অবশেষে ধৃত সেই মার্সিডিজ চালক

মাত্র দু’ঘণ্টার ব্যবধান। আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করা হয়েছিল সকাল সাড়ে ১০টায়। শুনানির দিন ধার্য হয়েছিল ২৮ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ওই পর্যন্ত যাওয়ার আর দরকারই হল না। আগাম জামিনের আবেদন জানানোর দু’ঘণ্টার মধ্যে, বুধবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ গ্রেফতার করা হল বরুণ মহেশ্বরীকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:১৪
Share:

ধৃত বরুণ মহেশ্বরী।—নিজস্ব চিত্র।

মাত্র দু’ঘণ্টার ব্যবধান। আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করা হয়েছিল সকাল সাড়ে ১০টায়। শুনানির দিন ধার্য হয়েছিল ২৮ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ওই পর্যন্ত যাওয়ার আর দরকারই হল না। আগাম জামিনের আবেদন জানানোর দু’ঘণ্টার মধ্যে, বুধবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ গ্রেফতার করা হল বরুণ মহেশ্বরীকে। হাজরায় মার্সিডিজের ধাক্কায় এক জন স্কুটার আরোহীর মৃত্যু ও দু’জনের আহত হওয়ার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত।

Advertisement

শনিবার গভীর রাতে ওই দুর্ঘটনার পরে রবিবার সকালে পণ্ডিতিয়া টেরাসের একটি আবাসনে ঢুকে ৭৪টি গাড়ি ভাঙচুর করে ক্ষিপ্ত জনতা। তাদের মনে হয়েছিল, গাড়িটি ওই আবাসনের। দুর্ঘটনার পর থেকে বরুণ ফেরার ছিলেন। তবে গরচা রোডের বাসিন্দা, বছর পঁচিশের ওই যুবককে গ্রেফতার করার পরে এ দিন পুলিশের কাছে পরিষ্কার হয়েছে যে, ঘাতক গাড়ির সঙ্গে ওই আবাসনের সম্পর্ক নেই। তবে ঘাতক গাড়িতে ওই আবাসনের ঠিকানা সংবলিত একটি কাগজ পাওয়া যায়। সেটি কী ভাবে এল, পুলিশ খতিয়ে দেখছে। গাড়িটি একটি বেসরকারি সংস্থার নামে কেনা, যে সংস্থার ডিরেক্টর বরুণ ও তাঁর বাবা সুদর্শন মহেশ্বরী। তদন্তকারীরা জেনেছেন, গাড়িটি সে দিন বরুণই চালাচ্ছিলেন। এ দিন আগাম জামিনের আবেদন করার সময়ে আলিপুর আদালতে খোদ বরুণ হলফনামা দিয়ে একই কথা জানিয়েছেন।

লালবাজার সূত্রে বলা হয়েছে, এ দিন বরুণকে তাঁর পাড়া গরচা রোড থেকেই গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

কিন্তু কেন দু’দিন পরে আগাম জামিনের আবেদন করলেন বরুণ?

গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার তাঁর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে লালবাজারে ডেকে এনে চাপ দেয় পুলিশ। এমনও বলা হয়, বরুণকে না পেলে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে। বরুণ দূর সম্পর্কের এক মামার মাধ্যমে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আগাম জামিনের আর্জি জানান। কিন্তু তার ফয়সালা এ দিন না হওয়ায় এক আত্মীয়কে ডাকতে বরুণ গরচা রোডে হাজির হন। লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা তখনই তাঁকে পাকড়াও করেন। আজ, বৃহস্পতিবার বরুণকে আলিপুর আদালতে হাজির করানোর কথা। ঘাতক গাড়িটি ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হবে।

বরুণের আইনজীবী সেলিম রহমান বলেন, ‘‘আদালত আগাম জামিনের জন্য ২৮ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছিল। কিন্তু বেলা সাড়ে ১২টায় মক্কেল গ্রেফতার হওয়ায় সেই শুনানির কোনও প্রশ্ন নেই।’’

আইনজীবী সেলিম রহমানের বক্তব্য, আগাম জামিনের আবেদনে বরুণ মহেশ্বরী জানিয়েছেন, শনিবার গভীর রাতে গাড়ি তিনিই চালাচ্ছিলেন এবং গাড়িতে তিনি একাই ছিলেন। যদিও এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘‘এটা অভিযুক্তের দাবি। বরুণ মহেশ্বরীর কথার যে বিশ্বাসযোগ্যতা আছে, সেটা এখনই বলা যাবে না।’’ গোয়েন্দাদের একাংশের অভিমত, গাড়িতে বরুণের এক বান্ধবী-সহ একাধিক আরোহী ছিলেন। যদিও তাঁদের পরিচয় বুধবার রাত পর্যন্ত জানতে পারেননি গোয়েন্দারা।

লালবাজারের খবর, সরকারি খাতায় ঘাতক গাড়িটি ‘লিটল স্টার টাই আপ প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থার জন্য নথিভুক্ত রয়েছে। পুলিশের দাবি, ওই সংস্থার ডিরেক্টরদের অন্যতম বরুণই গাড়িটি ব্যবহার করতেন। সেই জন্যই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বরুণের আইনজীবীর দাবি, হলফনামায় বরুণ জানান, তিনটি লোক স্কুটি নিয়ে টালমাটাল অবস্থায় আচমকা গাড়ির সামনে চলে আসে। কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। তিনি ব্রেক কষে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করলেও ধাক্কা এড়াতে পারেননি। বরুণের এই দাবিও মানতে নারাজ তদন্তকারীরা। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মার্সিডিজের ধাক্কায় আহত মিথিলেশ রায়ের বয়ান অন্য রকম তথ্য দিচ্ছে। ওই দুর্ঘটনায় রামভরত যাদব নামে আর এক জখম ব্যক্তি একটি নার্সিংহোমে ভর্তি।

পুলিশ সূত্রের দাবি, রবিবার বিকেল পর্যন্ত বরুণের মোবাইল ফোন খোলা ছিল। টাওয়ারের অবস্থান অনুযায়ী, তিনি তখন হাওড়ার দেউলটিতে ছিলেন। এত কিছু জানার পরেও বরুণকে পাকড়াও করতে তিন দিন লাগল কেন, তার কোনও রকম সদুত্তর লালবাজারের কর্তাদের কাছে পাওয়া যায়নি। এ দিন পুলিশের কাছে বরুণের দাবি, তিনি বিভিন্ন বন্ধুর বাড়িতে ঘুরে ফিরে থাকছিলেন। বন্ধুদের ফোন থেকেই আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন।

চার ভাইবোনের মধ্যে বরুণ মহেশ্বরী সব চেয়ে ছোট। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শহরের একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পড়তেন বরুণ। তার পরে ম্যাঞ্চেস্টারে চলে গিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে কলকাতায় ফিরে পারিবারিক ব্যবসা দেখভাল করতেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন