখী হয়ে উঠেছেন। ইট-পাথর-লাঠি— যা পাচ্ছেন, তাই দিয়ে কখনও চলন্ত গাড়ি, কখনও পথচারীদের আক্রমণ করছেন। তাঁকে কোনও ভাবেই নিরস্ত করা যাচ্ছে না। ২০১৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, তারাতলা-গার্ডেনরিচ ক্রসিংয়ে রামনগর মোড়ের ঘটনা।
ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও, বিপাকে পড়তে হয় তাদের। পুলিশ দেখে আরও মারমুখী হয়ে পড়েন ওই যুবক। তাঁকে কোনও রকমে থানায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু, গোল বাধে সেখানেও। দেখা যায়, নিজের নাম পর্যন্ত বলতে পারছেন না ওই যুবক। তখন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবক স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। পরে ওই যুবককে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পাভলভ হাসপাতালের চিকিৎসা কাজ দেয়। বছর দেড়েকের চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সেরে ওঠেন ওই যুবক। নিজের নাম তো বটেই, চিকিৎসকদের তিনি গ্রাম, থানা সমস্ত কিছু বলে দেন। তাঁর দাদার মোবাইল নম্বর পর্যন্ত। জানা যায়, সুমন দাস নামে ৩০ বছরের ওই যুবক দক্ষিণ ত্রিপুরার বিলোনিয়া থানার অভয়নগরের বাসিন্দা। পুলিশ যোগাযোগ করে সুমনের পরিবারের সঙ্গে।
কিন্তু সুমনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এমনই যে, তাঁকে নিতে আসার মতো সঙ্গতি ছিল না বাড়ির লোকেদের। শনিবার সুমনকে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় তাঁর দিদির বাড়িতে পৌঁছে দেয় পুলিশ। যদিও আদালতের নির্দেশে তাঁকে ত্রিপুরার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিমানের টিকিট কেটে ফেলেছিল তারা। তাঁকে ফিরে পেয়ে গার্ডিনরিচ থানার পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সুমনের পরিবার।
সুমনের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন সুমন। এর আগেও ত্রিপুরার বাড়ি থেকে তিনি অসমে পালিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরেছিলেন এক পরিচিতের মাধ্যমে। তাঁর দাদা রিপন দাস জানান, তাঁরা কখনও ভাইয়ের চিকিৎসা করাতে পারেননি। রিপন বলেন, ‘‘আমি দিনমজুরের কাজ করি। পুরো সংসারের দায়িত্ব আমার কাঁধে। কলকাতা যাওয়ার টাকা ছিল না আমার। পুলিশ যে ভাইয়ের চিকিৎসা করিয়েছে, সে জন্য ওঁদের ধন্যবাদ।’’
কী ভাবে কলকাতায় পৌঁছলেন সুমন? সুমনের দিদি, গড়বেতার কেয়াবনি তুলসিচটির বাসিন্দা শম্পা দাস বলেন, ‘‘বছর দু’য়েক আগে বাবার সঙ্গে ভাই আমার বাড়িতে এসেছিল। কেমন করে ও কলকাতায় গিয়েছিল, আমরা জানি না।’’