মেট্রোর বিপত্তির পিছনে দায়সারা দেখভাল

সেই ঘটনার তদন্তে নেমে মেট্রোর কর্তারা জানতে পেরেছেন, যান্ত্রিক ত্রুটি বা চালকের গাফিলতি নয়, দুর্ঘটনার পিছনে দায়ী রক্ষণাবেক্ষণের বেহাল দশা।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৪
Share:

নোয়াপাড়া থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত গোটা মেট্রো-পথে দু’টি স্টেশন, ময়দান ও সেন্ট্রালে রয়েছে ‘ওয়াই ক্রসিং’। সেখান দিয়ে মেট্রোকে ঘুরিয়ে আনা হয়। মেট্রো সূত্রের খবর, ওয়াই ক্রসিং তৈরি হয়েছে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য। ফলে সেগুলিকে মূল পরিকাঠামোর বাইরে রাখা হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় ভাবে এই ক্রসিং ব্যবহার করা যায় না। প্রয়োজনে স্টেশন কর্তৃপক্ষের কাছে থাকা একটি চাবি দিয়ে সেই পয়েন্ট ঘুরিয়ে সিগন্যাল দেওয়া হয় এবং ট্রেনটিকে ওই লাইনে ঘোরানো হয়।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে ময়দান স্টেশনের সেই ওয়াই ক্রসিং দিয়ে ফাঁকা মেট্রোকে ঘুরিয়ে আনতে গিয়েই ঘটেছিল বিপত্তি। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে মেট্রোর কর্তারা জানতে পেরেছেন, যান্ত্রিক ত্রুটি বা চালকের গাফিলতি নয়, দুর্ঘটনার পিছনে দায়ী রক্ষণাবেক্ষণের বেহাল দশা।

কলকাতা মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণের বেহাল দশা অবশ্য নতুন নয়। প্রায়ই যাত্রীরা এ নিয়ে অভিযোগ করেন। মেট্রোকর্তারা অবশ্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কথা বললেও সেই দাবি কতটা সত্যি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ময়দানের ওই ঘটনা।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে ময়দান স্টেশনে একটি খালি রেককে ঘুরিয়ে দমদমে পাঠানোর সময়ে একটি কামরা লাইনচ্যুত হয়। তার পরেই
পরিষেবা কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ওই রাতে আর দমদম থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত টানা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। চূড়ান্ত দুর্ভোগ
পোহান যাত্রীরা।

দু্র্ঘটনার পরেই চার সদস্যের তদন্ত-কমিটি গড়েছে মেট্রো। তদন্তকারীরা সে দিন ময়দান স্টেশনে থাকা বিভিন্ন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, সিগন্যাল বদলানোর দায়িত্বে থাকা এক কর্মী পয়েন্ট ঘুরিয়ে সিগন্যাল দিয়েছিলেন। সেই মতো চালক ট্রেনটিকে ওই লাইনে নিয়ে যেতেই বিপত্তি ঘ়টে। তা থেকে তদন্তকারীদের সন্দেহ, মূল পরিকাঠামোর বাইরে থাকা ওই লাইন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। ফলে পয়েন্ট লাগিয়ে সিগন্যাল দেওয়া হলেও কোথাও ফাঁক রয়ে গিয়েছিল।

ঘটনার পরে অনেকে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছিলেন স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থার গাফিলতি নিয়ে। কিন্তু মেট্রোকর্তাদের একাংশের দাবি, দু’বছর আগেই কয়েক কোটি টাকা খরচ করে কবি সুভাষ থেকে নোয়াপাড়া পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার পথের যাবতীয় সিগন্যাল ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হয়েছে। মেট্রো রেলের কর্মীদের একাংশ এ-ও বলছেন, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থায় পয়েন্ট (ট্রেনকে এক লাইন থেকে অন্য লাইনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা) বদলানোর পরে সিগন্যাল লাল থেকে সবুজ বা হলুদ হয়। পয়েন্ট ঠিক মতো বদলানো না হলে সিগন্যাল পরিবর্তনই হবে না। এমনকী এই প্রযুক্তিতে সামনে থাকা ট্রেন নির্দিষ্ট দূরত্বে না যাওয়া পর্যন্ত পয়েন্ট পরিবর্তনও সম্ভব নয়। তা ছাড়া, ময়দান স্টেশনের ওয়াই ক্রসিংয়ে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় না। তাই মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার পিছনে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা দায়ী নয়, এমনই দাবি করছেন মেট্রোকর্তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement