শহরের যান-প্রাণ মেট্রো রেল এখন ভোগান্তির অন্য নাম

নেই পর্যাপ্ত রেক, তাই কমে না ভিড়ও

নির্ধারিত সময়ে প্রায় কোনও ট্রেনেরই দেখা নেই। তবে প্ল্যাটফর্মে ঝোলানো টিভিতে যাত্রীদের দেখানো হচ্ছে, মেট্রোয় ওঠার সময়ে তাড়াহুড়ো না করার বার্তা।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০৪:১০
Share:

বসার জায়গা পেতে প্ল্যাটফর্মের হলুদ রেখা পেরিয়ে ট্রেনের অপেক্ষায়। বুধবার, দমদম স্টেশনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে উপচে পড়ছে ভিড়। প্ল্যাটফর্মের ডিসপ্লে বোর্ডে লেখা ট্রেনের সময় বার বার বদলে যাচ্ছে।

Advertisement

নির্ধারিত সময়ে প্রায় কোনও ট্রেনেরই দেখা নেই। তবে প্ল্যাটফর্মে ঝোলানো টিভিতে যাত্রীদের দেখানো হচ্ছে, মেট্রোয় ওঠার সময়ে তাড়াহুড়ো না করার বার্তা। যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রেন দেরি করলে এমনিতেই প্ল্যাটফর্মে ভিড় বেড়ে যায়। একটি ভিড় ট্রেন ছাড়লেও পরের ট্রেনটি যে খালি থাকবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ফলে ঠাসাঠাসি ভিড়কে সঙ্গী করেই চড়তে হয় মেট্রোয়।

নিত্যযাত্রীরা জানান, অফিসের ব্যস্ত সময় ছাড়াও দুপুর এবং রাতেও ব্যাপক ভিড় লেগে থাকে মেট্রোয়। অফিসের সময়ের বাইরে অনেকেরই সেই ভিড় ঠেলে যাতায়াতের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। কেন এমন পরিস্থিতি?

Advertisement

মেট্রো সূত্রের খবর, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাত্রী-সংখ্যার চাপ সামাল দিতে যত সংখ্যক ট্রেন চালানোর কথা, তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ট্রেনের সংখ্যা কম থাকায় প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রীদের চাপ বেশি পড়ছে। তাতেই পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে বলে অভিযোগ। সাধারণ ভাবে কবি সুভাষ থেকে নোয়াপাড়া পর্যন্ত মেট্রোর এক দিকের যাত্রা সম্পূর্ণ করতে সময় লাগে ৫১ মিনিটের মতো। কিন্তু ভিড়ের চাপে শ্যামবাজার, চাঁদনি চক, এসপ্লানেড, পার্ক স্ট্রিট, রবীন্দ্র সদন, কালীঘাট, রবীন্দ্র সরোবর এবং টালিগঞ্জের মতো একাধিক স্টেশনে মেট্রোর কামরায় যাত্রী ওঠা-নামার কাজ সম্পূর্ণ হতে বেশি সময় লাগছে। দিনের ব্যস্ত সময়ে প্রতিটি যাত্রায় ওই বাড়তি কয়েক মিনিট সময় অতিরিক্ত চলে যাওয়াতেই ধাক্কা খাচ্ছে মেট্রোর সময়ানুবর্তিতা। ভিড়ের কারণে সকাল ৬টা ৫০ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে নির্ধারিত সংখ্যক মেট্রো সব সময় চালিয়ে উঠতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। কম সংখ্যক ট্রেনের উপরে বেশি যাত্রীর চাপ পড়াতেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে দেখা যাচ্ছে।

মেট্রো সূত্রের খবর, পুরনো রেক এবং অন্যান্য পরিকাঠামোর মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে চলতি বছরের শুরুতে মেট্রোয় ট্রেনের সংখ্যা ৩০০ থেকে কমিয়ে ২৮৪ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার পরে নানা কারণে সেই সময়ানুবর্তিতা রক্ষা করা যায়নি বলে অভিযোগ। গত কয়েক মাসে ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির ৩টি নতুন রেক চালু হলেও সেগুলিকে প্রথম থেকেই পূর্ণ শক্তি অনুযায়ী ব্যবহার করা যাচ্ছে না। চিনের ডালিয়ান থেকে একটি মেট্রোর রেক এলেও সেটিকে এখনও যাত্রী পরিবহণের কাজে লাগানো যায়নি।

মেট্রোয় একটি নন-এসি রেকের যাত্রী পরিবহণ ক্ষমতা ২৪০০ জন। একটি এসি রেকের ক্ষেত্রে ওই সংখ্যা ৩১০০ জন। বর্তমান মেট্রোয় ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির ৩টি এসি রেক ধরে মোট ১৬টি বাতানুকূল এবং ১৪টি নন-এসি রেক রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে সব রকম রক্ষণাবেক্ষণের চাহিদা মিটিয়ে যাত্রী পরিবহণের জন্য প্রতিদিন পাওয়া যায় বড়জোর ২০-২২টি রেক।

ফলে কম সময়ে দ্রুত বাড়তি যাত্রী পরিবহণের চাপ নিতে না পারায় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। প্রযুক্তিগত কারণেই পাঁচ মিনিটের কম সময়ে মেট্রো চালানো যাচ্ছে না। গত সোম এবং মঙ্গলবার মেট্রোয় যাত্রী-সংখ্যা ছিল প্রায় সাত লক্ষ। কিন্তু ওই সংখ্যক যাত্রী নিয়ে যেতে দিনে ২৮৪টি ট্রেন চালিয়ে উঠতে পারেননি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি যাত্রা শেষ করতে ট্রেনের বেশি সময় লাগা ছাড়াও নানা পরিকাঠামোগত ত্রুটিতে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। পুজোর আগে যাত্রী-সংখ্যার চাপ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা মেট্রোকর্তাদের।

ফলে ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে না পারলে পরিস্থিতি যে কিছুতেই স্বাভাবিক করা যাবে না, তা বুঝতে পারছেন মেট্রোকর্তারা। এ জন্য দিনে ৩০০টি ট্রেন চালানোর কথাও বলছেন কেউ কেউ। কিন্তু রেক এবং মেট্রোর সিগন্যালিং ব্যবস্থা ওই চাপ কতটা নিতে পারবে তা নিয়ে সংশয় আছে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে এক মেট্রোকর্তা বলেন, ‘‘নতুন রেকগুলি চালু হলে সমস্যা কিছুটা কমতে পারত। কিন্তু তা আর হল কই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন